মোহামেডান অনেকদিন পর এবার শক্তিশালী দল গড়েছে ঠিকই। কিন্তু পরিবেশ ও যোগ্য ম্যানেজমেন্টের কারণে ঐতিহ্যবাহী দলের রুগ্নদশা কাটছে না। চার খেলায় ৭ পয়েন্ট নষ্ট করে এখনি পেশাদার ফুটবল লিগে ঝুঁকির মধ্যে পড়ে গেছে তারা। শিরোপা নয় যে খেলা খেলছে তাতে মোহামেডান চতুর্থ স্থানে থাকতে পারবে কিনা তা নিয়ে সমর্থকরা শঙ্কিত। দলের সাবেক অধিনায়ক সাইদ হাসান কানন বলেছেন, দলকে শুধু শক্তিশালী করলে চলে না, ভালো গাইড লাইন দিতে হয়। অর্থাৎ যোগ্য পরিচালনার অভাবে দলকে এমন খেসারত দিতে হচ্ছে। ১৯৮০ সালে অধিকাংশ তরুণদের নিয়ে দল গড়লেও মোহামেডান সেবার রামা লুসাইয়ের নেতৃত্বে লিগ জিতে নিয়েছিল। ওই সময়ে ক্লাব পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন মনিরুল হক চৌধুরী, আকমল হোসেন, আবদুল মোনেম, ফজলুল হক, কামাল আহম্মেদ, মাহতাব, আফতাব ও সিরাজুল ইসলামদের মতো ত্যাগী সংগঠক। তারা শুধু শক্তিশালী দলই গড়তেন না, শৃঙ্খলা ও ফুটবলারদের ভালোমন্দে সব কিছুই খোঁজখবর রাখতেন। এরপর ফজলুর রহমান বাবুল, আমিনুল ইসলাম মনি, তানভীর হায়দার, আনোয়ারুল হক হেলাল, বাদল রায়, ইমতিয়াজ খান জনিরা মূলত ক্লাবের দেখাশোনা করতেন। চেইন অব কমান্ড বলতে যা বুঝায় তা নিজেরা যেমন মানতেন খেলোয়াড়দের এর বাইরে যেতে দিতেন না। লিমিটেড কোম্পানি গঠনে যে প্রক্রিয়ায় কমিটি গঠন হয়েছে তাতেই ক্ষুব্ধ হয়ে তারা দূরে সরে গেছেন। অর্থ খরচ করে দল গঠন করছে ঠিকই কিন্তু দক্ষ পরিচালনার অভাবে এমন করুণ পরিণতি ঘটেছে। চাঁদার পরিমাণ ১ লাখ হলেও লিমিটেড কোম্পানিতে এখন স্থায়ী সদস্যের ছড়াছড়ি। তবুও ক্লাব পরিচালনার জন্য দক্ষ কাউকে পাওয়া যায়নি। অনেকে বলেন, মোহামেডান এখন লোকমান কেন্দ্রিক হয়ে পড়েছে। ডাইরেক্টর ইনচার্জ হিসেবে কখনো লোকমান হোসেন ভূঞার যোগ্যতা ও মেধা নিয়ে কেউ প্রশ্ন তোলেননি। কিন্তু তিনি তার যোগ্যতাকে কাজে লাগাতে পারছেন কিনা সেটাই প্রশ্ন। এই পদে আবাহনীতে যিনি বসে আছেন তিনি কি করছেন সেটা যাচাই করলে মোহামেডানের ডাইরেক্টর ইনচার্জের কর্মকাণ্ড বের করা যাবে। মোহামেডানের বেশ ক'জন সাবেক খেলোয়াড় ক্ষোভের সঙ্গে বললেন, সাংগঠনিক কোনো কর্মকাণ্ডে নেই। অথচ ক্লাবে গেলে দেখা যাবে প্রায় সার্বক্ষণিক ক'জন পরিচালক বসে আছেন। মনিরুল হক বা আকমলরা এত সময় ধরে ক্লাবে থাকতেন না। কিন্তু ক্লাব উন্নয়নে যা করা দরকার তা ভালোমতো করতে পারতেন। আবাহনীর কাছে হেরেছে এটা কোনো ব্যাপারই নয়। হারজিত দিয়েই খেলা। কিন্তু এই হারে শিরোপার সম্ভাবনা প্রায় শেষ হয়ে গেছে সেটাই সমর্থকদের দুঃখ। ১০ বছর ধরে লিগ পাচ্ছে না। এই ব্যর্থতার যদি অবসান ঘটানো না যায় মোহামেডানের মতো ঐতিহ্যবাহী দলের অবস্থান কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে কেউ কি ভেবে দেখেছে। বিভিন্ন টক শোতে বলা হচ্ছে ফুটবলের জৌলুস ফিরিয়ে আনতে আগের মতো আবাহনীর পাশাপাশি মোহামেডানকে সাফল্য পেতে হবে। ব্যাপারটি সাদাকালোর কর্মকর্তারা উপলব্ধি করতে পারছেন কিনা সেটাই প্রশ্ন।