মঙ্গলবার, ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

সিনেমা হল শূন্য নগরী

কাজী শাহেদ, রাজশাহী

সিনেমা হল শূন্য নগরী

শিক্ষানগরী হিসেবে পরিচিত রাজশাহী। এ শিক্ষানগরীতে নেই একটিও সিনেমা হল। আশির দশক থেকে শুরু করে ২০০০ সাল পর্যন্ত জমজমাট ছিল সিনেমা হলগুলো। এরপর একটির পর একটি বন্ধ হতে শুরু করে। এখন সিনেমা হলশূন্য নগরী।

নগরীর ব্যস্ততম এলাকা অলোকার মোড়। এ নামটির সঙ্গে জড়িয়ে আছে রাজশাহীর সবচেয়ে প্রাচীন সিনেমা হলের নাম। ব্রিটিশ আমলে নাট্য আন্দোলন এগিয়ে নিতে ভিক্টোরিয়া ড্রামাটিক ক্লাব ‘রাজা প্রমথ নাথ টাউন হল’ নির্মাণ করা হয়। ১৯১৯ সালের ২ এপ্রিল ভিক্টোরিয়া ক্লাবের কাছ থেকে হলটি কিনে নেয় রাজশাহী অ্যাসোসিয়েশন। ১৯৭১ সালের পর হলটি অ্যাসোসিয়েশনের কাছে ভাড়া নিয়ে অলোকা নাম দিয়ে শুরু হয় সিনেমা প্রদর্শন। নব্বইয়ের দশকে এটি স্মৃতি সিনেমা হল নামে পরিচালিত হতো। ২০০৭ সালে সিনেমা প্রদর্শন বন্ধ করে ভেঙে ফেলা হয় হলটি। হলের জায়গায় ২০১২ সালে গড়ে ওঠে রাজশাহী অ্যাসোসিয়েশনের বাণিজ্যিক ভবন। সেখানে আধুনিক হল নির্মাণের কথা থাকলেও সেটি করা হয়নি। অলোকার মোড়ে আজ সিনেমা হল না থাকলেও নামটি রয়ে গেছে নগরবাসীর মুখে মুখে। একই দশা নগরীর লিলি, উৎসব ও বর্ণালী সিনেমা হলের।

পাকিস্তান আমলে নগরীর কাদিরগঞ্জ ও আমবাগান এলাকায় বাবুল ও রুবেল চৌধুরী নির্মাণ করেন বর্ণালী সিনেমা হল। ১ হাজার ৩৭৩ আসনের এ হলটি ছিল দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম প্রেক্ষাগৃহ। ২০০৯ সালে সিনেমা হলটি কিনে নেয় ডেসটিনি ২০০০ গ্রুপ। ২০১০ সালে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয় হলটি। পরে সেখানে ডেসটিনি ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস সেন্টার নির্মাণকাজ শুরু হয়। আইনি জটিলতায় বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণ করতে পারেনি ডেসটিনি গ্রুপ। জায়গাটিতে এখন রাজশাহী সিটি করপোরেশনের (রাসিক) অস্থায়ী গ্যারেজ। এখনো নগরবাসী এলাকাটিকে বর্ণালী মোড় নামেই চেনেন।

নগরীর কল্পনার মোড় দেখে বোঝার উপায় নেই এখানে একসময় সিনেমা হল ছিল। হলের জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে আকাশচুম্বী স্বচ্ছ টাওয়ার। এ টাওয়ারের নিচেই চাপা পড়েছে কল্পনা। ব্রিটিশ আমলে নগরীর আলুপট্টি এলাকায় কল্পনা সিনেমা হল চালু হয়। মুক্তিযুদ্ধের সময় কল্পনার অংশীদাররা ভারতে পাড়ি জমান। ১৯৭১ সালের পর রাজশাহী সিন্ডিকেটের ম্যানেজার দীনবন্ধু দেশে ফিরে হলটি হস্তান্তর করেন ঢাকার মোশাররফ চৌধুরীর কাছে। তার মৃত্যুর পর হলের নিয়ন্ত্রণ যায় রাজশাহীর রাজপাড়ার বাসিন্দা আবদুর রহমানের কাছে। তিনি কল্পনা পরিবর্তন করে নাম দেন ‘উৎসব’। ২০১০ সালের জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহে উৎসবে প্রদর্শনী বন্ধ করা হয়। সেখানে এখন গড়ে উঠেছে ১৭ তলা টাওয়ার।

নগরীর পশ্চিম প্রান্তে একসময় চলতো লিলি সিনেমা হল। লোকসান দিতে দিতে ২০১০ সালে বন্ধ হয়ে যায় লিলি। পরে প্লট আকারে বিক্রি হয় হলের জমি। একে একে সব হল বন্ধ হলেও টিকে ছিল উপহার হলটি। ২০১৮ সালের ১২ অক্টোবর সেটিও বন্ধ হয়ে যায়। সাড়ে ২৪ কাঠা আয়তনের এ জায়গায় এখন গড়ে উঠবে বহুতল বাণিজ্যিক ভবন।

সিনেমা হলের বিলুপ্তি ও রাজশাহীবাসীর চিত্তবিনোদনের ব্যবস্থা সম্পর্কে রাজশাহী সিটি মেয়র বলেন, ‘সিনেমা হল বা সিনেপ্লেক্স গড়ে তুলতে বাণিজ্যিক ভবন মালিকদের বলার পরেও এখনো সেটি সম্ভব হয়নি। আধুনিক সময়ে যদি আধুনিকভাবে সিনেপ্লেক্স গড়ে তোলা হয় তাহলে সেটিতে দর্শক যাবে।’

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর