যে কোনো কারণে হৃৎপিন্ডে রক্ত প্রবাহের ঘাটতি দেখা দেওয়াকে ইসকেমিয়া বা রক্ত প্রবাহের স্বল্পতা বলা হয় এবং এরূপ অসুস্থতাকে ইসকেমিক হার্ট ডিজিজ বলে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই হৃৎপিন্ডের রক্তনালিতে ব্লক (প্রতিবন্ধকতা) থাকার ফলে ইসকেমিক হার্ট ডিজিজ হয়ে থাকে। তবে হৃৎপিন্ডের রক্তনালি স্বাভাবিক থাকার পরও বেশ কিছু কারণে ইসকেমিক হার্ট ডিজিজ হতে পারে। উভয় ক্ষেত্রেই একই ধরনের উপসর্গ দেখা দিয়ে থাকে, ফলে অনেক চিকিৎসকই এ ধরনের রোগীকে হার্ট ব্লক আছে বলে ধরে চিকিৎসা প্রদান করতে থাকেন। রোগী যদি বয়স্ক ব্যক্তি হন তবে দুই ধরনের অবস্থা একই রোগীতে বিদ্যমান থাকতে পারে।
লক্ষণসমূহ : পরিশ্রমে বুকের ব্যথা অনুভূত হওয়া এবং বিশ্রাম গ্রহণে অতিদ্রুত ব্যথা নিরাময় হওয়া। প্রায় সময়ই ব্যথা তীব্র মাত্রায় হয়ে থাকে এবং ব্যথা বুকের চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে বিশেষ করে গলা, চোয়াল, হাত, পেটের উপরিভাগে ও পিঠে। অনেকের বুক ব্যথার সঙ্গে সঙ্গে শ্বাসকষ্ট বা নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসার মতো অনুভূতি, কারও কারও এর সঙ্গে সঙ্গে বুক ধড়ফড় করতে পারে। বুকে ব্যথার মতো শ্বাসকষ্ট ও বুক ধড়ফড় করাও বিশ্রাম গ্রহণে দ্রুত নিরাময় হয়ে যায়। কখনো কখনো বুক ব্যথা অনুভূত না হয়ে শুধু শ্বাসকষ্ট ও বুকে ধড়ফড় বা যে কোনো একটি লক্ষণ দেখা দিতে পারে। বিশেষ করে যারা দীর্ঘদিন ডায়াবেটিসে ভুগছেন অথবা যাদের বয়স ৭০ বছর বা তার ঊর্ধ্বে। এসব লক্ষণকে সাধারণভাবে প্রাথমিক লক্ষণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। দিনকে দিন রোগীর অবস্থা জটিল আকার ধারণ করতে থাকে এবং এ অবস্থায় রোগীর আরও বেশ কিছু লক্ষণ পরিলক্ষিত হতে থাকে। যেমন- শারীরিক যোগ্যতা কমতে থাকা, অল্প পরিশ্রমেই প্রাথমিক লক্ষণগুলো পরিলক্ষিত হওয়া, হালকা কাঁশি হওয়া, পেটে প্রচুর গ্যাস উৎপন্ন হওয়া, পেট ফেঁপে থাকা, পেট ভরাভরা ভাব অনুভূত হওয়া, বদহজম মতো হওয়া, রাতে কাশি হওয়া ও শ্বাস বন্ধ হওয়ার অনুভূতি হওয়া, হাত-পা-মুখ ফোলাফোলা ভাব ধরা বা ফুলে যাওয়া, চোখে অন্ধকার দেখা, মাথা হালকা অনুভূত হওয়া বা মাথা ঘোরা অনুভূত হওয়া, খাদ্য গ্রহণে অনীহা, শারীরিক ওজন কমে যাওয়া বা বেড়ে যাওয়া, ঘন ঘন সর্দি কাশিতে আক্রান্ত হওয়া। পেটের উপরিভাগে ফুলা ও ব্যথা অনুভূত হওয়া। ইসকেমিক বুকের ব্যথাকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় এনজিনা বলা হয়। শতকরা ৬০ ভাগ রোগীর হার্ট ব্লককে এনজিনার প্রধান কারণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বাকি ৪০ ভাগ রোগীর এনজিনার প্রধান কারণ হার্ট ব্লক বা রক্তনালির রক্ত প্রবাহের প্রতিবন্ধকতা নয়। এ ধরনের রোগী উচ্চরক্তচাপ, এওরটিক ভাল্ব ডিজিজ, হাইপারট্রফিক কার্ডিওমায়োপ্যাথি, ডায়াবেটিস কার্ডিওমায়োপ্যাথি, ডাইলেটেড কার্ডিওমায়োপ্যাথি, থাইরয়েড হরমোনের আধিক্য, মাইক্রোভাসকুলার এনজিনা, রক্তশূন্যতা, অপুষ্টিজনিত হৃদরোগ, থাইরয়েড হরমোনের ঘাটতি জনিত অসুস্থতা ইত্যাদি। তবে অনেক রোগীর দেহে এসব একাধিক কারণ বিদ্যমান থাকতে পারে। কারও দেহে যত বেশি সংখ্যক কারণ উপস্থিত থাকে তার রোগের তীব্রতাও তত বেশি। অনেক সময় এসব কারণের সঙ্গে হার্ট ব্লকও থাকতে পারে তবে এসব ক্ষেত্রে এনজিনার মূল কারণ হার্ট ব্লক নয় বিশেষ করে বয়স্ক ব্যক্তির বেলায়। এ ধরনের অসুস্থতার জন্য কদাচিৎ এনজিওগ্রাম করার প্রয়োজন হতে পারে। প্রায় ক্ষেত্রেই এনজিওগ্রামে তেমন গুরুত্বপূর্ণ ব্লক পাওয়া যায় না। প্রায় সব ক্ষেত্রে ইসিজি, কালার ডপলার ইকোকার্ডিওগ্রাম, বুকের এক্সরে, রক্তের কোলেস্টেরলের মাত্রা নির্ণয়, রক্তে সুগার, থাইরয়েড হরমোনের মাত্রা, থেলিয়াম স্কেনিং, ইটিটি/টিএমটি, স্ট্রেস ইকোকার্ডিওগ্রামের প্রয়োজন হয়ে থাকে। এসব রোগের চিকিৎসা নির্ভর করে প্রকৃত কারণ নির্ণয় করে রোগ শনাক্তকরণের ওপর। তবে তার সঙ্গে স্বাস্থ্যসম্মত খাদ্যাভ্যাস গড়ে তোলা, নিয়মিতভাবে নিরাপদ মাত্রায় কায়িকশ্রমের অনুশীলন করা এবং জীবনধারা পরিবর্তন করে প্রভূত উন্নতি লাভ করা সম্ভব।
এসব কিছুর কারণ নির্ণয় করে সঠিক চিকিৎসা প্রদান করলে প্রায় ক্ষেত্রেই রোগী দ্রুততার সঙ্গে আরোগ্য লাভ করতে থাকে। তাই এসব বিষয়ে সচেতন হতে হবে।
-ডা. এম শমশের আলী, চিফ কনসালট্যান্ট
শমশের হার্ট কেয়ার, শ্যামলী, ঢাকা।