কেমন আছেন?
উফ! কি যে গরম পড়ছে, এই অবস্থায় ভালো থাকা যায় বলুন। জীবনটা একেবারে নাভিশ্বাসে উঠেছে। তাই আজ কোনো কাজ হাতে রাখিনি। আড়াই মাস ধরে একটানা ক্যামেরার সামনে দাঁড়াতে দাঁড়াতে বড্ড ক্লান্ত হয়ে পড়েছি। ভাবলাম এখন একটু বিশ্রাম দরকার। তাই শরীর আর মনকে প্রশান্তি দিচ্ছি। এইতো...
শুনলাম প্রথমবারের মতো অ্যান্টি-ক্যারেক্টর প্লে করছেন?
হ্যাঁ, শ্রদ্ধেয় নির্মাতা চাষী নজরুল ইসলামের 'অন্তরঙ্গ' চলচ্চিত্রে অ্যান্টি ক্যারেক্টর প্লে করছি। এখানে আমি নায়িকার মা। অ্যান্টি ক্যারেক্টর হলেও এতে গ্লামার আছে। আমার কো-আর্টিস্ট অমিত হাসান। ব্যাসিক ক্যারেক্টরই বলতে পারেন। গল্পে আমার ও অমিতের গুরুত্বই প্রধান। তবে মজার ব্যাপার হলো এ ধরনের চরিত্রে আমি অভ্যস্ত নই। রীতিমতো শরীরে বোমা বেঁধে আমাকে উড়িয়ে দেওয়া হয়। কাজ করতে গিয়ে ভীষণ নার্ভাস ফিল করছিলাম। কিন্তু চাষী ভাইয়ের কাজ বলে কথা। তাই না করতে পারিনি। চমৎকার গল্প। দীর্ঘদিন পর দর্শক মনের মতো একটি চলচ্চিত্র উপহার পেতে যাচ্ছে।
'অন্তরঙ্গ' ছাড়া অন্য কি কাজ করছেন?
এছাড়া নার্গিস আক্তারের 'যৌবতী কন্যার মন' চলচ্চিত্রে কাজ করছি। এই গল্পের রচয়িতা প্রখ্যাত সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব প্রয়াত সেলিম আলদিন। গল্পটি নিয়ে অসংখ্যবার নাটক মঞ্চস্থ হয়েছে। কিন্তু এতে যে চরিত্রে কাজ করছি তা মঞ্চে গুরুত্ব সহকারে তুলে ধরা হয়নি। একজন যাত্রাশিল্পীর জীবনের সুখ-দুঃখ গাঁথা কাহিনী। অসাধারণ গল্প ও চরিত্র বলতে পারেন। চলচ্চিত্রে চরিত্রটি আবেগঘন ভাবে তুলে ধরা হচ্ছে। এতে কাজ করে খুব ভালো লাগছে। দর্শকও তৃপ্তি পাবে বলে আমার বিশ্বাস।
যাত্রাশিল্পে দীর্ঘদিন অনুপস্থিত রয়েছেন, কেন?
যাত্রাকে প্রমোট করতে আমি ও আমার পরিবার অনেক কষ্ট ও ত্যাগ স্বীকার করেছি। কিন্তু সে অনুযায়ী ফিডব্যাক পাইনি। এ বিষয়টি আমার মনকে ভীষণভাবে আহত করেছে। তাই যাত্রার সঙ্গে সত্যি একটি দূরত্ব তৈরি হয়েছে।
এই দুঃখজনক অবস্থার কারণ কী?
আসলে কোথাও এখন চেক অ্যান্ড ব্যালেন্স বলে কিছু নেই। সব সেক্টরেই অবক্ষয় চলছে। নতুনরা দায়িত্ব নিয়ে কাজ করছে না। অর্থকড়িই তাদের কাছে প্রধান ফ্যাক্টর। এখনকার নির্মাতারা নতুন শিল্পীদের দিয়ে দায়সাড়া গোছের কাজ করিয়ে তাদের মিস ইউজ করছে। পুরানদের প্রয়োজন সত্ত্বেও নিচ্ছে না। এতে প্রকারন্তরে শিল্পকেই ধ্বংস করা হচ্ছে। এখন নতুন কোনো শিল্পীকে যদি বলা হয় রবীন্দ্র গল্পের বিখ্যাত অমুক চরিত্রে কাজ করতে হবে। তখন সে জানতে চাইবে তাকে অত টাকা দেওয়া হবে কিনা। আমরা কিন্তু কখনো তা করিনি। আমাদের কাছে শিল্পের প্রতি মমত্ব এবং শ্রদ্ধাবোধটিই এখনো মুখ্য। তাই এখন শিল্পমান হ্রাস পাওয়ায় সব জায়গাতেই ভয়াবহ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া সম্ভব?
কীভাবে সম্ভব তাতো বুঝতে পারছি না। নীতিমালা করে বা সিনিয়ররা বলে কয়ে কিছু করতে পারবে বলে মনে হয় না। কারণ সবকিছুই ইনব্যালেন্সড অবস্থায় রয়েছে। অবক্ষয়ের ক্ষত গভীর হয়েছে। এর জন্য বঙ্গবন্ধু, নজরুল, রবীন্দ্রনাথ, মাইকেল মধুসূদন, অমলেন্দু বিশ্বাস কিংবা কার্ল মার্কসের মতো ব্যক্তিত্বের পুর্নজন্ম প্রয়োজন। যা কখনো সম্ভব হবে বলে মনে হয় না।
তা হলে মিডিয়া থেকে নিজেকে গুটিয়ে নেবেন?
কখনই না, কারণ আমরা সিনিয়ররা যদি হাল ছেড়ে দেই তাহলে তো পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটবে। আমি জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত প্রচুর ভালো কাজ করে যেতে চাই এবং মিডিয়াকে সসম্মানে বাঁচিয়ে রাখতে চাই।
- আলাউদ্দীন মাজিদ