যুক্তরাষ্ট্রের ট্রাম্প প্রশাসনের প্রস্তাবিত নতুন শুল্কনীতি নিয়ে আতঙ্ক নয়, বরং কৌশলগত প্রস্তুতি জরুরি বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ী নেতারা। যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ ব্যবসায়ীরাও এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। বাজার নিজেই এ ধরনের অস্বাভাবিক নীতিকে দীর্ঘ মেয়াদে টিকতে দেবে না। গতকাল ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) মিলনায়তনে যৌথভাবে আয়োজিত এক সেমিনারে তাঁরা এসব কথা বলেন।
‘যুক্তরাষ্ট্রের পারস্পরিক শুল্ক এবং বাংলাদেশের জন্য এগিয়ে যাওয়ার পথ’ শীর্ষক এই সেমিনারের আয়োজন করে ডিসিসিআই ও বিজনেস ইনিশিয়েটিভ লিডিং ডেভেলপমেন্ট (বিল্ড)।
সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। ‘দ্যা টক্সিক ট্যারিফ থেরাপি’ শীর্ষক আলোচনায় তিনি যুক্তরাষ্ট্রের নতুন শুল্কনীতির প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের সম্ভাব্য চ্যালেঞ্জ ও করণীয় তুলে ধরেন।
ড. দেবপ্রিয় বলেন, যুক্তরাষ্ট্র মনে করছে সস্তা আমদানি ও সীমিত রপ্তানির সুযোগের ফলে দেশটির বাণিজ্য ঘাটতি বেড়েছে, বিনিয়োগ কমেছে এবং কর্মসংস্থান কমেছে। তাই তারা পারস্পরিক শুল্ক বসিয়ে আমদানি ব্যয় বাড়িয়ে অভ্যন্তরীণ উৎপাদন ও চাকরি বাড়াতে চায়।
তিনি বলেন, বাস্তবতা হলো, যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কনীতি বৈশ্বিক অর্থনীতির জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। এতে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে ভারসাম্য নষ্ট হবে, সরবরাহব্যবস্থা বাধাগ্রস্ত হবে এবং বিশেষ করে স্বল্পোন্নত দেশগুলো মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। যুক্তরাষ্ট্রের এ শুল্কারোপে ভয় নেই। বাংলাদেশকে এখনই প্রস্তুত হতে হবে। হঠাৎ প্রতিক্রিয়া নয়, বরং পরিকল্পিত কৌশল দরকার। প্রবন্ধ নিয়ে আলোচনা করেন পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান মাশরুর রিয়াজ, ডিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি শামস মাহমুদ, প্রকৌশলী রাজিব হায়দার ও বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক মেজবাউল হক।
সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মাহবুবুর রহমান। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্স (আইসিসি) বাংলাদেশের সভাপতি মাহবুবুর রহমান। সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন ডিসিসিআই সভাপতি তাসকিন আহমেদ।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘ট্রাম্প প্রশাসন যেদিন শুল্কারোপ করেছিল তার দ্বিতীয় দিনই আমরা পজিশন ঠিক করে নিয়েছিলাম। আমাদের পজিশন ছিল পাল্টা আক্রমণ না করে কৌশল অবলম্বন করা। আমি মনে করি আমাদের পজিশন ঠিক আছে। যুক্তরাষ্ট্র থেকে দীর্ঘ মেয়াদে এলএনজি আমদানির চুক্তি করা হয়েছে, যার মাধ্যমে দুই দেশের মধ্যকার এক বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য বাড়বে।’
আইসিসি বাংলাদেশের সভাপতি মাহবুবুর রহমান বলেন, বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার একজন সক্রিয় সদস্য হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র যেভাবে পারস্পরিক শুল্ক আরোপ করেছে, তা কাম্য নয়। বর্তমান সরকারের সঙ্গে বেসরকারি খাতের সম্পৃক্তকরণ আশানুরূপ নয়। তাই সরকারের সঙ্গে উদ্যোক্তাদের সম্পর্ক আরও জোরালো হতে হবে।
মাশরুর রিয়াজ বলেন, ‘ট্রাম্পের শুল্কনীতির বিপরীতে বাংলাদেশ সরকার বেশ কিছু ভালো পদক্ষেপ নিয়েছে। তবে সামনে এগোনোর জন্য কী কী দুর্বলতা আছে আমাদের সেটাও চিহ্নিত করতে হবে। আমরা যতই বলি, যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি এড়িয়ে চলতে পারব না।’
ডিসিসিআই সভাপতি তাসকীন আহমেদ বলেন, ক্রমবর্ধমান ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা এবং বৈশ্বিক বাণিজ্যের গতিশীলতার পরিবর্তনের সন্ধিক্ষণে রয়েছে বাংলাদেশ। স্বল্প সময়ের মধ্যে প্রস্তাবিত শুল্ক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য সরকারি-বেসরকারি খাতের সম্পৃক্তকরণের মাধ্যমে একটি কৌশলগত উদ্যোগ গ্রহণ অপরিহার্য।
বিল্ড চেয়ারপারসন আবুল কাসেম খান বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে রপ্তানি পণ্যের বহুমুখীকরণে পর্যাপ্ত নীতি সহায়তা নিশ্চিতকরণ করা দরকার। আসিয়ানের সদস্যভুক্তির জন্য বাংলাদেশের সক্ষমতা বাড়ানোর ওপরও তিনি গুরুত্ব আরোপ করেন।