রাজধানীর মৌচাকে আয়েশা শপিং কমপ্লেক্সের ছাদে এক জোড়া জুতার ছাপ কার? স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রুবাইয়াত শারমিন রুম্পার নাকি অন্য কারও। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জুতার ছাপের ফরেনসিক প্রতিবেদন এবং লাশের ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনই বলে দেবে অনেক প্রশ্নের উত্তর। একই সঙ্গে চলছে ঘটনাস্থলের আশপাশ এলাকার সিসিটিভি ফুটেজ, রুম্পা ও গ্রেফতার আবদুর রহমান সৈকতের মোবাইল ফোনের ফরেনসিক পরীক্ষা। তবে মামলার এজাহারে হত্যার বিষয়টি উল্লেখ করা হলেও গতকাল পর্যন্ত পাওয়া বিভিন্ন তথ্যের বিশ্লেষণ করে ঘটনাটি আত্মহত্যা বলেই ধারণা তদন্ত সংশ্লিষ্টদের। এই ভবনটির লাগোয়া সিদ্ধেশ্বরীর সার্কুলার রোডের ৬৪/৪ নম্বর বাসার সামনে থেকে রুম্পার লাশ উদ্ধার করে রমনা থানা পুলিশ। গত বুধবার রাত ১০টা ৪৬ মিনিটে ৯৯৯-এর মাধ্যমে খবর পেয়ে সিদ্ধেশ্বরীর সার্কুলার রোডের ৬৪/৪ নম্বর বাসার নিচ থেকে রুম্পার লাশ উদ্ধার করে রমনা থানা পুলিশ। লাশের পাশেই ছিল এক জোড়া জুতা। ওই জুতার ছাপ এবং ছাদের ওপর জুতার ছাপের ছবি সংগ্রহ করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ-সিআইডির ক্রাইম সিন ইউনিট। ডিবি দক্ষিণের উপ-কমিশনার (ভারপ্রাপ্ত) রাজিব আল মাসুদ বলেন, দ্রুততর সময়ের মধ্যে ঘটনার রহস্য উন্মোচনে যথাসাধ্য চেষ্টা করছি আমরা। সৈকত রিমান্ডে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দেবে আমাদের প্রত্যাশা। সুইসাইড নাকি হত্যা সেটা আগে নিশ্চিত হওয়া জরুরি। তাছাড়া অন্যান্য আলামত পরীক্ষার প্রতিবেদন পাওয়ার পর স্পষ্ট হবে মোটিভ। সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, এখনো অনেক প্রশ্নের উত্তরই মিলছে না। গত ৪ ডিসেম্বর টিউশনির পর রুম্পা তার জুতা, ব্যাগের সঙ্গে তার সেলফোনটাও বাসায় রেখে গিয়েছিল। আত্মহত্যা করলে সে তো তার বাসাতেই করতে পারত, কেনই বা সে আয়েশা শপিং কমপ্লেক্সে গেল? এ ধরনের অনেক প্রশ্নের উত্তরই খুঁজছেন গোয়েন্দারা। ঘটনার দিন স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে দিনের বেলা সৈকতের সঙ্গে রুম্পার দেখা হয়। ওইদিন এক বান্ধবীর জন্মদিন উদযাপন করতে সৈকত স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে যান। সন্ধ্যা পর্যন্ত সৈকতের অবস্থান ছিল সিদ্ধেশ্বরী এলাকাতেই। সৈকত কিছুদিন স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করলেও বর্তমানে সে আদমজী ক্যান্টনমেন্ট কলেজে বিবিএতে অধ্যয়ন করছেন। তবে বেশকিছু দিন ধরে রুম্পা ও সৈকতের সম্পর্ক ভালো যাচ্ছিল না। সৈকতই সম্পর্ক ভেঙে দিয়েছেন বলে দাবি করছেন। যে তিনটি ভবনের ফাঁকে রুম্পার লাশ পড়ে ছিল সেখানকার ঠিক কোনটির ছাদ থেকে তাকে ফেলে দেওয়া হয়েছিল, নাকি সেই রাতে একাই রুম্পা একটি ভবনের ছাদে উঠে নিজেই লাফিয়ে পড়েছিল, নাকি দায় এড়াতে কৌশলে প্রেমিক সৈকতই তাকে ছাদে নিয়ে ফেলে হত্যা করেছিল। এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজছেন গোয়েন্দারা। একই সঙ্গে ওই সড়কের কয়েকটি ভবনের সিসিটিভি ফুটেজের ওপর চলছে নিবিড় বিশ্লেষণ। এদিকে, আদালতের নির্দেশে ৪ দিনের রিমান্ডে থাকা সৈকত প্রথম দিনের জিজ্ঞাসাবাদে হত্যার দায় অস্বীকার করে বলেছে, রুম্পার সঙ্গে তার তিন মাসের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। সম্প্রতি তিনি রুম্পাকে পরিষ্কার জানিয়ে দেন, তার পক্ষে আর সম্পর্ক দীর্ঘস্থায়ী করা সম্ভব নয়। তবে এরপরও রুম্পা তার সঙ্গে সম্পর্ক রাখতে অনুরোধ করেছিল। ঘটনার দিন বিকালেও রুম্পার সঙ্গে তার কথা হয়েছিল।