শুক্রবার, ৯ জুন, ২০২৩ ০০:০০ টা

পাহাড়ে বিদেশি আম

মো. জহুরুল আলম, খাগড়াছড়ি

পাহাড়ে বিদেশি আম

পাহাড়ের মাটিতে বিদেশি প্রজাতির আম চাষে ঝুঁকছে কৃষক। পাহাড়ের আবহাওয়া উপযোগী ও মাটির গুণের কারণে বিদেশি আম চাষ করে সফল কৃষক। দেশি আমের তুলনায় পাঁচ-ছয় গুণ বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে বিদেশি আম।

খাগড়াছড়ি সদর উপজেলার ভূয়াছড়ি এলাকায় স্বল্প উঁচু ছোট টিলাভূমিতে প্রায় ৪২ প্রজাতির আমের চাষ করেছেন কৃষক মংশিতু চৌধুরী। আমেরিকান পামলার, রেড আইভেরি, রেড এম্পেরর, ব্যানানা ম্যাঙ্গো, কার্টিমন, কিউজাই, রেড লেডি, আপেল ম্যাঙ্গো, মিয়াজাকি বা সূর্যডিম কেসিংটন প্রাইড, আরটুইটুসহ বিভিন্ন প্রজাতির বিদেশি আমের আবাদ করেছেন তিনি। প্রচলিত দেশি আমের চেয়ে কয়েক গুণ বেশি দামে বিক্রি হয় বিদেশি এসব আম। সরেজমিনে তার বাগানে গিয়ে দেখা যায়, থোকায় থোকায় ঝুলছে বিদেশি রঙিন আম। মংশিতু চৌধুরী বলেন, ‘আমি ২০০৬ সালে সরকারি চাকরিতে যোগদান করেছি।

চাকরির পাশাপাশি নিজেদের জমিতে বাগান গড়ে তুলেছি। বাগানের পরিসর বাড়ার পর চাকরি ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিই। গত বছরের অক্টোবরে সরকারি চাকরি ছেড়ে দিয়েছি। বাগানে সময় দিচ্ছি।’ সফল এই চাষি বলেন, ‘আম্রপালি, বারি ৪সহ অন্যান্য দেশি আমের ফলন ভালো। কেজি বিক্রি হয় ৩০ থেকে ৫০ টাকায়। অন্যদিকে বিদেশি রেড ম্যাঙ্গোর দাম কয়েক গুণ বেশি। এর ফলে বিদেশি আমের আবাদ বাড়াতে কাজ করছি। সফলও হয়েছি। চলতি মৌসুমে অন্তত ১৬ লাখ টাকার বিদেশি আম বিক্রির আশা করছি। প্রতি কেজি মিয়াজাকি আম ৯০০, রেড আইভেরি ৭০০, রেড এম্পেরর বা চাকাপাত ৯০০, অস্ট্রেলিয়ান আরটুইটু ৬০০ ও হ্যানিভিউর ৬০০ টাকায় বিক্রি হয়।

’ দাম বেশি হওয়ায় বিদেশি আম স্থানীয় বাজারে বিক্রি হয় না। অনলাইনের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বিক্রি হয়। এই কৃষক আরও বলেন, ‘বিদেশি আমের চারা ইতালিপ্রবাসী এক স্বজনের মাধ্যমে সংগ্রহ করেছি। তবে এটি চাষাবাদে বাড়তি কোনো যত্ন নিতে হয় না। দেশি আমের মতো চাষাবাদ করা যায়।’

মংশিতুর বাগানে কর্মসংস্থান হয়েছে সাত শ্রমিকের। দৈনিক মজুরি ভিত্তিতে কাজ করে মাসে প্রত্যেকের আয় ১৫ হাজার টাকা। এ টাকায় সংসারের খরচ জোগান তারা।

বিদেশি জাতের আমের চাষাবাদের সম্ভাবনা নিয়ে গবেষণা করছে খাগড়াছড়ি পাহাড়ি কৃষি গবেষণা কেন্দ্র। বিভিন্ন জাতের আমের ফলন, মিষ্টতাসহ অন্যান্য বিষয় নিয়ে গবেষণা করছে তারা। পাহাড়ের উপযোগী বিদেশি জাতের আম কৃষকের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়ার কথা বলছেন খাগড়াছড়ি পাহাড়ি কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আলতাফ হোসেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে বেশ কিছু রঙিন জাতের বিদেশি আম এসেছে। সেসব জাত ওইসব দেশে বেশ জনপ্রিয় এবং ফলনও বেশি। কৌতূহলী কৃষক এসব বিদেশি জাতের আমের চাষাবাদ করেছে এবং ভালো ফলনও পাচ্ছে। বৈচিত্র্যময় এসব বিদেশি জাত নিয়ে আমরা গবেষণা করছি।’

চলতি মৌসুমে খাগড়াছড়িতে ৩ হাজার ৭০০ হেক্টরের বেশি জমিতে আমের আবাদ হয়েছে। তবে এর মধ্যে কেবল ৫ হেক্টর জমিতে বিদেশি আমের চাষাবাদ হয়েছে। খাগড়াছড়ি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক কিশোর কুমার মজুমদার বলেন ,‘মূলত ফলন বেশি হওয়ায় কৃষক বারি উদ্ভাবিত আম্রপালি, রাঙ্গুয়াই, বারি ফোর আমের উৎপাদন বেশি করে। তবে দাম বেশি হওয়ায় সচেতন কৃষক বিদেশি আম উৎপাদন করে। তিনি বলেন, ‘বিদেশি জাত ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য আমরা ব্যানানা ম্যাঙ্গোর আড়াই হাজার ও কাটিমন আমের ৩ হাজার চারা করেছি। কৃষক এখান থেকে চারা সংগ্রহ করতে পারবে। সামনে এর পরিসর আরও বাড়াব। আর বিদেশি আম চাষি মংশিতু চৌধুরীকে আমরা রপ্তানিযোগ্য আম উৎপাদনকারী কৃষকের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর