অবশেষে চূড়ান্ত পরিণতির দিকে ধাবিত হচ্ছে রুমি-অনন্যার দাম্পত্য কলহ। ঘর ভাঙার প্রস্তাব রাখলেন রুমি। চাইলেন ডিভোর্স। আর শর্ত দিলেন অনন্যা। সব মিলিয়ে নতুন দিকে মোড় নিলো তাদের এ দাম্পত্য কলহ। গতকাল দুই পক্ষের আইনজীবীর মধ্যস্থতায় আপোস-মীমাংসায় বসেন তারা। রুমির আইনজীবীর কক্ষে উপস্থিত হন অনন্যা ও তার মা। কিছুক্ষণ পরেই ঘনিষ্ঠ বন্ধু মামুনকে সঙ্গে নিয়ে আসেন রুমি। শুরু হয় মামলা নিয়ে দুই পক্ষের দর কষাকষি। এক পর্যায়ে রুমি বলেই বসেন, আর ঘর করবেন না তিনি। বিচ্ছেদ ঘটাতে চান অনন্যার সঙ্গে। ভাঙতে চান গাঁটছড়া বন্ধনের। কিন্তু আপত্তি জানান অনন্যা। তিনি এখনও একই ছাদের নিচে থাকার ইচ্ছা পোষণ করেন। থাকতে চান স্ত্রীর মর্যাদা নিয়ে। তবে নিজ সিদ্ধান্তে অটল থাকে রুমি। এ সম্পর্ককে আর এগিয়ে নিতে নারাজ তিনি।
শেষ পর্যন্ত মধ্যস্থতায় বসেন দুই পক্ষের আইনজীবী। রুমি জানান, তিনি ১০ লাখ টাকা সন্তান অারিয়ানের নামে ডিপোজিট করবেন অার কাবিন নামার এক লাখ টাকা অনন্যাকে দেবেন। এর বদলে দিতে হবে ডিভোর্স। এ কথা শুনে অনেকটাই হতাশ হয়ে পড়েন অনন্যা। বলেন, এ প্রস্তাব তিনি মানেন না। তিনি এখনো তার সঙ্গে ঘর করতে চান।
উল্লেখ্য, এর আগে গত বছরের ১২ অক্টোবর রুমির বিরুদ্ধে মোহাম্মদপুর থানায় মামলা করেন প্রথম স্ত্রী অনন্যা। অভিযোগ ছিল নির্যাতন ও যৌতুকের জন্য মানসিক চাপ প্রয়োগ। সে সময় একটি আপোসনামার ভিত্তিতে জামিন দেওয়া হয় রুমিকে। এতে লেখা ছিল: আরিয়ানের ভরণপোষণের জন্য রুমিকে ২০ লাখ টাকা দিতে হবে, যা ব্যাংকে ডিপোজিট রাখা হবে। এ ছাড়া অনন্যার সঙ্গে রুমি আর খারাপ ব্যবহার করবে না। স্ত্রীর প্রকৃত মর্যাদা এবং অধিকার দেবে। এসব শর্তাবলি লেখার সময় সিডি চয়েজের এমদাদ, প্রিন্স, কাজী শুভ, ইলিয়াস, খেয়া, আরমান উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া রুমির ব্যান্ড দলের মামুন ও লিটনও ছিলেন। এরাও এ শর্ত সম্পর্কে অবগত রয়েছেন।
জানা গেছে, গতকাল দর কষাকষিতে কোনও ছাড় দেননি রুমি। তিনি জানান, তার কাছে মাত্র ২০ লাখ টাকা রয়েছে। সেখান থেকে ১০ লাখ টাকা দেবেন প্রথম স্ত্রী অনন্যার সন্তান আরিয়ানকে। বাকি ১০ লাখ টাকা রেখে দেবেন দ্বিতীয় স্ত্রী কামরুন্নেসার গর্ভে থাকা সন্তানের জন্য।
রুমির এ প্রস্তাব মানবেন কি না জানতে চাইলে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে অনন্যা বলেন, এটা কখনোই মানবো না। আমি তো তার সঙ্গে এখনো ঘর করতে চাই। কিন্তু রুমি তো তার আসল চেহারা আজ দেখিয়ে দিলো। প্রস্তার দিলো ডিভোর্সের। অথচ আমি যে শর্তগুলো দিয়েছিলাম তাতো আমার সন্তানের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করেই। আর সেখানেও সে আমাকে ঠকাতে চাচ্ছে। আমাকে দিতে চাচ্ছে মাত্র এক লাখ টাকা। তাও কি না আবার কাবিন নামা উসুলের।
মামলার পরবর্তী পদক্ষেপ সম্পর্কে অনন্যা বলেন, যেহেতু আমার কোনও শর্তই সে মানছে না, তাই মামলা চালিয়ে যাবো। যা হবার আদালতেই হবে। চেয়েছিলাম সুষ্ঠুভাবে এ ঝামেলা মেটাতে। মনে হয় তা আর হয়ে উঠবে না। এমনকি তাদের আইনজীবীও আজ রুমিকে বুঝিয়েছেন। বলেছেন, প্রয়োজনে রুমি যেন আরও ২/১ দিন চিন্তা-ভাবনা করে। তারপর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া ঠিক হবে।
এদিকে, এ বিষয়ে জানার জন্য যোগাযোগ করতে চাইলে রুমির মুঠোফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়। এর আগে যে কয়েকবার রুমির সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে বরাবরই তিনি একই উত্তর দিতেন। বলতেন, " যা বলার আমার আইনজীবী বলবে, যা হবার আদালতেই হবে।"
গত বছরের ১১ নভেম্বর থেকে শুরু হয় এ মামলার শুনানি। বেশ কয়েকটি তারিখে শুনানি হয়েছে। হয়েছে চার্জশিট দাখিল। এরই মধ্যে একবার জামিনও নামঞ্জুর হয় রুমির। কয়েক দিনের জন্য কারাগারেও যেতে হয় তাকে। এরই ধারাবাহিকতায় ১৭ এপ্রিল ছিল এ মামলার শুনানি। সেইদিন রুমির পক্ষ থেকে আদলতে জানানো হয়, ৭ দিনের মধ্যে তারা আপোস করবেন। সব মিলিয়ে নানা চড়াই-উৎরাইয়ের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন এ দম্পতি।
অন্যদিকে, অনন্যাও অনেক ছাড় দিয়েছেন রুমিকে। একের পর এক সময় নিয়ে আদালতের কালক্ষেপণ করেছেন রুমি। কিন্তু কখনই কথা রাখেননি এই সংগীতশিল্পী। এমনকি মাঝে একবার অনন্যার মায়ের বাসায় পুলিশ পাঠান তিনি। পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়, আপসনামা ও কাবিননামা উদ্ধারের জন্য তাদের আসা। রুমি-অনন্যার এ কলহের জাঁতাকলে পিষ্ট হচ্ছে তাদের একমাত্র সন্তান আরিয়ান। দুই পক্ষের রেষারেষিতে অনেকটাই ম্লানহীন ও নির্জীব হয়ে পড়েছে সে। শুধু আদালতে শুনানির দিন বাবা ও দাদির সান্নিধ্য পায় ছোট্ট আরিয়ান। কারণ অন্যান্য সময় সন্তানকে এড়িয়ে যেতেন রুমি। এমনকি মাঝে একবার জ্বরের সময় বাবাকে দেখতে চায় আরিয়ান। কিন্তু আসেননি রুমি। তবে মধ্যরাতে একবার এসেছিলেন রুমির মা অর্থাৎ আরিয়ানের দাদি। এ ছাড়া মামলার প্রথম থেকেই আদালতে দেখা যেত রুমির ভাই, দু-এক জন বন্ধু ও সংগীতশিল্পী ইলিয়াসকে। তবে প্রথম দিকে দেখা গেলেও গত দু-তিন তারিখে রুমির মাকে দেখা যায়নি আদালতে। এমনকি ১৭ এপ্রিল শুধু বন্ধুকে নিয়ে আদালতে উপস্থিত হন রুমি।
এ দম্পতির শুভাকাঙ্ক্ষীরা প্রত্যাশা রাখছেন, এবার হয়তো বরফ গলতে শুরু করেছে। কারণ দুই পক্ষকে কিছুটা নরম হতে দেখা যাচ্ছে। অনেকেই নাকি তাদের ফোনে বুঝিয়েছেন। অন্যদিকে রুমি-অনন্যার এ দাম্পত্যকলহের ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন তাদের শুভানুধ্যায়ী ও ভক্তরা। তাদের প্রত্যাশা— এ দম্পতি যেন শীঘ্রই ঝামেলা মিটিয়ে ফেলেন। কারণ তারাও চান না রুমির মতো একজন উদীয়মান শিল্পীকে নিয়ে তর্কবিতর্ক হোক। এখন দেখার পালা রুমি অনন্যার কাছে ফেরেন কি না।