ভারতীয় সিনেমার শক্তিমান অভিনেতা ওম পুরী। কিন্তু বেশ কিছুদিন ধরেই অসুস্থ ছিলেন। বয়সের সঙ্গে তীব্র মানসিক চাপ তার সুস্বাস্থ্যের উপর প্রভাব ফেলেছিল।
প্রথম স্ত্রী সীমা কপূরকে ছেড়ে ১৯৯৩ সালে ওম পুরী বিয়ে করেছিলেন নন্দিতাকে। ওম পুরীর বয়স ছিল তখন ৪৩ বছর। নন্দিতা তার হাঁটুর বয়সী ছিলেন। নন্দিতার সঙ্গে ঈশান বলে তার ছেলেও আছে।
কিন্তু, ২০১৩ সালে স্বামী ওম পুরীর বিরুদ্ধে ‘ডোমেস্টিক ভায়োলেন্স’-এর অভিযোগ দায়ের করেন নন্দিতা। এমনকী, অভিযোগপত্রে নন্দিতা দাবি করেন, ওম পুরী রোজ তাকে শারীরিকভাবে নিগ্রহ করা ছাড়াও গলা টিপে হত্যারও চেষ্টা করেছিলেন। এমনকী, হাতের আঙুল পর্যন্ত বেঁকিয়ে দিয়েছিলেন।
পরিস্থিতি এতটাই জটিল ছিল যে, ওম পুরীকে আদালতে গিয়ে এই অভিযোগের প্রেক্ষিতে অন্তর্বর্তী জামিন পর্যন্ত নিতে হয়েছিল। এরপর দীর্ঘদিন নিজের খুব ঘনিষ্ঠজন ছাড়া কারোর সঙ্গে দেখাও করতেন না ওম পুরী। ছবির কাজ প্রায় থামিয়ে দেওয়ার উপক্রম করেছিলেন। কিন্তু, প্রথম স্ত্রী সীমা কপূরের সাহায্যে ফের মূলস্রোতে ফেরার চেষ্টা করেন ওম পুরী।
এই সময়ে ফের সরব হয়েছিলেন নন্দিতা। অভিযোগ তোলেন প্রথম স্ত্রী সীমার পরামর্শেই ওম তার উপরে অত্যাচার করতেন। সীমা ষড়যন্ত্র করে নন্দিতাকে ওমের জীবন থেকে সরিয়ে দিয়েছেন। নন্দিতার এই অভিযোগে পাল্টা মুখ খুলেছিলেন সীমা। জানিয়েছিলেন, ওমের সঙ্গে বিবাহ বিচ্ছেদ হলেও দুইজনের মধ্যে অপার বন্ধুত্বটা রয়ে গিয়েছিল। তিনি ভেঙে পড়া ওমকে বন্ধু হিসাবে সাহায্য করেছিলেন।
ওম পুরীও নন্দিতার বিরুদ্ধে মুখ খোলেন সংবাদপত্রে। তিনি পাল্টা প্রশ্ন তুলেছিলেন, নন্দিতা যদি বুঝতেই পারেন সমস্ত ঘটনার পিছনে সীমা রয়েছে তাহলে তিনি কেন বাড়িতে ফিরে আসছেন না? কেন তার জীবন থেকে দূরে সরে যাওয়ার চেষ্টা করছেন নন্দিতা?
এতকিছুর পরেও কোথাও যেন একটা তাল কেটে গিয়েছিল ভারতীয় সিনেমার অন্যতম জীবন্ত কিংবদন্তির। মন-মেজাজ ভালো থাকত না। যে ওম জীবনটাকে খেলোয়াড়সুলভ মানসিকতায় কাটাতে ভালবাসতেন সেই ওম পুরী কোথাও যেন হারিয়ে গিয়েছিলেন। সেটে সকলের সঙ্গে হাসি-মজা করায় ওম পুরী ছিলেন অদ্বিতীয়। সারা মুখে ব্রুণের গর্তের দাগ নিয়ে, একটা সাধারণ লুক নিয়েও যে দাপটের সঙ্গে অন্যধারার সিনেমা থেকে কমারশিয়াল সিনেমায় দাপটের সঙ্গে অভিনয় করা যায় তা তো ভারতীয় দর্শকদের দেখিয়ে দিয়েছিলেন ওম পুরী।
এমনিতেই সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠতেন। সকালে তার প্রিয় ছিল এক কাপ খাঁটি লাল দার্জিলিং চা। কিন্তু, সময় পেরিয়ে গেলেও ওম ঘুম থেকে উঠছিলেন না। গাড়ির চালক বার বার ডাকার চেষ্টা করেন তাকে। কোনো সাড়া না পেয়ে চিকিৎসককে ডেকে আনেন। জানা যায় ৬৬ বছর বয়সে ঘুমের ঘোরেই মৃত্যুবরণ করেছেন ভারতীয় সিনেমার কিংবদন্তি।
বিডি প্রতিদিন/৬ জানুয়ারি ২০১৭/এনায়েত করিম