আমার ইচ্ছা হয় ধর্ম মন্ত্রণালয় একজন জাগ্রত হৃদয় ও সুললিত কণ্ঠের অধিকারী মুয়াজ্জিন নিয়োগ দেবে এবং দামেস্কের চারদিকে এমন লাউড স্পিকার লাগাবে, যাতে আজানের শব্দ দূর-দূরান্ত পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। যেন শহরের সব পাড়া-মহল্লা একত্রে জেগে ওঠে। আল্লাহু আকবার ধ্বনিতে মানুষের বোধ ও সুমতি ফিরে আসে। ‘আল্লাহু আকবার’ এমন সুমধুর তারানা (ধর্মীয় সংগীত) যার সমতুল্য কোনো তারানা আসমান থেকে জমিনে আসেনি এবং জমিনবাসী অনুরূপ কোনো সুমধুর শব্দগুচ্ছ শোনেনি।
আল্লাহু আকবার সৈনিকদের বজ্রধ্বনি এবং সুফিদের আত্মার খোরাক ও পবিত্র সুধা। আল্লাহু আকবার সত্যের এমন অনিন্দ্য ধ্বনি, যা মুহাম্মদ (সা.)-এর জীবনোৎসর্গকারী সাহাবিরা সর্বত্র উচ্চারণ করেছেন। চাই তারা সমুদ্রের গভীরে থাকুক, অন্ধকার গুহায় থাকুক অথবা তারা সুউচ্চ পাহাড়ের চূড়ায় থাকুক। তারা যেকোনো ভয়কে জয় ও অসাধ্যকে সাধন করতে আল্লাহু আকবার ধ্বনি উচ্চারণ করতেন।
যেমন— একবার একটি দুর্গের দেয়ালে উঠতে তাদের কষ্ট হচ্ছিল। তখন তারা সমস্বরে আল্লাহু আকবার বলেন এবং ভয় পাওয়া যোদ্ধাদের ভয় দূর হয়ে গেল। তারা দেয়াল টপকে দুর্গের দরজা খুলে দিলেন। দুর্গে প্রবেশের পরও আল্লাহু আকবার ধ্বনিতে চারদিক মুখর করলেন।
অর্থাৎ আল্লাহু আকবার মুমিনের আনন্দ, উদ্যম, বিজয় ও আল্লাহর সাহায্য লাভের মন্ত্র। আল্লাহু আকবারের মোহিত ক্ষণ এমন সময় আসে যখন রাতের অন্ধকার ছেয়ে যায় এবং মানুষ ইবাদত-বন্দেগিতে বিমগ্ন হয় অথবা প্রবৃত্তি পূজারিদের পাপে-অবসাদে ন্যুব্জ শরীর গাফিলতির ঘুমে ডুবে যায়। দিনের বেলায়ও আল্লাহু আকবার ধ্বনি গুঞ্জরিত হয় যখন মানুষ রাজনীতির জুয়া, ব্যবসা-বাণিজ্যের ঝামেলা, লোভ-লালসার প্রতারণা, কুপ্রবৃত্তির প্রবঞ্চনায় আচ্ছন্ন থাকে।
আল্লাহু আকবার মানুষের ওপর এভাবে প্রভাব বিস্তার করে, যেন আসমান থেকে বরকত অবতীর্ণ হচ্ছে এবং তা মানুষের অন্তরে সেভাবে প্রবেশ করছে, যেভাবে পৃথিবীতে আলোকরশ্মি প্রবেশ করে। আল্লাহু আকবার সব দাম্ভিক ও অহংকারীর মাথা নত করে দেয়, চাই সে ক্ষমতার মসনদে আসীন হোক বা অর্থবিত্তের মালিক হোক।
আল্লাহু আকবার ব্যক্তিকে তার প্রবৃত্তি ও কামনা-বাসনা নিয়ন্ত্রণের শক্তি জোগায়। ক্ষমতাধরকে দুর্বলের ওপর অবিচার করা থেকে বিরত রাখে। কেননা আল্লাহু আকবার তাকে স্মরণ করিয়ে দেয় যে আল্লাহ দুর্বলের সঙ্গে আছেন এবং তিনি সবার চেয়ে বড়। আল্লাহু আকবার মানুষকে সতর্ক করে যে পার্থিব জীবন চিরস্থায়ী নয়। মৃত্যুকে তার বরণ করে নিতেই হবে। পৃথিবীর কত বড় বড় মানুষ, কত পরাক্রমশালী ব্যক্তি মাটির সঙ্গে মিশে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। তাদের ক্ষমতা ও সম্পদের কোনো সীমা-পরিসীমা ছিল না। তারা ছিল বড় বড় বাহিনী ও অস্ত্রভাণ্ডারের অধিকারী। তারাও মৃত্যু প্রতিহত করতে পারেনি। মৃত্যুর ফেরেশতাকে প্রতিহত করতে পারেনি। মাটিই হয়েছে তাদের শেষ ঠিকানা। আর প্রমাণিত হয়েছে আল্লাহর সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। তিনিই সবচেয়ে মহান ও মহা-মহিয়ান প্রভু। এভাবেই ‘আল্লাহু আকবার’ মুমিনজীবনকে আল্লাহর মাহাত্ম্য, বড়ত্ব ও শ্রেষ্ঠত্বের চাদরে আবৃত করে ফেলে এবং তাকে পৃথিবীর সব শক্তি, সব ক্ষমতা, সব ভয়, সব হীনতা, সব দীনতার প্রভাব মুক্ত করে এক আল্লাহর আনুগত্যের ছায়ায় স্থান করে দেয়।
তামিরে হায়াত থেকে আতাউর রহমান খসরুর ভাষান্তর
বিডি প্রতিদিন/কেএ