শুক্রবার, ২৫ ডিসেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

নতুন বছরে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের আশা জাপানি রাষ্ট্রদূতের

নিজস্ব প্রতিবেদক

নতুন বছরে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের আশা জাপানি রাষ্ট্রদূতের

আগামী বছর রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরুর ব্যাপারে আশা প্রকাশ করেছেন ঢাকায় জাপানের রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকি। গতকাল জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আমাদের নতুন বছরে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ার সূচনা দেখা উচিত। রোহিঙ্গা সংকটের দীর্ঘমেয়াদি সমাধানের পথে এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া। বিষয়টি নিয়ে মিয়ানমার সরকার ও সেনাবাহিনীর সঙ্গে জাপান সরকার কাজ করছে।’

বিনিয়োগ-বাণিজ্য ইস্যুতে মিয়ানমারের পাশে থাকার ঘোষণা দিলেও ২০১৯ সালের জুলাইয়ে বাংলাদেশ সফরে এসে প্রত্যাবাসন নিয়ে মধ্যস্থতার কথা বলেছিলেন মিয়ানমারের ঘনিষ্ঠ মিত্র দেশ জাপানের তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী তারো কোনো। প্রত্যাবাসনের পক্ষে অন্যান্য দেশগুলোও তাদের অবস্থান জানান দেয়। তবে এরপর চোখে পড়ার মতো কোনো উদ্যোগ না দেখায় রোহিঙ্গা ইস্যুতে বন্ধু দেশগুলোর অবস্থান নিয়ে সম্প্রতি হতাশা প্রকাশ করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। এমন প্রেক্ষাপটে গতকাল কূটনৈতিক প্রতিবেদকদের সংগঠন ডিক্যাবের আয়োজনে ‘ডিক্যাব টকে’ রোহিঙ্গা ইস্যুতে জোরালো ভূমিকা না থাকা প্রসঙ্গে জাপানি রাষ্ট্রদূতের কাছে জানতে চান সাংবাদিকরা। রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকি বলেন, ‘সেনাবাহিনীর ?ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের পাশাপাশি মিয়ানমারের বেসামরিক সরকারের সঙ্গে জাপানের খুব ভালো যোগাযোগ রয়েছে। জবাবদিহির বিষয়টি তুলে ধরা এবং প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া নিয়ে তাদের সঙ্গে জাপান সরাসরি যোগাযোগ রক্ষা করছে। আমি মনে করি, জাপান তার ভূমিকা অব্যাহত রাখবে।’ রাখাইনসহ মিয়ানমারের বিভিন্ন অঞ্চলে বিপুল বিনিয়োগ রয়েছে জাপানের। রোহিঙ্গা ইস্যুতে তাদের জোরাল অবস্থান না নেওয়ার পেছনে এটাকেও কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক ও কূটনীতিকরা। এ প্রসঙ্গে এক প্রশ্নে জাপানের রাষ্ট্রদূত বলেন, জাপান এশিয়ার অংশ, মিয়ানমারও। বাংলাদেশের মতো মিয়ানমারও ঐতিহ্যগতভাবে জাপানের বন্ধু রাষ্ট্র। অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও দেশটির গণতন্ত্রায়নের ধারায় মিয়ানমার সরকার জাপানের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এজেন্ডা। বিনিয়োগ ও বাণিজ্যের ক্ষেত্রে মিয়ানমারে জাপানি কোম্পানিগুলোর জোরাল স্বার্থ জড়িত। এ কারণে মিয়ানমারে বিনিয়োগ-বাণিজ্য চালু রাখার ভালো যুক্তি রয়েছে। আবার এ মুহূর্তে জাপানের ৩১৫টি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে ব্যবসা করছে। বাংলাদেশের জন্য এশিয়ার মধ্যে বড় রপ্তানি বাণিজ্যের দেশ জাপান। করোনাভাইরাসের মধ্যেও বাংলাদেশের অর্থনীতি ভালো করায় বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে চায় জাপান। বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থান এশিয়াতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। তাই জাপানি বিনিয়োগকারীরা এখানে বিনিয়োগে বেশি আগ্রহী।’ ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট মিয়ানমারের রাখাইনে সেনা অভিযানের মুখে কয়েক মাসের মধ্যে ৭ লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নেয়। আগে থেকে বাংলাদেশে ছিল আরও ৪ লাখ রোহিঙ্গা। আন্তর্জাতিক চাপের মধ্যে মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে ২০১৭ সালের শেষ দিকে বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তি করলে আজও শুরু হয়নি সেই প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া। ডিক্যাব সভাপতি আঙ্গুর নাহার মন্টির পরিচালনায় অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন সাধারণ সম্পাদক তৌহিদুর রহমান।

সর্বশেষ খবর