বুধবার, ২৫ মে, ২০২২ ০০:০০ টা

মেগা প্রকল্পে সিমেন্ট সরবরাহ করছে বসুন্ধরা গ্রুপ

পদ্মা সেতু, পদ্মা সেতুর নদীশাসন, পদ্মা সেতুর অ্যাপ্রোচ রোড, পদ্মা রেল প্রকল্প, ঢাকা মেট্রো রেল, ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, মাতারবাড়ী তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র, পায়রা সেতু, রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র ইত্যাদি

সাইফ ইমন

মেগা প্রকল্পে সিমেন্ট সরবরাহ করছে বসুন্ধরা গ্রুপ

দীর্ঘদিন থেকেই দেশের মেগা প্রকল্পে ধারাবাহিকভাবে মানসম্মত সিমেন্ট সরবরাহ করে আসছে বসুন্ধরা গ্রুপ। নিজেদের সক্ষমতার প্রমাণ হিসেবে একের পর এক অবকাঠমোতে ব্যবহৃত হচ্ছে এই সিমেন্ট। একসময় দেশের সিমেন্টের চাহিদা পূরণে পুরোপুরি আমদানির ওপর নির্ভর করতে হতো। সেই অবস্থা এখন আর নেই। দেশীয় সিমেন্টে নীরব বিপ্লব ঘটেছে এই শিল্পে।

বসুন্ধরা গ্রুপের সিমেন্ট সেক্টরের চিফ মার্কেটিং অফিসার খন্দকার কিংশুক হোসেন বলেন, ‘বাংলাদেশের শুরুর দিকে সিমেন্ট আমদানি করা হতো। সিলেটের ছাতকে খুব সীমিত উৎপাদন ক্ষমতার একটি সরকারি প্রতিষ্ঠান ছিল। এরপর বিদেশি কোম্পানিগুলো বাংলাদেশে ইন্ডাস্ট্রি স্থাপন করে। প্রাইভেট সেক্টরে বসুন্ধরা গ্রুপ সর্বপ্রথম দেশে মেঘনা সিমেন্ট মিলস প্রতিষ্ঠা করে কিং ব্র্যান্ড নামে সিমেন্ট সরবরাহ শুরু করে। এরপরই ধীরে ধীরে একটা রেভ্যুলেশন ঘটে দেশের সিমেন্ট শিল্পে। সিমেন্ট আমদানি করা বন্ধ হয়ে যায়। বসুন্ধরার পাশাপাশি অন্যান্য প্রতিষ্ঠানও এই সেক্টরে কাজ শুরু করে। বর্তমানে দেশীয় প্রতিষ্ঠান সব মিলিয়ে প্রায় ৪০টি তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করছে। একসময় বিদেশি ব্র্যান্ডগুলো প্রাধান্য বিস্তার করেছিল। একই কোয়ালিটিসম্পন্ন সিমেন্ট যখন দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলো উৎপাদনে সক্ষমতা অর্জন করে তখন বিদেশি প্রতিষ্ঠানের ওপর নির্ভরতা কমতে থাকে দেশের মানুষের। আমরা ব্যাপক আকারে ক্যাম্পেইন করে দেশের মানুষের আস্থা অর্জনে চেষ্টা করে যাই। কনজ্যুমারদের এভাবেই দেশে উৎপাদিত সিমেন্টের ওপর নির্ভরতা বাড়ে। মেট্রো রেল শতভাগ বসুন্ধরা সিমেন্ট দিয়ে তৈরি। এ ছাড়াও আমরা মূল পদ্মা সেতু, পদ্মা সেতুর নদীশাসন, পদ্মা সেতুর অ্যাপ্রোচ রোড, পদ্মা রেল প্রকল্প, ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, মাতারবাড়ী তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র, পায়রা সেতু, বঙ্গবন্ধু রেলসেতু, রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রসহ বিভিন্ন মেগা প্রকল্পে সফলভাবে সিমেন্ট সরবরাহ করেছি। আমাদের কোয়ালিটি ও সার্ভিসে সন্তুষ্ট হয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা আমাদের ব্র্যান্ডকে বেছে নিয়েছেন। বসুন্ধরা সিমেন্টকে কখনো একক ব্র্যান্ড কখনো প্রধান অংশীদার করেছেন। সেরা কাঁচামাল ও আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে সঠিক সময়ে মানসম্মত সিমেন্ট সরবরাহে সক্ষমতার কারণেই এটি সম্ভব হয়েছে।’

মেগা প্রকল্পে বিশেষ বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন বিভিন্ন ধরনের সিমেন্ট ব্যবহার হয় বলে জানান খন্দকার কিংশুক হোসেন। তিনি বলেন, ‘পদ্মা সেতু মেট্রো রেলের মতো বড় বড় প্রকল্পে ধারাবাহিকভাবে মান অক্ষুণ্ন রাখতে হয়। বসুন্ধরা পেরেছে বলেই কর্তৃপক্ষ সবসময় বসুন্ধরার ওপর নির্ভর করেছে। যে প্রকল্পে যে মানের সিমেন্টের চাহিদা আছে, সেই প্রকল্পে সেই মানসম্পন্ন সিমেন্ট সরবরাহ করা হয়। প্রকল্পগুলোর প্রকৌশলীরা সিমেন্টের প্রতিটি চালান পরীক্ষা করেন। নিম্নমানের সিমেন্ট সরবরাহ করার কোনো সুযোগ নেই। সঠিক মান ঠিক থাকে বলেই তারা আমাদের সিমেন্ট ব্যবহার করেন। সব ধরনের সিমেন্ট তৈরির সুবিধা বসুন্ধরা গ্রুপের প্লান্টে আছে। যে কোনো প্রকল্পের চাহিদা অনুযায়ী সিমেন্ট তৈরিতে সক্ষম।

সিমেন্ট শিল্পে কাঁচামাল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই ক্ষেত্রে উন্নতমানের কাঁচামাল আমদানি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘সিমেন্টের সমস্ত কাঁচামাল আমদানি করা হয়। ক্লিংকার, ফ্লাই অ্যাশ, স্ল্যাগ, লাইম স্টোন, জিপসাম সবই আমদানি করা হয়ে থাকে।’

সিমেন্ট শিল্পে কর্মসংস্থান বাড়ছে প্রতিনিয়তই। এ প্রসঙ্গে খন্দকার কিংশুক হোসেন বলেন, ‘গড়ে সিমেন্টে ইন্ডাস্ট্রিয়াল গ্রোথ বছরে ১০ থেকে ১২ শতাংশ। তাই এখানে সরাসরি বা প্রত্যক্ষভাবে প্রচুর জনবল দরকার হচ্ছে। এই শিল্পে প্রচুর কর্মসংস্থানও সৃষ্টি হচ্ছে। এখন সিমেন্ট রপ্তানিতেও দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। ২০২১ সালের জুলাই থেকে এই বছর জানুয়ারি পর্যন্ত রপ্তানি হয়েছে ৪.৬৬ মিলিয়ন ডলার মূল্যের সিমেন্ট। অন্যান্য দেশের তুলনায় এখনো অনেক কম। সুতরাং এ সেক্টরে আরও প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে। এ ক্ষেত্রে সরকারের করনীতি পরিবর্তন হলে এ শিল্প আরও এগিয়ে যাবে।  বর্তমানে বাংলাদেশে মাথাপিছু সিমেন্টের ব্যবহার ২৩০ কেজি।’ 

সর্বশেষ খবর