শুক্রবার, ১১ জুন, ২০২১ ০০:০০ টা

আমরা অপরিকল্পিত নগরায়ণের শিকার

------ ইকবাল হাবিব

আমরা অপরিকল্পিত নগরায়ণের শিকার

স্থপতি ও নগর পরিকল্পনাবিদ ইকবাল হাবিব বলেছেন, ‘আমরা অপরিণামদর্শী ও অপরিকল্পিত নগরায়ণের শিকার। স্বাধীনতা-উত্তর এত দিনেও একটি পরিকল্পিত নগরায়ণের জন্য পরিকল্পনামাফিক কার্যক্রমে যেতে পারিনি। ২০১০ সালে ড্যাপ অনুমোদন করেও বাস্তবায়ন করতে পারিনি। এখন আবার একটি চলমান রয়েছে। নদী, খাল, জলাধারে ঘিরে রাখা শহর হিসেবে আমাদের যে সম্ভাবনা রয়েছে সে সম্ভাবনার দ্বারপ্রান্তে পৌঁছতে পারিনি। আমাদের উন্নয়ন ভাবনাগুলো, প্রকল্পগুলোয় সবার অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করতে পারিনি। ফলে বিপুল সম্ভাবনা থাকার পরও নগর হিসেবে ঢাকা অনেক পিছিয়ে আছে।’ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে মোবাইল ফোনে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের প্রকল্পের সূচনায়, তৈরিতে, বাস্তবায়নে জনসম্পৃক্ততা পূর্ণভাবে নিশ্চিত করতে পারিনি। যদিও আমাদের ৫৪টি সংস্থা এ শহরকে বাঁচিয়ে রাখে, সেই ৫৪টি সংস্থা সমন্বয়ের অভাবে, জবাবদিহির অভাবে তাদের কার্যক্রমকে জনমানুষের কল্যাণে পূর্ণ উদ্যমে নিতে পারছে না। এর পরও এ নগরী পয়লা বৈশাখে লাখো মানুষের মিলনমেলায় পরিণত হয়। একই সঙ্গে প্রতি বছর ২১ ফেব্রুয়ারি লাখ লাখ মানুষের খালি পায়ে শহীদ মিনার প্রদক্ষিণের মধ্য দিয়ে এ শহর তার সাংস্কৃতিক উপজীব্যতার সামর্থ্যকে প্রকাশ করে। এখনো বানে ভাসা মানুষ এ নগরীতে এলে খেয়ে-পরে বাঁচার অবলম্বন পায়। এমন একটা নগরীকে শুধু পাঁচটি বিশেষ মূল্যায়নপত্রের মধ্য দিয়ে পৃথিবীর যুদ্ধবিধ্বস্ত দামেস্কের সঙ্গে একাকার করা অবশ্যই গ্রহণযোগ্য নয়।’ ইকবাল হাবিব বলেন, ‘প্রচ- রকম যুদ্ধ করে যাওয়া এই নগরী ২ কোটির মতো মানুষ ধারণ করে, তাদের জীবনাচরণে, অর্থনৈতিকভাবে, সামাজিকভাবে এবং সাংস্কৃতিকভাবে বিকশিত করে, সেটাকে বিবেচনায় না নিলে আমাদের প্রতি অন্যায় করা হবে। আমরা উন্নয়নের চেষ্টা করছি, নিজেদের সম্ভাবনাকে দেখেছি। আমরা এত জনঘনত্ব নিয়ে প্রায় অচলাবস্থা থেকে সচলাবস্থায় পৌঁছে যাচ্ছি। এই সময়ে আমাদের এভাবে লেবেলিং করা গ্রহণযোগ্য নয়। এতে দেশে যে গভীর ভাবনার জায়গাটি তৈরি হয়, সেটা হচ্ছে পরবর্তী প্রজন্মের যারা পরিবর্তনটা এগিয়ে নেবে, সেই মানুষগুলোকে নগর ত্যাগে উৎসাহিত করা হচ্ছে। এটা একটা নগরের জন্য কল্যাণকর হতে পারে না।’ তিনি বলেন, ‘এখনো ঢাকা অন্য অনেক নগরীর তুলনায় প্রতি বর্গকিলোমিটারে ৪৭ হাজার ৮০০ মানুষ নিয়ে একটি ভালোবাসার নগর। বসবাস-অযোগ্য বলে এটাকে পরিত্যক্ত করার প্রস্তাব কোনোভাবেই মেনে নেওয়ার সুযোগ নেই। ব্যক্তি, পরিবার ও সামষ্টিকভাবে অনেক দূর এগোনোর সম্ভাবনা রয়েছে, যেখানে সবাই মিলে পৌঁছাবার চেষ্টা করছি। আরও ব্যাপক ও সমন্বিত উদ্যোগ আমরা নেব। তবে ঢাকাকে দ্রুত এগিয়ে নিতে আমাদের মূল সমস্যাগুলোর সমাধান জনবান্ধব, জনপ্রতিনিধিত্বশীল সংগঠনের মাধ্যমে করতে হবে। একই সঙ্গে আমাদের সংগঠনগুলোকে আরও জনবান্ধব ও জনপ্রতিনিধিত্বশীল করতে হবে। সংগঠনগুলোকে জবাবদিহিমূলক সংগঠনে পরিণত করতে হবে। পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নের সব স্তরে জনগণকে সম্পৃক্ত রাখতে হবে। দৃষ্টিনন্দনের, লোকরঞ্জনের প্রকল্পের চেয়ে জনউন্নয়নের প্রকল্পকে প্রাধিকার দিলে এবং প্রতিটি টাকার বিনিয়োগ যথার্থতা নিশ্চিত করতে পারলে ঢাকা বিশ্বের শ্রেষ্ঠ একটি শহর হবে।’ তবে ইকোনমিস্টের প্রতিবেদনের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘পৃথিবীর যে কোনো সংস্থা বিভিন্ন মানদন্ডে শহরগুলোর বসবাসযোগ্যতা নিরূপণ করতেই পারে। কিন্তু মানদন্ডে যদি জনমিতি ও জনঘনত্ব না থাকে, তবে সেই মূল্যায়নটি পক্ষপাতদুষ্ট হবে। ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স প্রতি বছর এই যে মূল্যায়ন করছে, সেখানে জনমিতি ও জনঘনত্বকে একেবারেই গুরুত্ব দেওয়া হয় না। এটি মোটেই গ্রহণযোগ্য ও নিরপেক্ষ নয়।’

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর