রবিবার, ২৯ জানুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

মার্কিন পুলিশের বর্বরতার ভিডিও নিয়ে চাঞ্চল্য

প্রতিদিন ডেস্ক

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মেমফিস শহরে কৃষ্ণাঙ্গ তরুণ টায়ের নিকোলসকে গ্রেফতারের সময় পুলিশ কী ধরনের বর্বরতা চালিয়েছিল তার একটি বডি ক্যাম ফুটেজ ভাইরাল হওয়ার পর দেশটিতে দারুণ চাঞ্চল্য তৈরি হয়েছে। সূত্র : বিবিসি।

প্রসঙ্গত, গত ৭ জানুয়ারি পাঁচ পুলিশ সদস্যের নির্যাতনের শিকার হন নিকোলস। পুলিশ সদস্যদের মাধ্যমে গ্রেফতারের তিন দিন পর মারা যান তিনি। এদিকে ভাইরাল হওয়া বডি ক্যাম ফুটেজে পুলিশের নির্যাতন ও নৃশংসতার ভয়াবহ চিত্র ফুটে উঠেছে। তিন মিনিটের ওই ফুটেজটিতে  দেখা যায়, নিকোলসকে রাস্তায় ফেলে বেদম মারধর করছেন পুলিশ সদস্যরা। এ সময় বারবার আকুতি জানালেও পুলিশ তা আমলে না নিয়ে ক্রমাগত তাকে নির্যাতন করতে থাকে। পুলিশের এমন বর্বরতায় হতবাক সাধারণ মানুষ। জানা গেছে, ২৯ বছর বয়সী নিকোলসকে ট্রাফিক আইন ভঙ্গের অভিযোগে আটক করে পুলিশ। কিছুক্ষণ কথা বলার পর ভয়ে তিনি দৌড় দিলে পুলিশ সদস্যরা তাকে আটক করে পৈশাচিক নির্যাতন চালান। তার মুখে একাধিক লাথি, ঘুষি মারেন তারা। এ ঘটনায় মেমফিস পুলিশের পক্ষ থেকে চারটি ভিডিও প্রকাশ করা হয়। প্রথম ভিডিওতে দেখা যায়, পুলিশ নিকোলসকে গাড়ি থেকে বের করে মাটিতে শুয়ে পড়তে বলছে। এ সময় নিকোলস বলেন, ‘আমি কিছু করিনি।’ তখনই এক অফিসার গালি দিয়ে বলেন, ‘মাটিতে শুয়ে পড়।’ আরেকজন নিকোলসকে টেজার দিয়ে ইলেকট্রিক শক দিতে বলেন। এ ছাড়া আরেক পুলিশ সদস্য এ সময় হাত ভেঙে দেওয়ার আগে তার হাত পেছনে রাখতে বলেন। পুলিশের এমন আচরণে ভয় পেয়ে যান নিকোলস। তখন তিনি বলেন, ‘আপনারা এখন অনেক বাড়াবাড়ি করছেন। আমি বাড়িতে যাওয়ার চেষ্টা করছি।’ সে সময় নিকোলসকে ইলেকট্রিক শক দেওয়া হলে তিনি দৌড় দেন। ভিডিওতে দেখা যায়, নিকোলস উঠে পালাতে গেলে অফিসাররা তাকে টেজার গান মারেন এবং পাকড়াও করেন। তারপর সবাই মিলে তাকে লাথি, কিল, ঘুষি মারতে থাকেন। এমনকি একজনকে রড দিয়েও পিটাতে দেখা গেছে। নির্যাতনের সময় মা মা বলে আর্তনাত করছিলেন নিকোলস। চিৎকার-আর্তনাতের পরও তার ওপর দীর্ঘ সময় চলে নির্যাতন।

এ ভিডিও প্রকাশের পর বইছে সমালোচনার ঝড়। এরই মধ্যে ভয়াবহ ওই নির্যাতন ও হত্যাকান্ডের প্রতিবাদে মেমফিস, নিউইয়র্কসহ বেশ কয়েকটি শহরে বিক্ষোভ করেছে সাধারণ মানুষ। এদিকে ভিডিও দেখার পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনও অত্যন্ত ব্যথিত হয়েছেন। ভিডিও ফুটেজ পর্যালোচনা করার পর গত বৃহস্পতিবার টেনেসি ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের পরিচালক ডেভিড রাউশ বলেছেন, ‘যা দেখেছি, তাতে আমি অসুস্থ হয়ে পড়েছি।’ পুলিশের ওই সময়ের আচরণকে একেবারে ভয়ংকর আখ্যায়িত করেছেন তিনি।

নিকোলসের মৃত্যুর ঘটনায় পুলিশের পাঁচ সাবেক কর্মকর্তাকে অভিযুক্ত করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের একটি আদালত। তাদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। এ ছাড়া একাধিক নীতি লঙ্ঘনের অভিযোগে তাদের পুলিশ বাহিনী থেকেও বরখাস্ত করা হয়েছে। সাবেক পাঁচ পুলিশ কর্মকর্তা হলেন তাদারিয়াস বেন, ডেমেট্রিয়াস হ্যালি, ডেসমন্ড মিলস জুনিয়র, এমিট মার্টিন তৃতীয় ও জাস্টিন স্মিথ। তারা সবাই কারা হেফাজতে। এ পাঁচ পুলিশ কর্মকর্তা গত ছয় বছরের মধ্যে মেমফিস পুলিশ বিভাগে যোগদান করেছিলেন। এদিকে নিহতের মা বলেছেন, তাদের ছেলে যে পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে প্রাণ হারিয়েছে, এ অবস্থায় কারও পড়া উচিত নয়। তিনি আরও বলেছেন, যে পাঁচ সাবেক পুলিশ সদস্য তার ছেলের মৃত্যুর জন্য অভিযুক্ত, তারা নিকোলসের পরিবারের অপূরণীয় ক্ষতি করেছেন।

সর্বশেষ খবর