রাজধানীর মিরপুর সাড়ে এগারো বাসস্ট্যান্ডের প্রধান সড়কের পাশেই ছয় তলা ভবনের নিচ তলায় স্বপ্ন সুপারশপের বিশাল আউটলেট। আর অবশিষ্ট পাঁচটি তলায় কসমো স্কুল অ্যান্ড কলেজের মিরপুর শাখার কার্যক্রম পরিচালিত হয়। গতকাল বেলা ১টার দিকে স্কুলটির দ্বিতীয় শিফটের অ্যাসেম্বলি শেষে শিক্ষার্থীদের ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি চলছিল। হঠাৎ স্কুলটির শিক্ষকরা তাদের শিক্ষার্থীদের স্কুলের বাইরে দ্রুত চলে যেতে বলেন। শিক্ষার্থীরা এরই মধ্যে শুনতে পায় যে, স্কুলে আগুন লেগেছে, জেনারেটর থেকে কালো ধোঁয়া বের হচ্ছে। আতঙ্কিত হয়ে ছোট বাচ্চারা পড়িমড়ি করে স্কুল থেকে বের হয়ে সামনের সিটি ক্লাবের মাঠে জড়ো হয়। খবর পেয়ে ছুটে আসেন শিক্ষার্থীদের স্বজনরাও। স্কুল চলাকালীন ২৫০ শিক্ষার্থী ও শিক্ষকসহ মোট ৩০০ জন স্কুলটিতে অবস্থান করছিলেন। এরই মধ্যে ভবনের নিচ তলায় জেনারেটর থেকে হঠাৎ অগ্নিদুর্ঘটনা ঘটে। পল্লবী ফায়ার সার্ভিস স্টেশন কাছে থাকায় দ্রুত তারা উপস্থিত হয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন। এতে বিশাল আকৃতির দুটি জেনারেটর বিস্ফোরিত হয়নি। তবে এগুলো বিস্ফোরিত হলে যে ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটত তা কল্পনার বাইরে। বর্তমানে বিদ্যুৎ বিতরণ সংস্থা ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেড (ডেসকো) কর্তৃপক্ষ স্কুল ভবনটির বৈদ্যুতিক সংযোগ বন্ধ রেখেছে। পরবর্তীতে সংস্কার শেষে এবং ভবন ব্যবহারের উপযোগী হলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমতি সাপেক্ষে এ সংযোগ আবার দেওয়া হবে। ভবনটি ব্যবহার উপযোগী হলে স্কুল কার্যক্রম শুরু করা যাবে বলে স্কুল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।
গতকাল দুর্ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, কসমো স্কুলের সামনে উৎসুক জনতার ভিড়। আগুন নিয়ন্ত্রণে আসার পর নিচ তলার জেনারেটর রুমে দেখা যায় সেখানে দুটো বড় জেনারেটর। তার পাশে দেয়ালের ইলেকট্রিক বোর্ড, সার্কিট ব্রেকার ও তারগুলো পুড়ে কালো হয়ে গেছে। এ জেনারেটর দুটির একটি স্বপ্নের। আরেকটি স্কুল কর্তৃপক্ষের। স্বপ্নের ইলেকট্রিক বোর্ড থেকে শর্টসার্কিট হয়েই আগুনের সূত্রপাত হয় বলে জানা যায়। এরই মধ্যে আগুনে স্কুলের বেশ কিছু সামগ্রী পুড়ে ছাই হয়েছে। ভবন মালিক স্বপ্ন ও কসমো স্কুল কর্তৃপক্ষকে একই জায়গায় জেনারেটর রাখার ব্যবস্থা করে দেওয়ায় ভবনের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বিশেষ করে একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যেখানে শিশুরা ক্লাস করে সেখানে বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট থেকে যে কোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনার ঝুঁকি তৈরি হয়। লক্ষ্য করে দেখা যায়, ছয় তলা ভবনটিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হলেও সেখানে প্রবেশ ও বের হওয়ার পথ মাত্র একটি।
কথা হলে স্কুলের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীর অভিভাবক জুলকার নাইন জানান, হঠাৎ করে শিক্ষকরা স্কুল থেকে শিক্ষার্থীদের নিয়ে আসার জন্য মোবাইলে মেসেজ দেন। স্কুলে গিয়ে দেখা যায়, জেনারেটর থেকে কালো ধোঁয়া বের হচ্ছে। নিচতলায় আগুন লেগেছে। তখন স্কুলের শিক্ষার্থীদের সামনের মাঠে নিয়ে যাওয়া হয়। তিনি বলেন, একটি স্কুলে অন্য একটি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের জেনারেটর রাখা এবং তা থেকে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। মাইলস্টোন স্কুলের মতো ভয়াবহ কোনো দুর্ঘটনা এখানে ঘটতে পারত। এ ঘটনায় ভবন মালিক, স্বপ্ন এবং স্কুল কর্তৃপক্ষকে জবাবদিহি করতে হবে।
কসমো স্কুলের অধ্যক্ষ এস এম মাহবুবুল আলম বলেন, স্বপ্নের জেনারেটর থেকে হঠাৎ করে আগুন লেগে গিয়েছিল। আগুন বেশি ছড়ায়নি। আগুন থেকে ধোঁয়া তৈরির কারণে সবাই আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। নিচ তলায় জেনারেটর রাখার স্থানটি পুড়ে গেছে।
স্বপ্নের হেড অব অ্যাডমিনিস্ট্রেশন মাসুম বিল্লাহ বলেন, আমরা দেখেছি জেনারেটর রুমে স্কুলের প্রচুর বই-খাতা, এগুলোর এখানে থাকার কথা নয়। আগুনের সূত্রপাত কীভাবে হয়েছে তা আমাদের প্রকৌশলীরা দেখছেন। পল্লবী ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সিনিয়র স্টেশন অফিসার রায়হানুল আশরাফ বলেন, আধা ঘণ্টার চেষ্টায় আমাদের দুটো ইউনিট আগুন নেভাতে সক্ষম হয়। ভবনটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছাড়াও অন্য ব্যবসায়িক কাজে ব্যবহার হয়। স্কুল ভবনে বিপজ্জনকভাবে কেন একাধিক জেনারেটর রাখা হয়েছে আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখছি।