বাংলাদেশে ডেঙ্গু জ্বরের পাশাপাশি চলতি বছর চিকুনগুনিয়ার প্রভাবও বিগত কয়েক বছরের তুলনায় বেশি লক্ষ করা যাচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে চিকুনগুনিয়া সম্পর্কে সচেতনতা ও এর তীব্রতা মোকাবিলা খুবই জরুরি।
চিকুনগুনিয়া : এই রোগের প্রধান লক্ষণ হলো জ্বর এবং তার সঙ্গে গিটে (জয়েন্ট) ও মাংসপেশির তীব্র ব্যথা। অনেক সময় জ্বরের চেয়েও এই ব্যথা রোগীকে বেশি কাবু করে ফেলে। হাঁটু, গোড়ালি, কবজি ও অস্থিসন্ধিতে এ ব্যথা এতটাই তীব্র হতে পারে যে রোগী হাঁটাচলা করতে অক্ষম হয়ে পড়েন।
যাদের আগে থেকে বাত (আর্থ্রাইটিস), কোমর বা ঘাড়ের ব্যথার মতো সমস্যা আছে, চিকুনগুনিয়া আক্রান্ত হলে তাদের সেই ব্যথা অনেক গুণ বেড়ে যেতে পারে, যা চিকিৎসক ও রোগী উভয়কেই বিভ্রান্ত করতে পারে। তাই এই বিভ্রান্তি এড়াতে চিকুনগুনিয়া শনাক্ত করতে চিকুনগুনিয়া অ্যান্টিজেন, আইজিএম ও আইজিজি অ্যান্টিবডির রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে রোগ নিশ্চিত করা গুরুত্বপূর্ণ।
কী চিকিৎসা আছে : চিকুনগুনিয়ার নির্দিষ্ট কোনো অ্যান্টি-ভাইরাল ওষুধ নেই। চিকিৎসা লক্ষণভিত্তিক। তবে এই রোগের ফলে যে ব্যথা হয় তা সাধারণ ব্যথার ওষুধে কমে না। যদিও এই বিষয়ে বিশদ ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল পাওয়া যায় না; তবুও চিকুনগুনিয়ার ব্যথায় প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধ প্রদাহবিরোধী অন্যান্য ওষুধ যেমন ন্যাপ্রোক্সেন বা ডাইক্লোফেনাকের মতোই বা তার চেয়ে ভালো কাজ করে। সেই সঙ্গে প্রচুর পরিমাণে তরল যেমন ডাবের পানি ও ফলের জুস মাংসপেশির সংকোচন কমাতে ভূমিকা রাখে।
ফিজিওথেরাপির ভূমিকা : চিকুনগুনিয়ার ব্যথায় ফিজিওথেরাপি খুবই ধীরগতিতে কাজ করে। এক্ষেত্রে ইলেকট্রোথেরাপির মাধ্যমে ব্যথা নিরাময় করা যেতে পারে। তবে চিকুনগুনিয়ার ইনফেকশন অ্যাক্টিভ থাকা অবস্থায় ম্যানিপুলেশন ও হাই ইনটেনসিটি এক্সারসাইজ করা উচিত নয়। এই রোগে যেহেতু শরীরে উচ্চমাত্রার প্রদাহ থাকে সেহেতু ম্যানিপুলেশন ও এক্সারসাইজ ব্যথা বাড়িয়ে দিতে পারে। এ ক্ষেত্রে বরফের সেক কাজ করে থাকে। রোগীর সেনসিটিভিটি অনুযায়ী বরফ প্রয়োগ করতে হয়। বিশেষ ক্ষেত্রে হালকা গরম সেকও কাজ করে। এটিও নির্ভর করে রোগীর সেনসিটিভিটি ও ঠান্ডা-গরম গ্রহণের মাত্রার ওপর। ইনফ্লামেশনের মাত্রা অনুযায়ী ঠান্ডা বা গরম প্রয়োগ করা উচিত।
লেখক : ডক্টর অব ফিজিক্যাল থেরাপি (ডিপিটি), ইউনিভার্সিটি অব মন্টানা, যুক্তরাষ্ট্র
বিডি প্রতিদিন/এমআই