সোমবার, ৬ মার্চ, ২০২৩ ০০:০০ টা

স্ত্রীর কবলে গুগল

কাজী সুলতানুল আরেফিন

স্ত্রীর কবলে গুগল

আধুনিক বিজ্ঞানের আশীর্বাদ ও অভিশাপ নিয়ে একসময় রচনা লিখেছিলাম। পরীক্ষার দুটো নম্বর বেশি পাওয়ার জন্য কত কিছুই যে শিখতে হয়েছিল। তখনো বুঝতে পারিনি এই বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি এক দিন আমার বেডরুমে এসে হাজির হবে। বিজ্ঞানের বিচিত্র সব আবিষ্কার এখন হাতের মুঠোয়। হাতের মুঠোয় থাকা মানে মোবাইল ফোনের কথা বলছিলাম। তাও নিজের মোবাইল ফোন না, স্ত্রীর মোবাইল ফোন। বিয়ের পর   মানুষের অনেক ধরনের পরিবর্তন হয়। যেমন- স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে বিতর্ক প্রতিযোগিতায় আমি ফার্স্ট হতাম। বিয়ের পর দেখা যাচ্ছে স্ত্রীর সঙ্গে তর্কে জেতা যায় না। আজকাল তার সঙ্গে সাধারণ কথায়ই  পেরে উঠা যাচ্ছে না! আমি কিছু বলার আগেই সে  সোজাসুজি জানিয়ে দেয়, ‘জ্ঞান দিবা না।’ মানে এ বিষয়ে তার সব জানা আছে। এমনকি মাঝে মধ্যে  উল্টো আমার ভুলও ধরিয়ে দিচ্ছে। নতুন কোনো প্রসঙ্গ উঠলেই বলে, ‘ওয়েট। বিষয়টা চেক করে জানাচ্ছি।’ তার জ্ঞানসমুদ্রে আমি হাবুডুবু খাচ্ছি বলা যায়। কিছুটা অবাকও লাগে। বিয়ের আগে যাকে বোকাসোকা ভেবেছিলাম সে এখন ‘জ্ঞানসমুদ্র’। কোথাকার পানি কোথায় গিয়ে গড়ায় সেটাই ধরতে পারছি না।

আমি তার এমন পরিবর্তনের রহস্য উন্মোচন করতে উদগ্রীব হয়ে গেলাম। গোপনে তার ওপর নজরদারি বাড়িয়ে দিলাম। গত রাতে ঘুমানোর আগে তাকে বললাম, ‘আচ্ছা বলত, কোন দেশ নামেই শুধু দেশ। সত্যিকারে কোনো দেশ না।’

সে ভীষণ ধাঁধায় পড়ে গেল। প্রশ্ন শুনে ভ্রু নাচিয়ে বলল, ‘সকালেই জানাচ্ছি’। স্ত্রীকে প্রশ্নের জালে আটকে রেখে আরামে চোখ বন্ধ করলাম। ঘুমিয়ে গিয়েছিলাম মনে হয়। হঠাৎ গভীর রাতে ফিসফিসানি কানে আসতেই ঘুম ছুটে গেল। কাঁথার নিচে দিয়ে উঁকি মেরে দেখলাম, আমার স্ত্রী মোবাইলে মুখ লাগিয়ে ফিসফিস করে জানতে চাইছে, ‘কোন দেশ নামেই শুধু দেশ। সত্যিকারে কোনো দেশ না।’

বুঝতে পারলাম, স্ত্রী আমার কারও কাছ থেকে গুগলকে ভয়েসের  মাধ্যমে প্রশ্ন করা শিখে গেছে!

কিছুক্ষণ পরই সে চেঁচিয়ে উঠল, ‘উত্তর পেয়ে গেছি- সন্দেশ, সন্দেশ!’ 

 

 

 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর