শনিবার, ৪ নভেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

কৃষিতে নারীদের অনুপ্রেরণা সাহিদা

কামরুজ্জামান সোহেল, ফরিদপুর

কৃষিতে নারীদের অনুপ্রেরণা সাহিদা

সাহিদা বেগম কয়েক বছর আগেও ছিলেন একজন সাধারণ গৃহবধূ। সংসারের কাজ করেই তার দিন কাটত। কিন্তু এখন তিনি দেশের নারীদের রোলমডেলে পরিণত হয়েছেন। তার হাত ধরেই কৃষিতে এগিয়ে যাচ্ছেন নারীরা। তিনি নিজে স্বাবলম্বী হওয়ার পাশাপাশি অসহায় নারীদের কৃষিতে সম্পৃক্ত করে উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন। শুধু তার নিজ এলাকা ফরিদপুরেই নয়, একসময়ের মঙ্গা এলাকা হিসেবে পরিচিত উত্তরবঙ্গের নারীদেরও কৃষিকাজে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। কৃষিতে নারীদের কর্মসংস্থানের পথ সৃষ্টি করেছেন। নিজে স্বপ্ন দেখেন এবং অন্যদের স্বপ্ন দেখাতে উৎসাহিত করেন। সাহিদা বেগম দেশের শ্রেষ্ঠ একজন কিষানি হিসেবে পরিচিত। তার খামারে উৎপাদিত পিঁয়াজ বীজ দেশের এক চতুর্থাংশ চাহিদা মেটায়। অক্লান্ত পরিশ্রম আর কৃষির প্রতি ভালোবাসার কারণে পিঁয়াজ বীজ উৎপাদনে দেশে নজির সৃষ্টি করেছেন। সাহিদা বেগমের দৃষ্টান্ত তুলে ধরে কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক এমপি বিভিন্ন সভা-সমাবেশে নারীদের কৃষিতে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। ফরিদপুর সদরের অম্বিকাপুরের গোবিন্দপুরের বাসিন্দা সাহিদা বেগমের শুরুটা তেমন সহজ ছিল না। স্বামীকে সহযোগিতা করতে গিয়েই কৃষির মায়ায় জড়িয়ে পড়েন তিনি। এরপর নিজেই ‘কালো সোনা’ হিসেবে পরিচিত পিঁয়াজ বীজের চাষ শুরু করেন। ১৯ বছর আগে কৃষিতে পথচলা শুরু হয় সাহিদা বেগমের। প্রথমে এক বিঘা জমিতে পিঁয়াজ বীজের আবাদ করে তেমন লাভের মুখ দেখেননি। তারপরও থেমে থাকেননি সাহিদা। নানা প্রতিকূলতার মধ্যদিয়ে সামনে এগিয়ে যান। ব্যাংক কর্মকর্তা স্বামী বক্তার হোসেন খানের অনুপ্রেরণায় এখন সাহিদা বেগম ৬০ বিঘা জমিতে পিঁয়াজ বীজের আবাদ করছেন। তিনি জানান, গত বছর তিনি ৫ কোটি টাকার পিঁয়াজ বীজ বিক্রি করেছেন। এ বছরও রেকর্ড পরিমাণ জমিতে পিঁয়াজ বীজের আবাদ করবেন। তিনি তাহেরপুরী, সুখ সাগর, নাসিক কিং, বারী-১ ও হাইব্রিড জাতের পিঁয়াজ বীজের আবাদ করেন। সাহিদার খামারে উৎপাদিত বীজ দেশের মধ্যে সেরা। তিনি জানান, পিঁয়াজ বীজ উৎপাদন বেশ ঝুঁকিপূর্ণ। ছোট্ট সন্তানের মতো লালন করতে হয় বীজ বোনা থেকে শুরু করে পিঁয়াজ দানা ঘরে তোলা পর্যন্ত। তাছাড়া পিঁয়াজ বীজ উৎপাদনে খরচও বেশি। যার কারণে ইচ্ছা থাকলেও কেউ পিঁয়াজ বীজ উৎপাদনে এগিয়ে আসতে পারেন না। গত বছর তিনি ফরিদপুর ছাড়িয়ে উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় পিঁয়াজ বীজের আবাদ শুরু করেন। আবহাওয়া উপযোগী এবং উৎপাদন খরচ তুলনামূলক কম হওয়ায় ঠাকুরগাঁও, রংপুর, দিনাজপুর পিঁয়াজ বীজ উৎপাদনের ভালো একটি জায়গা বলে জানান তিনি। সাহিদা বেগম বলেন, উত্তরবঙ্গের মানুষ পিঁয়াজ বীজ কীভাবে উৎপাদন করতে হয় আগে জানতেন না। আমরাই প্রথম সেখানে পিঁয়াজ বীজ উৎপাদন শুরু করি। এখন নারীরা কৃষিতে সম্পৃক্ত হচ্ছেন। শ্রমিকের পাশাপাশি নারীরা যাতে নিজেরাই বিভিন্ন ফসল আবাদ করতে পারেন সেজন্য নানা পরামর্শও দেওয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যেই অনেক নারী নিজেরা সবজি চাষসহ বিভিন্ন আবাদের দিকে ঝুঁকছেন। সাহিদা জানান, উত্তরবঙ্গের জেলাগুলোতে ৪০ একর জমিতে পিঁয়াজের আবাদ করা হয়েছে। শুধু পিঁয়াজ বীজ উৎপাদনই নয়, সাহিদা বেগম সবজি আবাদসহ ফলের বাগান করেও আয়ের পাশাপাশি নারীদের কর্মসংস্থানের পথ তৈরি করছেন। তার উৎপাদিত কৃষি খামারে কয়েক শ নারী শ্রমিক কাজ করছেন। তাছাড়া ফরিদপুর সদরসহ বিভিন্ন উপজেলায় নারীদের নানা পরামর্শ ও সহযোগিতা দিচ্ছেন তিনি। কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ ইতোমধ্যেই নানা পুরস্কার ও সম্মাননা পেয়েছেন অনন্য এই নারী।

 

 

সর্বশেষ খবর