শুক্রবার, ১২ জুলাই, ২০১৯ ০০:০০ টা

ইসলামী পর্যটনকে বিশ্ব বাণিজ্যে ব্র্যান্ড করার প্রস্তাব প্রধানমন্ত্রীর

প্রতিদিন ডেস্ক

ইসলামী পর্যটনকে বিশ্ব বাণিজ্যে ব্র্যান্ড করার প্রস্তাব প্রধানমন্ত্রীর

‘ঢাকা দ্য ওআইসি সিটি অব ট্যুরিজম-২০১৯’ উদযাপন অনুষ্ঠানে গতকাল বক্তব্য দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা -বাসস

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইসলামী পর্যটনকে বিশ্ব বাণিজ্যে ব্র্যান্ড হিসেবে বিকশিত করতে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘ইসলামী পর্যটনকে ‘বিশ্ব বাণিজ্য ব্র্যান্ড’ হিসেবে গড়ে তুলতে সার্বিক প্রয়াস ও রোডম্যাপের প্রয়োজন অতি জরুরি। কারণ এর বাজার বার্ষিক ৮ দশমিক ৩ শতাংশ হারে বেড়ে ২০২১ সাল নাগাদ তা ২৪৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছবে।’ গতকাল সকালে রাজধানীর একটি হোটেলে ‘ঢাকা দ্য ওআইসি সিটি অব ট্যুরিজম-২০১৯’ উদযাপন উপলক্ষে দুই দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। খবর বাসস। তিনি আন্ত-ওআইসি পর্যটক প্রবাহ বৃদ্ধির লক্ষ্যে সংস্থাটির সদস্যভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে ভিসা সহজীকরণ, বিনিয়োগ বৃদ্ধি এবং পর্যটনকেন্দ্রিক খাতগুলোর মানোন্নয়নে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণের ওপরও বিশেষ গুরুত্বারোপ করেন।

প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণে ওআইসিভুক্ত দেশগুলোর মুসলিম পর্যটক এবং পাশ্চাত্য দেশগুলোর জন্য বিশ্বের সর্ববৃহৎ বালুময় সমুদ্রতট কক্সবাজারে পৃথক পর্যটন স্পট তৈরির প্রস্তাব করেন। তিনি বঙ্গোপসাগরের নিকটবর্তী দেশগুলোকে নিয়ে বাংলাদেশের একটি নৌ ট্যুরিজম রুট তৈরির পরিকল্পনার কথাও উল্লেখ করেন। অনুষ্ঠানে ৪০০ বছরের প্রাচীন নগরী ঢাকার মুসলিম ঐতিহ্য ও নিদর্শন নিয়ে একটি অডিও ভিজুয়াল উপস্থাপন করা হয়।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি মনে করি মুসলিম উম্মাহর একসঙ্গে কাজ করা একান্তভাবে প্রয়োজন। যাতে আমরা সারা বিশ্বে সবার সঙ্গে সম্প্রীতির বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে একসঙ্গে চলতে পারি। নিজেদের যে কোনো সমস্যা নিজেরাই সমাধান করতে পারি। যাতে করে অন্য কেউ মুসলমানদের ভাগ্য নিয়ে খেলতে না পারে।’ প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণে ‘ইসলামী অর্থনীতি’ সম্পর্কে বলেন, ‘এটি বর্তমানে নবরূপে বিকাশ লাভ করছে। হালাল ফুডস, ইসলামী ফাইন্যান্স, হালাল ফার্মাসিউটিক্যালস এবং প্রসাধনী, হালাল পর্যটন ইত্যাদি হচ্ছে ইসলামিক অর্থনীতির ক্রমবর্ধমান খাত। এ খাতগুলো বিকাশের জন্য ওআইসি সদস্যভুক্ত রাষ্ট্রসমূহের সরকারি ও বেসরকারি উভয় খাতের সহযোগিতা ও অংশীদারিত্ব একান্ত প্রয়োজন’। তিনি বলেন, মুসলিম রাষ্ট্রসমূহের মধ্যে বিনিয়োগের সুযোগ উন্মোচন ও টেকসই উন্নয়নের প্রয়োজনীয় বিষয়টি মক্কা মুকাররমায় গত ৩১ মে অনুষ্ঠিত ওআইসির ১৪তম সম্মেলনে গুরুত্বের সঙ্গে স্বীকৃত হয়। মক্কা ঘোষণায় ওআইসি রাষ্ট্রসমূহের সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে যৌথ ইসলামী কর্মপন্থা গ্রহণের বিষয়ও অন্তর্ভুক্ত হয়। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের স্বপ্ন পূরণে পর্যটন খাতের বিকাশ উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করতে পারে। এক্ষেত্রে ইসলামী পর্যটন আমাদের সবচেয়ে সম্ভাবনাময় খাত যেখানে আমাদের সবার একত্রে কাজ করার সুযোগ রয়েছে। তিনি বলেন, বিশ্বের সর্ববৃহৎ অখ- সমুদ্র সৈকত কক্সবাজার, ইউনেস্কো ঘোষিত বিশ্ব ঐতিহ্য ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট সুন্দরবন, প্রাচীন ও আধুনিক প্রতœতাত্ত্বিক ও ইসলামিক স্থাপনা ইত্যাদি বাংলাদেশের অন্যতম পর্যটন আকর্ষণ। শেখ হাসিনা বলেন, ‘বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে প্রায় চারশ বছরের প্রাচীন শহর ঢাকা গৌরবময় ইতিহাস ও ঐতিহ্যের জন্য সুপ্রসিদ্ধ। এখানে রয়েছে আহসান মঞ্জিল, লালবাগ কেল্লা, কার্জন হল, ঢাকার অদূরের পানাম নগরসহ উল্লেখযোগ্য প্রতœতাত্ত্বিক নিদর্শন।’ তিনি বলেন, ঢাকা মসজিদের শহর হিসেবে সুপ্রসিদ্ধ। জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররম-এর নকশা পবিত্র মক্কা নগরীর কাবা শরিফের আদলে তৈরি করা হয়েছে। শুধুমাত্র মুসলিমদের জন্যই নয়, অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের জন্য ঢাকায় রয়েছে বিখ্যাত আর্মেনিয়ান গির্জা, ঢাকেশ্বরী মন্দির, প্যাগোডা এবং রোজ গার্ডেনসহ সুন্দর সুন্দর স্থাপনা।

বাংলাদেশ মুসলিম উম্মাহর শান্তি, সৌহার্দ ও সমৃদ্ধি রক্ষায় সব সময় সক্রিয় ভূমিকা পালন করে আসছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, হজের পর মুসলিম জাহানের দ্বিতীয় বৃহত্তম জমায়েত যা ‘বিশ্ব ইজতেমা’ নামে পরিচিত তা প্রতি বছর বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত হয়। একই সঙ্গে ইসলামী রাষ্ট্রসমূহের পর্যটন মন্ত্রীদের ১০ম সম্মেলনের সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে বাংলাদেশ দুই বছরের জন্য চেয়ারপারসনের দায়িত্ব পালন করছে। ওআইসিভুক্ত রাষ্ট্রসমূহের পর্যটন শিল্পের বিকাশে শেখ হাসিনা তাঁর পূর্ণ সমর্থন ও সহযোগিতা পুনর্ব্যক্ত করেন।

শেখ হাসিনা বলেন, দেশ স্বাধীনের পর বঙ্গবন্ধু বুঝতে পেরেছিলেন, দেশের উন্নয়ন ও কল্যাণ নিশ্চিত করতে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ও যোগাযোগ অত্যন্ত জরুরি। মুসলিম উম্মাহর বৃহত্তর কল্যাণে ১৯৭৪ সালে লাহোরে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় ওআইসি সম্মেলনে তিনি যোগদান করেন এবং বাংলাদেশ ওআইসির সদস্যপদ লাভ করে। তখন থেকে মুসলমানদের মধ্যে ভ্রাতৃত্ব, ন্যায়বিচার, সহমর্মিতা, অন্তর্ভুক্তি ইত্যাদি ইসলামী মূল্যবোধ অনুসরণে মুসলিম একতা ও সংহতি সুপ্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান আর এ এম ওবায়দুল মুকতাদির চৌধুরী, মন্ত্রণালয়ের সচিব এম মহিবুল হক এবং ওআইসির সহকারী মহাসচিব মুসা কুলাকলিকায়া অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন।

মন্ত্রিপরিষদের সদস্যরা, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা, সংসদ সদস্য, বিভিন্ন মন্ত্রণালয় দফতর ও বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা, সাবেক মন্ত্রী ও উপদেষ্টাসহ আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতারা, বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত এবং হাইকমিশনাররা, কূটনৈতিক মিশনের সদস্য, উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার প্রতিনিধি এবং অনুষ্ঠানে যোগদানকারী প্রায় ৩০টি দেশের পর্যটন মন্ত্রী ও তাদের প্রতিনিধি অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

উল্লেখ্য, ২০১৮ সালের ৫ ও ৬ ফেব্রুয়ারি, ঢাকায় ওআইসির পর্যটন মন্ত্রীদের ১০ম সম্মেলনে গৃহীত ঢাকা ঘোষণায় ঢাকাকে ওআইসি সিটি অব ট্যুরিজম-২০১৯ হিসেবে নির্বাচন করা হয়। চার ওআইসিভুক্ত রাষ্ট্রের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে শীর্ষস্থান দখল করে ঢাকা। সম্মেলনে বাংলাদেশের নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আজারবাইজানের ‘গাবালা’-কে ২০২০ সালের সিটি অব ট্যুরিজম হিসেবে ঘোষণা করা হয়।

ঢাকাকে সিটি অব ট্যুরিজম ঘোষণাকে উদযাপনের জন্য আজ বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বিদেশি পর্যটকদের জন্য ঢাকা ও এর আশপাশের বিভিন্ন ঐতিহাসিক মুসলিম নিদর্শনগুলো পরিদর্শন, কনসার্ট এবং হাতিরঝিলে লেজার শো এবং আতশবাজির প্রদর্শন করা হবে।

ওআইসির ২০১৮ সালের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিশ্বে মুসলিম ট্যুরিস্টের সংখ্যা ১৫৬ মিলিয়ন যা ২০২০ সালে বেড়ে দাঁড়াবে ১৮০ মিলিয়ন। একই বছর সারা বিশ্বের জনসংখ্যার ২৬ শতাংশ হবে মুসলিম।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর