মলত্যাগের সময় যদি মলের সঙ্গে রক্তের উপস্থিতি দেখেন তবে যে কোনো ব্যক্তিরই আতঙ্কগ্রস্ত হওয়াটা অস্বাভাবিক নয়। অনেকেই মনে করেন, এটি কোলন ক্যান্সারের লক্ষণ, যদিও মলের সঙ্গে রক্ত যাওয়া মানেই অনেক ক্ষেত্রে জীবন বিনাশকৃত কোনো রোগের লক্ষণ নয়। যদি মলত্যাগের পর টিস্যু পেপার দিয়ে মলদ্বার মুছলে, টিস্যু পেপারে রক্তের লাল ছোপ দেখতে পান অথবা আপনার মলে রক্ত দেখতে পান তবে বিচলিত না হয়ে প্রথমেই একজন সার্জনের শরণাপন্ন হন। এই লেখাটিতে মলের সঙ্গে রক্ত যাওয়ার সম্ভাব্য কারণগুলো কি এবং এর ফলে কি ধরনের অবস্থা সৃষ্টি হতে পারে, সে ব্যাপারে সম্ভাব্য ধারণা দেওয়া হলো- মলত্যাগের পর মলদ্বার পরিষ্কার করার সময় কাপড়ে বা টিস্যু পেপারে রক্তের ছোপ অথবা মলের বাইরের দিকে বা টয়লেটের মধ্যে সামান্য তাজা রক্ত দেখতে পাওয়া মানে হচ্ছে অর্শরোগ (হেমোরয়েডস) কোনো কোনো ক্ষেত্রে অ্যানাল ফিশারের উপস্থিতি। অর্শ বা হেমোরয়েডস হচ্ছে মলাশয় (রেক্টাম) বা মলদ্বারের (অ্যানাস) ফুলে যাওয়া রক্তবাহিত শিরা, যা অত্যন্ত ব্যথা ও চুলকানিযুক্ত হয় এবং যা থেকে মাঝে মাঝে রক্তক্ষরণও হয়ে থাকে। মলত্যাগের সময় ব্যথাহীন রক্তক্ষরণও হেমোরয়েডসের স্বাভাবিক লক্ষণ। উজ্জ্বল লাল রক্ত সাধারণত মলের সঙ্গে মিশে থাকে অথবা ফোঁটায় ফোঁটায় টয়লেটে ঝরে পড়ে বা টিস্যু পেপারকে রঞ্জিত করে। অ্যানাল ফিশার হচ্ছে মলদ্বারে উন্মুক্ত মুখের একটি ক্ষত, যার কারণে মলত্যাগের সময় বা এর পরে রক্তক্ষরণ বা ছিঁড়ে যাওয়া, ফেটে যাওয়া অথবা জ্বালাপোড়া অনুভূত হওয়া। মলাশয় বা মলদ্বার থেকে রক্তপাত পরবর্তীতে কোলন ক্যান্সার, কোলন পলিপ, অন্ত্রে প্রদাহ বা কোলাইটিস এবং ডাইভারটিকুলোসিস ইত্যাদি আরও অনেক রোগে রূপ নিতে পারে। এ ছাড়া পায়ুপথের অনেক ওপরে যেমন পাকস্থলীতে সৃষ্ট রোগের কারণে রক্তের উপস্থিতি কালচে অথবা গাঢ় কালো মল তৈরি করতে পারে, কারণ পাকস্থলীর এসিড রক্তকে কালো করে দেয়। আয়রনযুক্ত ওষুধ সেবনের কারণেও মলের রং কালো হতে পারে। মলত্যাগের সময় গাঢ় কালচে লাল রক্ত বা জমাট রক্ত কণিকাযুক্ত মলের উপস্থিতি সাধারণত অন্ত্রের ওপরের অংশের কোনো সমস্যা নির্দেশ করে, যা হেমোরয়েডস বা অ্যানাল ফিশার নয়। কাজেই বুঝতে হবে যদি মলের রং অন্তর্নিহিত রোগ সম্পর্কে ধারণা দিতে পারে, তবে রোগের সঙ্গে সম্পর্ক যুক্ত নয় এমন অনেক কিছুই মলের রং পরিবর্তন করতে পারে। প্রকৃতপক্ষে আপনার অন্ত্র প্রণালিতে কি সমস্যা হচ্ছে, তা জানার জন্য পরীক্ষার প্রয়োজন হতে পারে। লক্ষণের ধরন অনুযায়ী চিকিৎসক সিদ্ধান্ত নেবেন কোন পরীক্ষার প্রয়োজন রয়েছে। বেশির ভাগ ডাক্তার রোগের বৃত্তান্ত জানতে চাইবেন এবং মলদ্বারের পরীক্ষাসহ শারীরিক পরীক্ষা করাবেন। প্রয়োজনে কোলোনোস্কোপি, সিগময়েডোস্কোপি বা এন্ডোস্কোপি করার পরামর্শও দিতে পারেন। তাই মলের সঙ্গে রক্তের উপস্থিতি মোটেই উপেক্ষা করা উচিত নয়।
লেখক : কো-অর্ডিনেটর অ্যান্ড সিনিয়র কনসালটেন্ট, জেনারেল অ্যান্ড ল্যাপারোস্কপিক সার্জারি, এ্যাপোলো হসপিটালস ঢাকা।