শুক্রবার, ২৫ নভেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা
ইমদাদুল হক মিলন এর বড় গল্প

পাতালপুরি

শেষ পর্ব

পাতালপুরি

পূর্ব প্রকাশের পর

বড়ঘরের বারান্দায় গৌতম আর প্রতিমা পাথরের মূর্তি হয়ে বসে আছে। তারা নড়তে পারছে না, কথাও বলতে পারছে না।

তবে শিউলির সব কথা পরিষ্কার শুনতে পাচ্ছে।

নিমের পাতায় ঝিরঝিরে হাওয়া। চাঁদের আলো গলে গলে পড়ছে পাতার ফাঁকফোকর দিয়ে। কোথাও কোনো শব্দ নেই। শুধু ঝিঁঝিঁপোকারা নিজেদের নিয়মে ডেকে যাচ্ছে।

বড়ঘর আর রান্নাচালার পিছনে বেশ কয়েকটি আম, জাম আর তেঁতুল গাছ গা জড়াজড়ি করে আছে। ওদিকটা এরকম জ্যোৎস্না রাতেও অন্ধকারাচ্ছন্ন লাগছে।

শিউলি একবার সেদিকটায় তাকালো। অর্জুনের মাথায় হাত বুলাতে লাগল।

অর্জুন বলল, ‘গল্প বলার আগে তুমি নিজের কথা বলছো না কেন, পিসিমণি? তুমি জলে ডুবে গেলে।

 কেউ তোমাকে খুঁজে পেল না। সবাই জানলো তুমি মরে গেছো। তা হলে এতদিন পর তুমি কোত্থেকে এলে? ছিলে কোথায়? তাও বলছ ভোর হওয়ার আগে চলে যাবে। কোথায় চলে যাবে, পিসিমণি?’

‘সেই গল্পটাই তোকে বলব। এও পাতালপুরির গল্প। আমি পাতালপুরিতে চলে গেছি। সেখানেই থাকি। সেখানেই ফিরে যাব। শুধু গল্পটা তোকে বলবার জন্য এভাবে এতরাতে এসেছি। আর তুই আমাকে এত ভালোবাসিস, এখনও ভুলিসনি আমাকে, আমার জন্য কাঁদছিস, এজন্যও এসেছি।’

‘গল্পটা তা হলে বলো।’

‘আরতি আর সন্ধ্যার সঙ্গে আমি স্নানে নেমেছিলাম নদীতে। মন তো আমার সব সময়ই খারাপ থাকে। দাদা ফিরে তাকায় না, বউদি কষ্ট দেয়। সংসারে তুই ছাড়া কেউ আমার কথা ভাবে না। এ অবস্থায় কী করে বাঁচবো আমি? আমার শুধু মরে যেতে ইচ্ছে করে। কিন্তু মরতে পারি না তোর জন্য। তোকে যে আমি খুব ভালোবাসি।’

বড়ঘরের বারান্দায় বসা গৌতম আর প্রতিমা শিউলির কথা সবই শুনতে পাচ্ছে।

শিউলি বলল, ‘সেদিন স্নানে নামার কিছুক্ষণ পর গলাজলে ডুব দিয়েছি। দিয়ে দেখি অদ্ভুত এক দৃশ্য। আমার চারপাশে কুড়ি পঁচিশটি মেয়ে। ফুটফুটে সুন্দর। আর প্রত্যেকের চেহারাই যেন একরকম। অপূর্ব সুন্দর চেহারা। গায়ের রং চাঁদের আলোর মতো। টানা টানা চোখ। খাড়া নাক। লাল টুকটুকে ঠোঁট। মাথা ভর্তি ঘন নীলচে ধরনের চুল। কিন্তু আকৃতিতে সবাই ছোট। একই মাপের। আমার কোমর সমান হবে। তারা সবাই আমাকে ঘিরে ধরেছে। তাদের গলার স্বর অতিমৃদু। প্রত্যেকেই নিজেদের মধ্যে হাসিমুখে কথা বলছে। কিন্তু তাদের ভাষা কিছুই আমি বুঝতে পারছি না। জলের তলায় অবাক হয়ে আমি তাদের দিকে তাকিয়ে আছি। ততক্ষণে তারা কয়েকজন মিলে আমার দু’হাত ধরেছে আর অন্যরা ছড়িয়ে আছে চারপাশে। আমাকে যেন ঠেলে ঠেলে তারা কোথায়, কোনদিকে নিয়ে যেতে চাইছে। নিজের অজান্তে আমিও যেন তাদের সঙ্গে চলতে শুরু করেছি। কতক্ষণ ধরে জলে ডুব দিয়ে আছি, মনেই নেই আমার। তার পর দেখি আমার খুব ঘুম পাচ্ছে। কিছুতেই চোখ খোলা রাখতে পারছি না। আমি এক সময় গভীর ঘুমে ডুবে গেলাম।

কতক্ষণ ঘুমিয়ে ছিলাম বুঝতে পারিনি। চোখ খুলে দেখি রূপকথার গল্পের মতো বিশাল এক রাজপ্রাসাদের সামনে দাঁড়িয়ে আছি। আমার চারপাশে তখন সেই ছোট ছোট ফুটফুটে মেয়েগুলোর সংখ্যা আরও বেড়েছে। সত্তর আশিজনের কম হবে না। তারা ওরকম মৃদু স্বরে হাসিমুখে কথা বলছে। তাদের ভাষা একটুও বুঝতে পারছি না আমি। একবার এর মুখের দিকে তাকাই, আরেকবার ওর মুখের দিকে তাকাই। ওরা খুবই মায়া মমতার চোখে আমাকে দেখছে। আমার হাত ধরছে। আমাকে ছুঁয়ে ছুঁয়ে দেখছে। আমার হাত-মুখ, ঠোঁট-চোখ, চুল-নখ সবই আগ্রহ নিয়ে দেখছে। আর ওরকম ভাষায় কথা বলে যাচ্ছে।

এ সময় প্রাসাদের ভিতর থেকে ওরকম আরও পাঁচটি মেয়ে এলো। এসে সবাইকে সরিয়ে দিয়ে একজন আমার হাত ধরল। আমি যন্ত্রের মতো তার সঙ্গে চলতে লাগলাম। ওই পাঁচজন আমাকে প্রাসাদের ভিতরে নিয়ে এলো।  বিশাল এক রাজদরবার। সিংহাসনে বসে আছেন ওরকমই একজন। তবে তিনি অন্যদের তুলনায় লম্বা। আমার গলা সমান হবেন। বোঝা যায় তিনি এই রাজ্যের প্রধান...

এ সময় প্রাসাদের ভিতর থেকে ওরকম আরও পাঁচটি মেয়ে এলো। এসে সবাইকে সরিয়ে দিয়ে একজন আমার হাত ধরল। আমি যন্ত্রের মতো তার সঙ্গে চলতে লাগলাম। ওই পাঁচজন আমাকে প্রাসাদের ভিতরে নিয়ে এলো। বিশাল এক রাজদরবার। সিংহাসনে বসে আছেন ওরকমই একজন। তবে তিনি অন্যদের তুলনায় লম্বা। আমার গলা সমান হবেন। বোঝা যায় তিনি এই রাজ্যের প্রধান। পরে জেনেছি তিনি রানিমা। তবে এই রাজ্যে কারও বয়স বাড়ে না। রানিমার বয়স কত কেউ জানে না। তিনি বসে আছেন সিংহাসনে আর পারিষদরা বসে আছেন তাঁর থেকে বেশ খানিকটা দূরে। সুন্দর সুন্দর আসনে। তবে সবার চেহারাই একরকম। রানিমাকে আলাদা দেখায় তিনি লম্বা বলে আর তাঁর মাথার রাজমুকুট দেখে।

আমাকে দেখে তিনি অপলক চোখে খানিক তাকিয়ে রইলেন। পারিষদদের সঙ্গে অচেনা ভাষায় কথা বললেন। যে পাঁচজন আমার পাশে দাঁড়িয়েছিল তাদের কী ইশারা করলেন। তারা আমাকে নিয়ে গেল প্রাসাদের একটা রাজকীয় কামরায়। রূপকথার রাজকন্যারা যে রকম কামরায় থাকে, এই কামরা ঠিক সে রকম। শ্বেতপাথরের টেবিলে শুধুই ফল সাজানো। আর আছে পান করার জল।

ওরা আমাকে টেবিলে বসালো। খেতে ইশারা করল। তখন টের পেলাম আমার খুব খিদে পেয়েছে। ধীরে ধীরে আমি ফল খেতে লাগলাম। খাওয়া শেষ হতে ওরা আমাকে বিছানার দিকে ইঙ্গিত করল। আমি রাজকীয় বিছানায় গিয়ে গা এলানোর সঙ্গে সঙ্গে ঘুম। কিছুই মনে রইল না আমার। গভীর ঘুমে ডুবে গেলাম।’

একটু থামল শিউলি। কথা বলার ফাঁকে ফাঁকে সেই আগের রাতগুলোর মতো অর্জুনের মাথায় হাত বুলাচ্ছিল সে। অর্জুন কথা বলতে পারছে না। মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে পিসিমণির কথা শুনছে। বড়ঘরের বারান্দায় গৌতম আর প্রতিমারও একই অবস্থা।

শিউলি আবার বলতে লাগল তার কথা। ‘আমার ঘুম ভাঙল পরদিন সকালে। গত সন্ধ্যা থেকে পুরোটা রাত কখন, কীভাবে কেটে গেছে কিছুই টের পাইনি। ঘুম ভাঙার পর দেখি আমার পালঙ্কের পাশে সাত-আটজন দাঁড়িয়ে আছে। অপলক চোখে আমাকে দেখছে। নিজেদের ভাষায়, অতি নরম স্বরে তারা আমাকে ডাকছিল। আমার ঘুম ভাঙাবার চেষ্টা করছিল।

আমি চোখ মেলার সঙ্গে সঙ্গে তাদের মুখ হাসি-আনন্দে ভরে গেল। গতকাল থেকে ঘটে যাওয়া পুরো ঘটনা ধীরে ধীরে মনে পড়ছিল আমার।

বিছানায় উঠে বসার সঙ্গে সঙ্গে ওরা কেউ কেউ আমার হাত ধরল। রাজকীয় স্নানঘর দেখিয়ে দিল। নতুন পোশাক, জুতো, যা যা লাগে সব এনে দিল।

স্নানঘর থেকে আমি বেরোলাম সম্পূর্ণ নতুন মানুষ হয়ে। পোশাক জুতো ইত্যাদি ইত্যাদি মিলিয়ে আমি একেবারেই রূপকথার রাজকন্যা।

ওরা আমাকে বিশাল একটা আয়নার সামনে নিয়ে গেল। কুশনে বসিয়ে সাজাতে লাগল। আয়নায় নিজের চেহারা দেখে আমি অবাক। মাত্র একরাতেই আমি অনেকখানি বদলে গেছি। গায়ের রং যেন অনেকটা ফর্সা হয়ে গেছে। শরীরেও এই বাড়ির ঝিয়ের রূপটা নেই। সবই বদলে গেছে।

তার পর আমাকে নিয়ে বসানো হলো খাবার টেবিলে। সকালবেলাও টেবিলে শত শত ফল। কী যে স্বাদ সেই সব ফলের! ওরা ইশারায় আমাকে শিখিয়ে দিল, প্রথমে জল খেতে হবে তার পর ফল।

আমি তাই করলাম।

এখানে দেখছি জলের স্বাদও অন্যরকম। একঢোক খেলে প্রাণ জুড়িয়ে যায়। আর ফলের স্বাদের তো কোনো তুলনাই হয় না।

খাওয়ার পর ওরা আমাকে নিয়ে গেল প্রাসাদ দেখাতে। ঘুরে ঘুরে সব দেখলাম আমি। বিশাল প্রাসাদ। একদিনে এই প্রাসাদের কিছুই দেখা সম্ভব নয়। পুরো প্রাসাদ দেখতে এবং চিনে উঠতে আমার একমাসের মতো লাগল।

আশ্চর্য ব্যাপার ততদিনে ওদের ভাষাটা আমি শিখে ফেলেছি। ওদের মতো করে কথা বলতে পারি। তাতে রানিমা যেমন খুশি, প্রাসাদের সবাই তেমন খুশি। আর ততদিনে আমার চেহারাও বদলে গেছে। এখন তোরা আমাকে যেমন দেখছিস, এমন হয়ে গেছি।

প্রাসাদে সব মিলিয়ে আড়াইশোর মতো মেয়ে। কোনো পাহারাদার নেই, কোনো অস্ত্র নেই। দরজা জানালা খোলা রেখে ঘুমায় সবাই। কোথাও কোনো অনিয়ম নেই, কোলাহল নেই। ঝগড়াঝাটি মারামারি নেই, হিংসা অহংকার নেই, দুঃখ বেদনা নেই। দুর্ব্যবহার নেই, গালাগাল নেই। অর্থাৎ এই পৃথিবীর মতো কোনো ধরনের নোংরামি সেখানে নেই। সবাই সবাইকে ভালোবেসে বেঁচে আছে। লোভ কাকে বলে জানে না, মিথ্যা কাকে বলে জানে না। ঈর্ষা নেই। এ এক স্বর্গরাজ্য। চারদিকে শুধুই আনন্দ আর আনন্দ। উৎসব আর উৎসব। মেয়েরা দলবেঁধে নাচ-গান করছে। হাসছে, খেলছে। রানিমাও যোগ দিচ্ছেন তাদের সঙ্গে। আমিও নিজের অজান্তে ওদের সঙ্গে মিশে গেছি। এই বাড়ির কথা আমার মনে নেই। মা-বাবার কথা মনে নেই। দাদা বউদির কথা মনে নেই। মনে আছে শুধু তোর কথা। যখন তখন তোর কথা খুব মনে পড়ত।

প্রাসাদের চারপাশে শুধু বাগান আর বাগান। বিশাল বিশাল ফলের বাগান। মাইলের পর মাইল যেন। তাও একটা দুটো নয়। শত শত। ফলে ফলে ভরে আছে গাছগুলো। তাকালে চোখ জুড়িয়ে যায়। আর আছে ফুলের বাগান। তাও শত শত। একেকবাগানে একেক রকমের ফুল ফুটে থাকে। কী সুগন্ধ সেই সব ফুলের। ঝিরিঝিরি বাতাসে শুধুই ফুলের সুবাস। শীত গরম কিচ্ছু নেই। প্রাসাদ, না না, রাজ্য বলাই ভালো। সেই রাজ্যের নাম ‘পাতালপুরি’। পাতালপুরি চিরবসন্তের দেশ। ওখানকার রোদে কোনো তেজ নেই। মোমের আলোর মতো স্নিগ্ধ। চাঁদের আলোর মতো স্নিগ্ধ। অন্ধকার বলে কিছু নেই সেই রাজ্যে। প্রতি রাতই চাঁদের রাত। কখনও কখনও ঝিরঝির ঝিরঝির করে বৃষ্টি হয়। কিন্তু মেঘ ডাকে না, বিদ্যুৎ চমকায় না। ফুলে ফুলে উড়ছে প্রজাপতি। গাছে গাছে মিষ্টি স্বরে ডাকাডাকি করছে পাখিরা। কী অপূর্ব!

পাতালপুরিতে আমার দিন কাটতে লাগল গভীর আনন্দ আর সুখে। নিজের দুয়েকটি কাজ ছাড়া কিছু করতে হয় না। সবই ওরা করে দেয়। কিছুদিন পর জানতে পারলাম রানিমা বলেছেন, তার বয়স হয়েছে। তিনি আর রানিমা থাকবেন না। তাঁর জায়গায় আমাকে বসানো হবে সিংহাসনে। আমি হচ্ছি পাতালপুরির দ্বিতীয় রানিমা। শুনে রাজ্যের মেয়েরা আনন্দে ফেটে পড়ল। তারা নাকি আগেই জানত এই ঘটনা ঘটতে যাচ্ছে। এবং এজন্যই আমাকে ওভাবে তারা এই রাজ্যে নিয়ে এসেছে।’

আবার একটু থামল শিউলি। একবার অর্জুনের মুখের দিকে তাকাল। নিমপাতার ফাঁক দিয়ে চাঁদের এক টুকরো আলো এসে পড়েছে তার মুখে। ভারি সুন্দর দেখাচ্ছে ছেলেটাকে।

একবার দাদা বউদির দিকেও তাকাল সে। আগের মতোই অবস্থা তাদের।

শিউলি বলল, ‘তখন আমার শুধু তোর কথা মনে পড়ত, অর্জুন। তুই প্রতিদিন আমার কথা ভাবিস, নদীতীরে দাঁড়িয়ে আমার জন্য কাঁদিস। আমাকে স্বপ্ন দেখিস, সব আমি টের পাই। এখান থেকে ফিরে গিয়েই আমি পাতালপুরির রানিমা হয়ে যাব। এজন্য ভাবলাম তোর সঙ্গে এসে কয়েকঘণ্টা সময় কাটিয়ে যাই। তোকে আমার জীবনে ঘটে যাওয়া ঘটনাটা বলে যাই। আর কোনো দিন তোর কাছে আসা আমার হবে না। তবে প্রতিদিনই মনে মনে তোর সঙ্গে আমি কথা বলব। তুই বলবি আমার সঙ্গে। পাতালপুরি থেকে আমি তোর সব কথা শুনতে পাব। তুইও পরিষ্কার শুনতে পাবি আমার সব কথা। অন্য কেউ শুনতে পাবে না সে কথা। রাত শেষ হয়ে আসছে। এখনই দেখা যাবে শুকতারা। আমাকে চলে যেতে হবে। আমি জানি, তুই আমার জন্য খুব কাঁদবি। কাঁদিস না বাবা। তোর পিসিমণি পাতালপুরির রানিমা। এত সুখে আছে সে, একথা ভেবে আনন্দে থাকবি।’

অর্জুন সত্যি সত্যি কাঁদছিল তখন। গভীর মমতায় তার চোখ মুছে দিল শিউলি। ‘কাঁদিস না বাবা, কাঁদিস না। ওই দেখ তোর মা-বাবাও কাঁদছে। তারা কাঁদছে অপরাধবোধ থেকে। আমার সঙ্গে যে দুর্ব্যবহার তারা করেছে সেই অপরাধবোধ থেকে কাঁদছে। তবে তাদের দুর্ব্যবহারের কথা আমি মনে রাখিনি। আমি সব ভুলে গেছি। পাতালপুরির মানুষ কোনো খারাপ স্মৃতি মনে রাখে না। উঠ বাবা। আমি এখন যাব।’

অর্জুন উঠে বসল। কাঁদতে কাঁদতে বলল, ‘তুমি আর সেখানে ফিরে না গেলে, পিসিমণি। তুমি আমার কাছে থাকো।’

‘না রে বাবা, তা আর হয় না। আমি পাতালপুরির মানুষ হয়ে গেছি। এই পৃথিবীতে আমি আর থাকতে পারি না।’

‘চলো, আমি তোমাকে তা হলে একটু এগিয়ে দিই।’

‘আয়।’

অর্জুনের হাত ধরে নদীর দিকে হাঁটতে লাগল শিউলি। নদীতীরে এসে বলল, ‘আমি যে এভাবে তোর সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলাম, এ কথা কাউকে বলিস না বাবা।’

‘না, বলব না পিসিমণি। বললে কেউ বিশ্বাসও করবে না।’

শিউলি হাসল। ‘ঠিক, একদম ঠিক। তুই খুব বুদ্ধিমান ছেলে। জীবনে তুই অনেক বড় হবি। কারণ আমি তো তোর সঙ্গে আছি।’

‘কিন্তু পাতালপুরিতে তুমি এখন কীভাবে যাবে?’

‘যেভাবে এসেছিলাম। ওই দেখ, ওরা আমার জন্য অপেক্ষা করছে।’

অর্জুন নদীর দিকে তাকাল। চাঁদের আলোয় পরিষ্কার দেখতে পেল হাঁটুজলে কুড়ি পঁচিশটি ছোট ছোট মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে। শিউলিকে দেখেই আনন্দে ফেটে পড়ল তারা। নিজেদের ভাষায় সেই আনন্দ প্রকাশ করল। অর্জুনকে আদর করে, তার কপালে চুমু খেয়ে নদীতে নামল শিউলি। ছোট মেয়েগুলো চারপাশ থেকে তাকে ঘিরে ধরল। ধীরে ধীরে গলাজলে চলে গেল শিউলি। অর্জুনের দিকে তাকিয়ে হাত নাড়ল। তার পর ডুব দিল।

পিসিমণি চলে যাওয়ার পরও খানিকক্ষণ নদীতীরে দাঁড়িয়ে রইল অর্জুন। চোখ মুছে বাড়ির দিকে ঘুরল, দেখে বাবা-মা এসে দাঁড়িয়েছে তার পেছনে। তাদের চোখেও জল।

পরদিন থেকে গৌতম আর প্রতিমা অনেককেই শিউলির ফিরে আসার ঘটনা বলতে চাইল। আশ্চর্য ব্যাপার, যখনই বলতে চায়, তখনই তাদের গলা বন্ধ হয়ে যায়। শব্দ বেরোয় না। ব্যাপারটা খেয়াল করে অর্জুন মিটিমিটি হাসে। সে জানে এসবই পাতালপুরির নতুন রানিমা শিউলি পিসিমণির কাজ।

সমাপ্ত

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর