বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, সরকার একটি নতজানু ও ব্যর্থ জাতি তৈরির জন্য পরিকল্পিতভাবে কাজ করে যাচ্ছে। তারা আমাদের শেকড়ে টান দিয়েছে। ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে ব্যর্থ করতে শিক্ষাব্যবস্থায় হাত দিয়েছে। কেউ কিন্তু এর কোনো প্রতিবাদ করছে না।
তিনি গতকাল দুপুরে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) মিলনায়তনে এক আলোচনা সভায় বক্তৃতা করছিলেন। কেন্দ্রীয় বিএনপির উদ্যোগে এবং ইউনিভার্সিটি টিচার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ইউট্যাব) সহযোগিতায় এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। ‘অপরিণামদর্শী কারিকুলাম ও মানহীন পাঠ্যপুস্তক: দেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি ধ্বংসের নীলনকশা’ শীর্ষক এ সভা ইউট্যাবের প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ড. এ বি এম ওবায়দুল ইসলামের সভাপতিত্ব এবং মহাসচিব অধ্যাপক ড. মোর্শেদ হাসান খান ও হেলেন জেরিন খান পরিচালনা করেন। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. মো. সিরাজুল ইসলাম ও অধ্যাপক ড. শাহ শামীম আহমেদ। তাঁরা ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির বিভিন্ন পাঠ্যবইয়ের কার্বন ডাইঅক্সাইড, মানুষের উৎপত্তি নিয়ে বিতর্কিত তত্ত্বসহ বেশ কিছু ভুল এবং অসত্য তথ্য তুলে ধরেন। এ ছাড়া অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন পেশাজীবী পরিষদের আহ্বায়ক অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, অধ্যাপক ড. তাজমেরী এস ইসলাম, অধ্যাপক ড. নূরুল আমিন বেপারী, অধ্যাপক ড. আবদুল করিম, অধ্যাপক লুৎফর রহমান, গোলাম হাফিজ কেনেডি, অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ছিদ্দিকুর রহমান খান, অধ্যাপক মো. আল আমিন, অধ্যাপক ড. শামসুল আলম সেলিম, জেডআরএফের প্রকৌশলী মাহবুব আলমসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্ধশতাধিক শিক্ষক।
মির্জা ফখরুল বলেন, আমাদের তো আলাদা সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য এবং পরিচয় আছে। কেন সত্যকে সত্য ও মিথ্যাকে মিথ্যা বলতে ভয়? আজকে শিশুদের ভ্রান্ত ধারণা ও বিকৃত ইতিহাস শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে। আজকে আমাদের পরিচয় ভুলিয়ে দিতে চায়। এর বিরুদ্ধে আমরা রুখে দাঁড়াতে পারছি না কেন? বাইরে থেকে কেউ স্যাংশন দিয়ে কিছু করে দেবে না। নিজেদেরই ঘুরে দাঁড়াতে হবে। জেগে উঠতে হবে। ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে রক্ষা করতে হবে। তিনি বলেন, সরকার আমাদের খোলনলচে পাল্টে দিতে চায়। যার প্রমাণ এ পাঠ্যপুস্তকে ইতিহাস বিকৃতি ও ভুল তথ্য সংযোজন। প্রাথমিক বিদ্যালয় হলো শিক্ষার মূল। দুর্ভাগ্যবশত এখনো আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে। যদিও পাকিস্তান আমলেও এ ধরনের পরীক্ষা ও বিভিন্ন শিক্ষা কমিশন গঠন করা হয়েছিল। শুধু বারবার পরীক্ষা ও শিক্ষানীতি হচ্ছে। এখনো সেটা চলছে। আজকে পাঠ্যপুস্তকে যারা কারিকুলাম তৈরি করে, কেউ কিন্তু ভাবে না যে ছেলেমেয়েরা কী শিখছে। বিএনপি মহাসচিব বলেন, সরকার যা খুশি তা-ই করছে। দিনকে রাত আর রাতকে দিন বলছে। মুরগির ডিমকে অশ্বডিম্ব বলছে। আমরা যেন কেউ বেঁচে নেই। ঘা দিয়েও বাঁচানো যাচ্ছে না। আমাদের তো জেগে উঠতেই হবে। আমাদের স্বকীয়তা ও ইতিহাস-ঐতিহ্য রক্ষার জন্য জেগে উঠতেই হবে। ভুলে ভরা পাঠ্যবই অবিলম্বে বাতিল করতে হবে।
আন্দোলন নস্যাৎ করতে পাল্টা কর্মসূচি দিচ্ছে আওয়ামী লীগ : বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, দেশে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য যে আন্দোলন চলমান রয়েছে তাকে নস্যাৎ করার জন্য তারা (আওয়ামী লীগ) পাল্টা কর্মসূচি দিচ্ছে। এ সরকার অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে আমাদের গণতন্ত্র ধ্বংস করে দিয়েছে। আমরা যখনই কর্মসূচি দিচ্ছি, তখন একই সময় তারা পাল্টা কর্মসূচি দিচ্ছে। তারা যে ভাষা ব্যবহার করছে সেটা সম্পূর্ণভাবে সন্ত্রাস করছে। রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় এক যৌথ সভা শেষে তিনি এসব কথা বলেন। আগামীকাল বিভাগীয় সমাবেশ সফল করার লক্ষ্যে এ যৌথ সভার আয়োজন করা হয়।