শনিবার, ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

শব্দে নষ্ট কান মগজ হৃৎপিণ্ড

বাড়ছে স্ট্রোক হার্ট অ্যাটাক মানসিক রোগ বন্ধ্যত্ব

শামীম আহমেদ

শব্দে নষ্ট কান মগজ হৃৎপিণ্ড

ভয়াবহ শব্দদূষণের কবল থেকে কিছুতেই মুক্তি মিলছে না রাজধানী ঢাকার বাসিন্দাদের। শব্দদূষণ বাড়ছে অন্য নগরগুলোতেও। শুধু সড়কেই নয়, আবাসিক এলাকা বা নীরব এলাকা হিসেবে স্বীকৃত হাসপাতাল এলাকায়ও রাত-দিন উচ্চ শব্দে বাজছে গাড়ির হর্ন। নির্মাণ কাজ, গ্রিল-টাইলস কাটা, মেশিনে ইট ভাঙা, মাইক, জেনারেটরের শব্দে ঘরের ভিতরেই টিকে থাকা দায়। ক্রমেই শব্দের মাত্রা বেড়ে চলেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অতিরিক্ত শব্দদূষণ শুধু শ্রবণশক্তিই নষ্ট করে দিচ্ছে না, বাড়িয়ে তুলছে হৃদরোগ, স্ট্রোক, কিডনি ও মানসিক রোগসহ নানা শারীরিক ও মানসিক জটিলতা। কমিয়ে দিচ্ছে সন্তান জন্মদানের ক্ষমতাও। লোপ পাচ্ছে মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা।  লেখাপড়ায় মনোযোগ কমে যাচ্ছে শিশুর।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, সাধারণত ৬০ ডেসিবল শব্দ একজন মানুষকে সাময়িকভাবে বধির করতে পারে এবং ১০০ ডেসিবল শব্দ সম্পূর্ণ বধিরতা সৃষ্টি করতে পারে। দেশের শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণ বিধিমালা-২০০৬ অনুযায়ী, আবাসিক এলাকায় অনুমতিযোগ্য শব্দের মাত্রা সর্বোচ্চ ৫৫ ডিবি (ডেসিবল) এবং বাণিজ্যিক এলাকায় সর্বোচ্চ ৭০ ডিবি। এ ছাড়া হাসপাতাল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, অফিস-আদালতের আশপাশে ১০০ মিটার পর্যন্ত নীরব এলাকা, যেখানে অনুমতিযোগ্য সর্বোচ্চ শব্দমাত্রা ৫০ ডিবি। তবে কেউ মানছে না আইন। শব্দদূষণ ক্রমেই বাড়ছে। গত ফেব্রুয়ারিতে জাতিসংঘ পরিবেশ কর্মসূচির (ইউএনইপি) প্রকাশ করা প্রতিবেদন অনুযায়ী বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে বেশি শব্দদূষণের শিকার ঢাকার বাসিন্দারা। প্রতিবেদনে বলা হয়, ঢাকার বাণিজ্যিক এলাকায় গড়ে শব্দের মাত্রা ১১৯ এবং রাজশাহীতে ১০৩ ডিবি (ডেসিবল), যা একজন মানুষের কানের সহ্য ক্ষমতার অনেক বেশি। গত মে মাসে গুলশান এলাকায় অভিযান চালিয়ে বিভিন্ন যানবাহনে ১০২ ডেসিবল পর্যন্ত শব্দের হর্ন পায় পরিবেশ অধিদফতর। অভিযান চলাকালীন পরিচিত অনেক বাইকারকে হর্ন খুলে রাখতে দেখা যায়। বর্তমানে উচ্চ শব্দের হর্ন লাগিয়ে সড়ক দাপিয়ে বেড়াচ্ছে অসংখ্য যানবাহন, যার মধ্যে মোটরসাইকেল, কাভার্ড ভ্যান, ট্রাক ও দূরপাল্লার বাসের সংখ্যাই বেশি।

নগরবাসী বলছেন, ফ্লাইওভারগুলোর নিচে এত বেশি শব্দ হয় যে, পাঁচ মিনিটেই মাথাব্যথা শুরু হয়ে যায়। যানজটের ভিতরে অপ্রয়োজনেই যানবাহন চালকরা হর্ন বাজাতে থাকেন। একসঙ্গে ৩০-৪০টা গাড়ি হর্ন বাজালে পরিস্থিতি ভয়াবহ হয়ে ওঠে। এতে অফিসে গিয়ে কাজে মনোযোগ আনতেই দীর্ঘ সময় লেগে যায়। কাজ সেরে বাসায় ফিরে  মেজাজ খিটখিটে থাকে। নিজের অজান্তেই অনেকে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করে ফেলেন। ঘুম হয় না। এ ব্যাপারে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, শব্দদূষণের প্রভাব ভয়াবহ। প্রথমত বধিরতা দেখা দেয়। এ ছাড়া খিটখিটে মেজাজ, মাথা ধরা, হৃৎকম্প, হৃদরোগ, পেটের আলসার, অনিদ্রা, শিশুদের লেখাপড়ায় মনোযোগ কমে যাওয়া ও মানসিক বিকাশ বিঘ্নিত হওয়াসহ শারীরিক ও মানসিক নানা সমস্যার জন্য দায়ী শব্দদূষণ। এদিকে ২০১৬ সালে অকুপেশনাল হেলথ অ্যান্ড এপিডেমিওলজি জার্নালে প্রকাশিত ‘পুরুষের প্রজনন স্বাস্থ্যের (ফার্টিলিটি) ওপর শব্দদূষণের প্রভাব (পর্যালোচনা) শীর্ষক এক গবেষণায় উপসংহারে বলা হয়েছে যে, উচ্চ শব্দ অণ্ডকোষের ওজন, শুক্রাণুর পরামিতি (শুক্রাণুর সংখ্যা, প্রাণশক্তি, গতিশীলতা এবং রূপবিদ্যা), যৌন হরমোনের মাত্রা, টেস্টিকুলার টিস্যু এবং অক্সিডেটিভ স্ট্রেসের মাত্রা প্রভাবিত করতে পারে যা পুরুষ বন্ধ্যত্বের ক্ষেত্রে প্রভাব রাখতে পারে। এমনকি বড় বিমানবন্দরের পাশে বসবাসকারী নারীরা তুলনামূলক বেশিসংখ্যক অপরিণত শিশুর জন্ম দেয় বলেও গবেষণায় উঠে এসেছে। ঢাকার ট্রাফিক পুলিশের ওপর পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, শব্দদূষণের কারণে ১১.৮ শতাংশ ট্রাফিক পুলিশ কম শোনেন। ৮.২ ভাগ ট্রাফিক পুলিশ জানায়, কয়েক ঘণ্টা দায়িত্ব পালনের পর তারা ঘূর্ণিরোগ, মাথা ভনভন করা, বমি বমি ভাব ও ক্লান্তির সমস্যায় ভোগেন।

শব্দে বাড়ছে বধির মানুষ

শব্দ গুরুতর মানসিক রোগের উৎস

উচ্চ শব্দে স্ট্রোকের ঝুঁকি

 

সর্বশেষ খবর