রাজনীতি শুধু নিজেদের স্বার্থে না হয়ে জনগণের স্বার্থে হওয়া উচিৎ তার আরও একটি উৎকৃষ্ট প্রমাণ দিলেন কানাডার রাজনীতিবিদরা। জনগণের সুবিধার্থে কানাডার ‘হাউজ অব কমন্সে’ সরকারি এবং বিরোধীদল দলমত নির্বিশেষে ‘গ্রোসারি রিবেট বিল’ পাস করেছে। কানাডায় বসবাসরত লক্ষাধিক প্রবাসী বাঙালিও গ্রোসারি রিবেটের সুবিধা পাবেন।
বিশ্বজুড়ে আর্থিক সংকটের মধ্যে কানাডায় খাদ্যপণ্যের দাম প্রায় দ্বিগুণ বেড়েছে। জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়ায় হিমশিম খাচ্ছেন নাগরিকরা। দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতিতে দিশেহারা মধ্যবিত্ত এবং নিম্নআয়ের নাগরিকদের বিশেষ সুবিধা দিতে ফেডারেল বাজেটে লিবারেল সরকার গ্রোসারি রিবেটের ঘোষণা দিয়েছে- যা কানাডার সব দল মিলে প্রথম ধাপেই হাউজ অব কমন্সে পাস করিয়ে দিয়েছে। এখন সেটি সিনেটের বিবেচনার জন্য আছে। ধারণা করা হচ্ছে, সিনেটেও প্রথম ধাপেই এটি পাস হয়ে যাবে এবং শিগগিরই আইনে পরিণত হবে।
গ্রোসারি রিবেট আইনের আওতায় মধ্যম এবং নিম্নমধ্যম আয়ের দুই সন্তানের একটি পরিবারের জন্য এককালীন ৪৬৭ ডলার, সিনিয়র সিটিজেন জন প্রতি ২২৫ ডলার এবং সিঙ্গেল ব্যক্তি ২৩৪ ডলার সরকারের কাছ থেকে এককালীন পাবেন। ১১ মিলিয়ন নাগরিক এই সুবিধা পাবেন যার জন্য সরকারের বরাদ্দ রাখতে হয়েছে ২.৫ বিলিয়ন ডলার।
হাউস অব কমন্সে বিরোধীদলীয় নেতা কনজারভেটিভ পার্টির প্রধান পিয়েরো পলিভার প্রথমে গ্রোসারি রিবেটের এই অর্থ নাগরিকদের জন্য পর্যাপ্ত নয় বললেও বিলটি পাসে তিনি ও তার দল একমত পোষণ করেছেন। ফলে সব দলের সম্মতি থাকায় কোনও কমিটির কাছে যাচাই-বাছাই ছাড়াই নাগরিকদের সুবিধার জন্য সরাসরি বিলটি পাস হয়।
কানাডার নতুন দেশ পত্রিকার প্রধান সম্পাদক শওগাত আলী সাগর বলেন, এটি জনগণের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, হোক তা সামান্য ৪৬৭ ডলার ফ্রি অর্থ। সে জায়গাটায় দাঁড়িয়ে কোনও রাজনৈতিক দল রাজনীতির জায়গায় না দাঁড়িয়ে জনগণের স্বার্থে জনগণের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন সেটিকে আমরা ইতিবাচক হিসেবে দেখছি। আমরা চাইব নাগরিকদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট যেকোনও বিষয়ে কানাডার রাজনীতিবিদরা ঠিক একইভাবে এগিয়ে আসবেন।
ক্যালগেরির মাউন্ট রয়্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. অনুপম দাস বলেন, এটি সাময়িকভাবে এককালীন কানাডিয়ানদের সুবিধা দিলেও দীর্ঘ মেয়াদে তেমন সুবিধা পাবে না।
ক্যালগেরির প্রবাসী রাসেল রুপক বলেন, এটি কানাডিয়ান সরকারের খুবই একটি ভালো উদ্যোগ। এটি মধ্য ও নিম্ন আয়ের কানাডিয়ানদের এককালীন সাহায্য করবে, বিশেষ করে খাদ্যে মূল্যবৃদ্ধির কারণে যারা সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত।
সরকারি তথ্য মতে, কানাডার নাগরিকদের বাৎসরিক গ্রোসারি ব্যয় ৪৫৫ ডলার বাড়লেও বাস্তবতা তার চেয়েও বেশি। অন্যদিকে রাজনীতিতে বিরোধিতা থাকলেও জনগণের স্বার্থে এ ধরনের সিদ্ধান্তের প্রতি সর্বদলীয় সমর্থন কানাডার রাজনীতিতে এক অভূতপূর্ব দৃষ্টান্ত, যা অন্যান্য দেশের জন্য উদাহরণ হতে পারে।
কানাডিয়ানরা বলছেন, পার্লামেন্টে বিলটি আইনে পরিণত হলে এককালীন সাশ্রয়ী হবেন তারা, যা দ্রব্যমূল্যর উর্ধগতির বাজারে বিরাট সহায়ক। অন্যদিকে বিলটি পাসে দু’ দলের ঐক্যমত নিঃসন্দেহে কানাডার রাজনীতিতে মাইলফলক হয়ে থাকবে।
বিডি প্রতিদিন/কালাম