সদ্য ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে ৫০০ কোটি মার্কিন ডলার আত্মসাৎ করেছেন বলে চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশ করেছে গ্লোবাল ডিফেন্স কর্প নামের একটি ওয়েবসাইট। ওয়েবসাইটটির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই আত্মসাতের কাজে তাকে সহায়তা করেছেন ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় ও ভাগ্নি টিউলিপ সিদ্দিক। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের সদস্যরা রাশিয়ান কোম্পানি রোসাটমের কাছ থেকে একটি পারমাণবিক চুল্লি কেনার নামে এই বিশাল অর্থের লেনদেন করেন। গ্লোবাল ডিফেন্স কর্প নামে পোর্টালটি ২০১৮ সালে চালু হয়। বিভিন্ন দেশের সামরিক ও প্রতিরক্ষা খাতে দুর্নীতির অনুসন্ধান করে থাকে তারা। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রকল্পটি বাংলাদেশের ইতিহাসে অন্যতম বৃহত্তম এবং ব্যয়বহুল প্রকল্প। প্রকল্পটির মোট ব্যয় ধরা হয়েছিল ১২৬৫ কোটি ডলার, যা প্রাথমিকভাবে নির্ধারিত খরচের তুলনায় অনেক বেশি। গ্লোবাল ডিফেন্স কর্পের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই প্রকল্পের মাধ্যমে শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের সদস্যরা রোসাটমের সঙ্গে মিলিতভাবে কাজ করে ৫০০ কোটি ডলার আত্মসাৎ করেন। তাদের সহায়তায় এই বিশাল পরিমাণ অর্থ মালয়েশিয়ার বিভিন্ন ব্যাংকের মাধ্যমে স্থানান্তর করা হয়।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, রোসাটমের সহযোগিতায় শেখ হাসিনার পরিবার রাশিয়ার স্ল্যাশ ফান্ড থেকে অর্থ গ্রহণ করে এবং তা বিভিন্ন ব্যাংকে স্থানান্তর করে। বিশেষ করে, মালয়েশিয়ার ব্যাংকগুলো এই অর্থ লেনদেনের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। প্রতিবেদনের দাবি, ২০১৩ সালে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনের সঙ্গে শেখ হাসিনার সাক্ষাতের সময় সঙ্গী ছিলেন টিউলিপ সিদ্দিক। গ্লোবাল ডিফেন্স কর্প বলছে, সে সময় ঢাকা-মস্কোর বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র চুক্তির মধ্যস্থতাও করেন তিনি (টিউলিপ)। ২০০৯ সালে ‘প্রচ্ছায়া লিমিটেড’ নামে একটি ভুয়া কোম্পানি চালু করেন টিউলিপ সিদ্দিক, তার মা শেখ রেহানা ও চাচা তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর প্রতিরক্ষা উপদেষ্টা তারিক আহমেদ সিদ্দিক। যুক্তরাষ্ট্রেও ‘জুমানা ইনভেস্টমেন্ট’ নামে একটি কোম্পানি রয়েছে তাদের। এসব কোম্পানির মাধ্যমে তারা আর্থিক লেনদেন করতেন। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, টিউলিপ সিদ্দিক তার খালার সঙ্গে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনের সাক্ষাতের সময় উপস্থিত ছিলেন এবং রূপপুর বিদ্যুৎ কেন্দ্রের চুক্তি চূড়ান্ত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। এই চুক্তির বিনিময়ে তিনি এবং তার পরিবার পাচার করা অর্থের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ লাভ করেন। গ্লোবাল ডিফেন্স কর্পের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে গণতন্ত্র ক্রমেই দুর্নীতিতে জর্জরিত স্বৈরাচারের কবলে পড়ে জিম্মি হয়ে যায়। ২০১৮ সালের ২৩ মার্চ প্রকাশিত এক গবেষণা প্রতিবেদনে জার্মান থিংকট্যাংক বেরটেলসম্যান স্টিফটুং বাংলাদেশকে ‘স্বৈরাচারী শাসকগোষ্ঠী’র তালিকায় তালিকাভুক্ত করে। স্বৈরাচারী শাসকদের কঠোর হস্তক্ষেপের কারণে বিচারবিভাগসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান নিছক হাতের পুতুল হয়ে যায়। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ২০১৫ সালে যুক্তরাজ্যের লেবার পার্টির প্রার্থী টিউলিপ সিদ্দিক যখন নির্বাচনে জয়ী হন, তখন তার খালা শেখ হাসিনা গর্বের সঙ্গে জাতীয় সংসদে বলেছিলেন, কীভাবে তার ভাগ্নি পশ্চিমা প্রতিদ্বন্দ্বীদের পরাজিত করে নির্বাচনে জয়ী হয়েছে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী সংসদে উল্লেখ করেন, তার ছোট বোন শেখ রেহানা (টিউলিপের মা) একজন ব্রিটিশ নাগরিক, যিনি যুক্তরাজ্যে থাকেন এবং আর্থিক কষ্টে ভুগছেন। ব্যক্তিগত গাড়ি কেনার সামর্থ্য না থাকায় শেখ রেহানা বাসে করে কর্মস্থলে যাতায়াত করেন। এই প্রতিবেদনে বলা হয়, রূপপুরে পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের চুক্তি চূড়ান্ত করার আগে লন্ডনে রোসাটম থেকে ঘুষের আলোচনায় শেখ হাসিনার পক্ষে উপস্থিত ছিলেন টিউলিপ সিদ্দিক। তিনি (টিউলিপ) বিনামূল্যে এ সেবা দেননি! ২০০৯ সালের জানুয়ারি থেকে তার মা শেখ রেহানা এবং বাংলাদেশের তৎকালীন শাসক পরিবারের বেশ কয়েকজন সদস্য রাশিয়ানদের কাছ থেকে ৩০ শতাংশ ‘ঘুষ’ পেয়েছেন এবং পুরো অর্থ গোপনে মালয়েশিয়ার বিভিন্ন অফশোর ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা হয়েছে। উল্লেখ্য, রাশিয়ার সহযোগিতায় পাবনার রূপপুরে নির্মাণ হচ্ছে দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র। এটি নির্মাণের ব্যয় ধরা হয়েছে ১২৬৫ কোটি ডলার। প্রকল্পটির ৯০ ভাগ অর্থায়ন হচ্ছে রাশিয়ার ঋণে। ১০ ভাগের জোগান দিচ্ছে সরকার। প্রকল্পটিতে ভিভিইআর প্রযুক্তির তৃতীয় প্রজন্মের পরমাণু চুল্লি ব্যবহৃত হচ্ছে। যার প্রত্যেকটির উৎপাদন সক্ষমতা ১২০০ মেগাওয়াট করে। চলতি বছর প্রথম ইউনিট এবং ২০২৫ সালে দ্বিতীয় ইউনিটের কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। গত বছরের ২৮ সেপ্টেম্বর বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির প্রথম ইউনিটের প্রথম ফ্রেশ নিউক্লিয়ার ফুয়েল বা ইউরেনিয়ামের প্রথম চালান দেশে আসে। পরে তা আনুষ্ঠানিকতার মাধ্যমে বাংলাদেশের কাছে হস্তান্তর করে রাশিয়া। এই পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরি হলে এর দুটি ইউনিট থেকে পাওয়া যাবে ২ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ।