সোমবার, ১০ এপ্রিল, ২০২৩ ০০:০০ টা

গরমের খবর

ইকবাল খন্দকার

গরমের খবর

আইডিয়া ও ডায়ালগ : তানভীর আহমেদ ► কার্টুন : কাওছার মাহমুদ

আমার এক ভাবি বললেন, যে পরিমাণ গরম পড়েছে, তাতে অবলা প্রাণীদের জন্য মায়াই হচ্ছে। আহারে! বেচারারা যাবে কোথায়? মানুষ হলে না হয় এই বলে সাহায্য চাইত, আমাদের বাড়ি-ঘর পানিতে তলিয়ে গেছে। আমাদের থাকার জায়গা দেন। কিন্তু এরা তো কথা বলতে পারে না। এরা কীভাবে সাহায্য চাইবে? আমি ভাবির কথার উদ্দেশ্য ও তাৎপর্য বোঝার চেষ্টা করলাম। কিন্তু বুঝতে পারলাম না। ভাবি বললেন, খুবই সাধারণ ঘটনা। হঠাৎ করে এত বেশি গরম পড়েছে যে, সারা দিনই মাথা ঘামতে থাকে। এই অবস্থায় উকুনগুলো কোথায় যাবে? ঘামে মাথা তলিয়ে যাওয়ায় তাদের জন্য থাকার জায়গার সংকট দেখা দিল না? এবার আমি বললাম, এই সংকট নিরসনের কোনো রাস্তা আপাতত দেখা যাচ্ছে না। সবচেয়ে ভালো হয়, যতদিন গরম থাকবে এবং ঘামে মাথা ভেজা থাকবে, ততদিনের জন্য উকুনরা যদি একটু কষ্ট করে সাঁতার শিখে নেয়। পরিস্থিতি সামাল দিতে হবে না? আমার এক ছোটভাই বলল, যাক, গরমটা পড়েছে বলে পয়সাটা উসুল হলো। ধন্যবাদ হে গরম! আমি বললাম, তোর কথার আগামাথা তো কিছুই বুঝতে পারছি না। সারা দেশের মানুষ অস্থির গরমে। অথচ তুই গরমকে ধন্যবাদ দিচ্ছিস? আর এই যে বললি পয়সা উসুল হয়েছে? এটা কী? ছোটভাই বলল, ভাই, ম্যালা টাকা খরচ করে গত কয়েক মাস জিম করেছি। বডিও বানিয়েছি। কিন্তু সেই বানানো বডিটা পাবলিককে দেখাতে পারছিলাম না ঠিকঠাক গরম পড়ছিল না বলে। এখন গরম পড়েছে। তাই প্রায় সারা দিনই খালি গায়ে এলাকায় ঘুরে বেড়াচ্ছি। সবাই আমার বডি দেখছে। ছবিটবিও তুলছে। ভালো না? ভালো তো!

আমার এক বড়ভাই বললেন, অভাগা যেদিকে চায়, সাগর শুকিয়ে যায়। আমি কত বড় অভাগা একবার খেয়াল কর। যখন থেকে জিনিসপত্রের দাম বেড়ে গেল, আমি বাজারে যাওয়া কমিয়ে দিলাম। তোর ভাবি হাউকাউ করলেও ঘর থেকে বের হতাম না। বলা চলে ঘাপটি মেরে বসে থাকতাম। কিন্তু কপাল কী খারাপ দেখ, গরম গেল বেড়ে। সিদ্ধ হয়ে যাওয়ার মতো অবস্থা। এই অবস্থায় ঘরে কীভাবে ঘাপটি মেরে বসে থাকি? সবচেয়ে বেদনার বিষয় হচ্ছে, এসির রিমোট তোর ভাবির দখলে। সে বলে দিয়েছে, ঈদের শপিং করতে নিয়ে না গেলে নাকি দিনের বেলা দূরে থাক, রাতেও এসি ছাড়বে না। আমার এখন কী হবে? আমি বললাম, আপনাকে একটা সহজ বুদ্ধি দিই। আপনি ভাবিকে নিয়ে ঈদের শপিং করতেই চলে যান। ভাই তারস্বরে বললেন, কিন্তু আমি টাকা পাব কোথায়? আমি বললাম, টাকার কী দরকার? আপনি মার্কেটে ঢুকে খালি দরদাম করবেন। দোকানদাররা তো আর জানবে না আপনার কাছে টাকা নেই। ব্যস, যতক্ষণ দরদাম করলেন, ততক্ষণ তো এসিতেই থাকলেন। গরমটা অন্তত লাগল না। বড়ভাই বললেন, কিন্তু শেষ পর্যন্ত যখন দোকানদাররা বুঝে ফেলবে আমি খামোখা দরদাম করেছি, তখন তো আমাকে বেঁধে রাখবে। আমি বললাম, সমস্যা কী? এসি মার্কেটে বেঁধে রাখলেও তো আরাম। বড়ভাই এবার প্রায় চিৎকার করে উঠে বললেন, না না না, রাতের বেলা এসি চলে না। মার্কেট বন্ধ করার আগেই তারা এসি বন্ধ করে দেয়।

আমার এক প্রতিবেশী বললেন, লজ্জার কথা কী বলব ভাই। গরম লাগলেও আমি ফ্যান ততটা স্পিডে চালাই না। আমি বললাম, কেন? প্রতিবেশী বললেন, না, মানে ফ্যানের অতিরিক্ত স্পিডের কারণে বারবার আমার মাথার আলগা চুল উড়ে যাচ্ছে। আমার এক বন্ধু বলল, এই গরমে সবচেয়ে শান্তিতে আছে শাহরুখ খান। আমি বললাম, কেন? বন্ধু বলল, তার প্রচুর ‘ফ্যান’ তো!

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর