বৃহস্পতিবার, ৭ নভেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

ইউরোপের স্বপ্নে গিয়ে নিখোঁজ ৮ তরুণ

শাহ্ দিদার আলম নবেল, সিলেট

প্রবাসী অধ্যুষিত অঞ্চল সিলেট। ইউরোপ, আমেরিকা, মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কয়েক লাখ সিলেটী বসবাস করছেন। এর সিংহভাগই বিদেশে গেছেন বৈধ পথে। কিন্তু অবৈধ পথে পা বাড়ানোর সংখ্যাও কম নয়। দিন দিন বেড়েই চলেছে এ সংখ্যা। বিশেষ করে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে পাড়ি জমানোর স্বপ্নে ঘর থেকে বেরিয়ে পড়ছেন সিলেটের অসংখ্য তরুণ-যুবক। তাদের অনেকেই দুর্গম যাত্রা পাড়ি দিয়ে স্বপ্নের দেশে পা রাখতে পারলেও বেশির ভাগের স্বপ্নই দুঃস্বপ্নে পরিণত হচ্ছে। এই যেমন ইউরোপে যাওয়ার জন্য পা বাড়িয়ে নিখোঁজ রয়েছেন সিলেটের আট তরুণ। প্রায় ১০ মাস ধরে কোনো খোঁজ মিলছে না তাদের। এসব তরুণের পরিবারে এখন ঘোর অন্ধকার। জানা গেছে, ইউরোপে যেতে সিলেটের তরুণ-যুবকরা ঝুঁকি নিচ্ছেন। তারা দালালের মাধ্যমে অবৈধ পথে স্বপ্নের দেশে ঢুকতে টাকা খরচ করছেন। কিন্তু অবৈধভাবে বিভিন্ন দেশে ঢুকতে গিয়ে প্রাণ যাচ্ছে তাদের। চলতি বছর মে মাসে ইতালি যাওয়ার পথে তিউনিসিয়ার উপকূলে অন্তত ৭৫ জন অভিবাসী নিয়ে একটি নৌকা ডুবে যায়। সেখানে নিহতের মধ্যে বাংলাদেশি ছিলেন ৩৭ জন, যার ২০ জনই সিলেট অঞ্চলের। সে ঘটনায় শোকাতুর ছিল সিলেট। এবার জানা গেছে সিলেটের আট তরুণের কথা, যারা ইউরোপে পাড়ি জমাতে গিয়ে ১০ মাস ধরে নিখোঁজ রয়েছেন। নিখোঁজ এই তরুণরা হলেন- সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার দাওয়াদিরি গ্রামের ইমদাদ আহমদের ছেলে জাকারিয়া আহমদ, জকিগঞ্জ উপজেলার গড়রগ্রামের এমাদ উদ্দিনের ছেলে তোফায়েল আহমদ, বিয়ানীবাজার উপজেলার লাউতা ইউনিয়নের উত্তর গাংপাড় গ্রামের আবদুল লতিফের ছেলে আলতাফ হোসেন, কুড়ারবাজার ইউনিয়নের খশির চাতল গ্রামের মিছবাউল হকের ছেলে সুলতান মাহমুদ পলাশ, একই ইউনিয়নের আবদুল্লাহপুর গ্রামের আছার উদ্দিনের ছেলে জুবেল আহমদ, খশির গ্রামের ছয়দুর রহমানের ছেলে আবু তাহের, খশির নয়াবাড়ী গ্রামের সাইদুল হকের ছেলে ওবায়দুল হক ও মুড়িয়া ইউনিয়নের পশ্চিম ঘুঙ্গাদিয়া গ্রামের মিনহাজ উদ্দিনের ছেলে আবু সুফিয়ান। নিখোঁজ আলতাফ হোসেনের বাবা আবদুল লতিফ জানান, তার ছেলে গেল বছর জুলাইয়ে ঢাকায় একটি কোম্পানিতে ট্রেনিংয়ে যাওয়ার কথা বলে বাড়ি থেকে বের হন। সেখান থেকে তিনি বিয়ানীবাজারের মুড়িয়া ইউনিয়নের ঘুঙ্গাদিয়া নয়াগাঁওয়ের দালাল মুতির মাধ্যমে লিবিয়ায় যান।

 দুই মাস সেখানে তাকে জিম্মি রাখা হয়। পরে দেশ থেকে সাড়ে ৪ লাখ টাকা পাঠিয়ে তাকে মুক্ত করা হয়। মুক্তি পাওয়ার পর গেল বছরের ২২ ডিসেম্বর আলতাফ সিলেটের আরও কয়েকজন তরুণের সঙ্গে সাগরপথে ইতালি যেতে নৌকায় ওঠেন। নৌকায় ওঠার আগে তিনি ফোন করেছিলেন। এর পর থেকে তার আর কোনো খোঁজ মিলছে না। তিনি জানান, তার ছেলেসহ নিখোঁজ তরুণদের খোঁজ দিতে পারছে না দালাল।

নিখোঁজ পলাশের বাবা মিছবাউল হক জানান, দালাল বলছে তার ছেলে আফ্রিকার কোনো এক দেশের জেলে রয়েছেন। তার কথায় বিশ্বাস রেখে তারা দিন গুনছেন।

নিখোঁজ সুফিয়ানের বাবা মিনহাজ উদ্দিন জানান, ছেলেকে ইউরোপে পাঠাতে সহায়-সম্বল বিক্রি করে, ঋণ নিয়ে ১৪ লাখ টাকা দালালদের দিয়েছেন। কিন্তু এখন ছেলের কোনো খোঁজ পাচ্ছেন না।

বিয়ানীবাজারের কুড়ারবাজার ইউপি চেয়ারম্যান আবু তাহের ও সদস্য মাছুম আহমদ বলেন, ‘আমরা এসব নিখোঁজ তরুণকে খুঁজে বের করতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপ চাই।’

সর্বশেষ খবর