দেশে পদে পদে গণতন্ত্রের নিরাপদ যাত্রা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। তিনি বলেন, যে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার লড়াইয়ে জিয়াউর রহমান শাহাদাতবরণ করেছেন, সে গণতন্ত্রের নিরবচ্ছিন্ন পদযাত্রা আজ পদে পদে বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে। খুব শিগগিরই বাংলাদেশে গণতন্ত্রের পুনঃপ্রতিষ্ঠা দেখতে পাবেন বলে প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন তিনি।
গতকাল বিকালে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা, স্বাধীনতার ঘোষক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ৪৪তম শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষে কেন্দ্রীয় বিএনপির আলোচনা সভায় দেওয়া ভিডিও বার্তায় এ কথা বলেন তিনি। একই অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তৃতায় দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেন, আগামী ডিসেম্বরের আগেই জাতীয় নির্বাচন দেওয়া সম্ভব। অনুষ্ঠানে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের ভার্চুয়ালি সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, আবদুল মঈন খান, সালাহউদ্দিন আহমেদ, ইকবাল মাহমুদ টুকু, মেজর (অব.) হাফিজউদ্দিন আহমদ, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী প্রমুখ বক্তব্য দেন।
বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, ‘গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা হোক’ জিয়াউর রহমানের শাহাদাতবার্ষিকীতে আমাদের সবার অঙ্গীকার। গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সুশৃঙ্খলভাবে এগিয়ে চলার জন্য বিএনপির সকল পর্যায়ের নেতা-কর্মী ও দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান তিনি। খালেদা জিয়া বলেন, ‘মনে রাখবেন-সবার জন্য গণতন্ত্র ও উন্নয়নের মাধ্যমে সব সমস্যার সমাধানের যে রাজনীতি শহীদ জিয়া রেখে গেছেন, তা বাস্তবায়নের মাধ্যমে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে হবে। আমরা তাঁর আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি।’ প্রধান অতিথির বক্তব্যে বেগম জিয়া বলেন, ‘প্রতি বছর এ দিনটি (৩০ মে) আমাদের পরিবারে আসে এক বেদনাবিধুর স্মৃতি নিয়ে। এই দিনে শুধু আমাদের পরিবার নয়, সারা দেশের মানুষ হয়ে পড়েছিল বেদনার্ত ও অভিভাবকহীন। আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা এক অবিচ্ছেদ্য নাম শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান; যিনি চট্টগ্রাম থেকে স্বাধীনতার ঘোষণা করে দেশের সঙ্গে তাঁর নাম অবিচ্ছেদ্য করেছিলেন, সেই চট্টগ্রামেই এক সফল, সৎ, দূরদর্শী ও প্রকৃত দেশপ্রেমিক প্রেসিডেন্ট হিসেবে নিজের জীবন উৎসর্গ করেছেন। এ দেশে গণতন্ত্র, স্বাধীনতা, সংবাদপত্র ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, স্বনির্ভরতা ও উন্নয়ন এবং নিজস্ব জাতীয়তাবাদ সৃষ্টির অনন্য রূপকার শহীদ জিয়া।’
আলোচনা সভায় লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে দেওয়া বক্তব্যে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেন, ‘আগামী ডিসেম্বরের আগেই জাতীয় নির্বাচন দেওয়া সম্ভব।’ জনগণের আকাঙ্ক্ষাকে সম্মান করে দ্রুত জাতীয় নির্বাচন দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি। তিনি বলেন, ‘সরকারের উপদেষ্টাদের সঙ্গে জনগণের যোগাযোগ নেই। তারা মানুষের দুঃখ নিয়ে অবগত নয়। তাদের কেউ কেউ ফাইলনির্ভর কাজ করছেন। মানুষ ভোট দিয়ে নির্বাচিত সরকার করতে প্রস্তুত, তবে সরকার তা উপলব্ধি করতে পারছে না।’ তিনি আরও বলেন, ‘সংস্কারে কোনো রাজনৈতিক দলের আপত্তি নাই তবে সংস্কারের নামে সময়ক্ষেপণ নিয়ে আপত্তি আছে।’ প্রস্তাবিত সংস্কার শেষ করে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি। তারেক রহমান বলেন, ‘আমরা মনে করি প্রস্তাবিত সংস্কার শেষ করে যদি তাদের ইনটেশন সঠিক থাকে ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন দেবেন। তবে ডিসেম্বরের আগেও নির্বাচন দেওয়া সম্ভব। এ সরকার ১০ মাসেও জাতীয় নির্বাচনের তারিখ দেয়নি। ফলে রাষ্ট্র ও রাজনীতিতে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘অর্থনৈতিক কর্মকা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। দেশে কাঙ্ক্ষিত বিনিয়োগ হচ্ছে না। ব্যবসায়িক সংগঠনগুলো বলছে, শত শত কলকারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। বন্ধের উপক্রম এমন অনেক। তারা সরকারের কাছে তা তুলের ধরার সুযোগ পাচ্ছে না।’