বদলে গেছে কামার পাড়ার চিত্র। কেউ ভারী হাতুড়ি দিয়ে পেটাচ্ছেন দগদগে লাল লোহার খণ্ড। কেউ শান দিচ্ছেন, কেউবা আইতনা দিয়ে কয়লার আগুনে বাতাস কিংবা সাহায্য করছেন সহকর্মীদের। সবারই হাত, মুখ, পা কালিতে ভরা। তীব্র গরমে শরীর ঘামছে দরদরিয়ে। এটি ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার শিবগঞ্জ এলাকার কামারপাড়ার চিত্র। আসন্ন ঈদুল আজহাকে কেন্দ্র করেই তাদের এ ব্যস্ততা।
দিন যতই ঘনিয়ে আসছে ততই পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ব্যস্ততা। আরাম-আয়েশ, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, সময়মতো খাদ্য গ্রহণ, সহকর্মীদের সঙ্গে গল্পগুজব, সবই বন্ধ। কেবল সহকর্মীর সঙ্গেই চলছে একটু-আধটু কথা, তাও সংশ্লিষ্ট কাজের। আর কিছু কথা হয় ক্রেতার সঙ্গে। কোনো ক্রেতা দিয়ে যাচ্ছেন অর্ডার, কেউ কিনছেন রেডিমেড। আর কেউবা দামদরে না মিললে নিচ্ছেন বিদায়। কিন্তু কামাররা কাজ করছেন অবিরাম।
ঠাকুরগাঁও শহরের বিভিন্ন কামাররা জানালেন, সারা বছরই কামারদের তৈরি সামগ্রীর চাহিদা থাকে। তবে কোরবানি ঈদের সময় চাহিদা থাকে খুব বেশি। তাই সে অনুযায়ী কাজ করতে হয় দীর্ঘসময়। কোনো কোনো সময় ১৬-১৮ ঘণ্টা টানা পরিশ্রম করেও অর্ডারের সময়ানুযায়ী মাল দিতে হিমশিম খেতে হয়। তারা জানান, প্রতি বছর কোরবানির ঈদ-ই থাকে মূল টার্গেট। বছরব্যাপী ব্যবসায়ের বড় লভ্যাংশটা এ সময়ই ওঠে। তবে কামাররা বেশ হতাশার কথা শোনালেন কয়লা নিয়ে। জানালেন, লোহার দাম সহনশীল পর্যায়ে থাকলেও কয়লার দাম বেগতিক। গত বছর কেজি প্রতি ৪৫০-৫০০ টাকায় কিনলেও এবার ৮০০-৮৫০ টাকা।
গড়েয়া বাজারের কারিগর রাসেল বলেন, এখনো বিক্রির ধুম পড়েনি। তবে আমেজ পড়েছে। ২-৩ দিনের মধ্যেই বাজার পুরোপুরি জমে উঠবে বলে জানালেন তিনি।
দেখা গেছে, কোরবানির পশু জবাই, মাংস-হাড় কাটার জন্য হরেক ধরনের, বিভিন্ন দামের লৌহজাত সামগ্রী বানাচ্ছেন। কেউবা কারখানার পাশে বসিয়েছেন ছোট্ট দোকান। এসব দোকানে আকারভেদে বিভিন্ন দামের ছুরি, দা, চাপাতি, চাইনিজ কুড়াল বিক্রি হচ্ছে। মাঝারি আকারের জবাইয়ের ছুরি ২০০-৫৫০, বড় ছুরি ৫০০ থেকে হাজার টাকা পর্যন্ত রয়েছে। পাশাপাশি রয়েছে মাংস কাটার কিংবা চামড়া ছাড়ানোর ছোট ছোট ছুরি। এসব ছুরির আবার বিভিন্ন নামও রয়েছে।
কাওরান বাজারের কারিগর সুলতান জানান, কস্তুরি ছুরি বিক্রি হয় ৩০০-৩৫০, কামেলা ১১০-১৫০ ও স্টিলের ৫০-৬০ টাকায়। এছাড়া র্যাদার ছুরিও রয়েছে, দাম ৬০০-৬৫০ টাকা। বিভিন্ন আকারের পা যুক্ত দায়ের দাম ১০০ থেকে ১ হাজার টাকা আর পা ছাড়া ২৫০ থেকে ১ হাজার টাকা। তবে বেশির ভাগ ব্যবসায়ীই চাপাতি বিক্রি করছেন কেজি হিসেবে। তারা জানান, চাপাতিতে লোহা বেশি লাগে। কাঁচা লোহার তৈরি চাপাতির কেজি ২০০-৩৫০, ইস্পাতের ৫০০-৬৫০ টাকা। এছাড়া দেশীয় তৈরি চাইনিজ কুড়ালের দাম ৫৫০-৭৫০ টাকার মধ্যে।
এছাড়া ক্রেতাদের চাহিদা অনুসারে অর্ডারেও মাল সরবরাহ করেন কামাররা। জয়নাল মিয়া নামের এক কারিগর বলেন, 'কাস্টমার লোহা দিলে খালি মজুরিডা লই। আর আমরা লোহা দিলে মজুরির লগে লোহার দামডা যোগ অয়।'
এদিকে, কামাররা রেডিমেড বিক্রি ও অর্ডারের পাশাপাশি করছেন মেরামতের কাজও। কাজভেদে মেরামতে খরচ পড়ে ৩০-১৫০ টাকা পর্যন্ত। ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন এসব বাজারভেদে কোরবানির পশু জবাই করা সামগ্রীর দামের তারতম্য রয়েছে। কালিবাড়ি ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেন বলেন, সব এলাকার দর সমান না। কিছু এলাকার বাজারগুলোয় খরচ একটু বেশিই পড়ে।
বিডি-প্রতিদিন/ ২ অক্টোবর, ২৯১৪/ রশিদা