কিশোরগঞ্জের ভৈরব উপজেলার নারী উদ্যোক্তা লামিয়া রহমান চৈতি। বিভিন্ন বাজার থেকে নদী-হাওরের মাছ কিনে এনে সেগুলো কেটেকুটে ভালো করে ধুয়ে রান্নার উপযোগী করে বিক্রি করেন অনলাইনে। তাঁর মাছের ব্যবসা এখন বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। বর্তমানে ভৈরব ছাড়াও ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও কক্সবাজারে নিয়মিত মাছ ডেলিভারি দিচ্ছেন তিনি। প্রতি মাসে অন্তত ১ লাখ টাকার মাছ বিক্রি হচ্ছে চৈতির ফেসবুকভিত্তিক অনলাইন স্টোর ‘গুড ফুড’ থেকে। সব খরচ বাদ দিয়ে মাছের ব্যবসা থেকে মাসে প্রায় ২০ হাজার টাকা আয় করেন তিনি। ইতিমধ্যে মৎস্য অধিদফতর থেকে সফল উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠানের সম্মাননাও পেয়েছে চৈতির ‘গুড ফুড’ অনলাইন স্টোর। কিশোরগঞ্জের ভৈরব উপজেলা সদরের চন্ডিবের এলাকার মিজানুর রহমান ও মোছাম্মৎ শামছুন্নাহার দম্পতির পাঁচ সন্তানের মধ্যে চৈতি তৃতীয়। বাবা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী আর মা একজন গৃহিণী।
কেবল অনলাইনেই নয়; অফলাইনে কিংবা ফোন কলের মাধ্যমেও মাছ বিক্রি করছেন তিনি। স্থানীয় উদ্যোক্তাদের কাছে তিনি এখন অনুপ্রেরণা। ছোটবেলা থেকেই লামিয়ার ইচ্ছা ছিল নিজে কিছু করার। নিজের পরিচয়ে নিজেকে গড়ে তোলার। এই ভাবনা থেকেই ব্যবসায় আসা তাঁর। রাতে মাছের আড়তে ঘুরে ঘুরে মাছ কেনা থেকে শুরু করে, কাটাকুটি, পরিষ্কার করা, প্যাকেজিং, বক্স করা, গ্রাহকদের ঠিকানায় পাঠানো- ইত্যাদি সব কাজ তিনি নিজেই করেন। এসব কাজে বেশ কিছু নারীর কর্মসংস্থানও তৈরি হয়েছে। তাঁর কাজে সহায়তা করেন বাবা মিজানুর রহমান, বোন চিশতিয়া, ভাই সাইফ। আট মাস আগে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় লামিয়ার বিয়ে হয়। শ্বশুরবাড়ির সবাই তাঁর এই কাজে সহযোগিতা করছেন। লামিয়া চৈতি ফেসবুকে নারী উদ্যোক্তাদের প্ল্যাটফরম উইম্যান অ্যান্ড ই-কমার্সের (উই) একজন হাফ মিলিয়নিয়ার। সম্প্রতি তিনি এই ফোরামের কিশোরগঞ্জ জেলার সহ-প্রতিনিধি মনোনীত হয়েছেন। প্রক্রিয়াজাতকরণ করে বিক্রি ছাড়াও লামিয়া মাছ দিয়ে বিভিন্ন খাবার তৈরি করে বিক্রির পরিকল্পনা করছেন। ভবিষ্যতে ফিস বল, ফিস সসেস, ফিস রোল, ফিস মিনস, ফিস ফ্রাই, ফিস আচার, ফিস কেক ইত্যাদি তৈরি করে বিক্রি করার চিন্তা করছেন। এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে তাঁর পাশে দাঁড়িয়েছে উপজেলা মৎস্য অধিদফতর। প্রতিষ্ঠানটি ন্যাশনাল এগ্রিকালচারাল টেকনোলজি প্রোগ্রামের (এনএটিপি-২) আওতায় লামিয়াকে ৩ লাখ টাকা অনুদানের জন্য প্রস্তাবনা পাঠিয়েছে।
লামিয়া বলেন, ‘সমাজ-সংসারে নিজেদের অবস্থান সুদৃঢ় করতে নারীদের উচিত নিজেরা কিছু করা। বিয়ের আগে বাবা-ভাই, বিয়ের পর স্বামী-সন্তানের পরিচয় নারীর জন্য সম্মানজনক নয়। এ ক্ষেত্রে নারীদের উচিত উদ্যোক্তা হয়ে ওঠা। শিক্ষিত-উচ্চশিক্ষিত, অল্পশিক্ষিত সব নারীকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে উদ্যোগ গ্রহণের চেষ্টা করা উচিত।’