একসময় দেশের প্রধান অর্থকরী ফসল ছিল পাট। সোনালি আঁশ খ্যাত সে ফসল চাষে দিন দিন আগ্রহ হারাচ্ছে জয়পুরহাটের কৃষক। পচনের জন্য পানি সংকট, পর্যাপ্ত জলাশয়ের অভাব, ন্যায্যমূল্য না পাওয়া, সার-কীটনাশকের দাম নাগালের বাইরে, উৎপাদন খরচ বেশিসহ বিভিন্ন কারণে কৃষিপ্রধান এ জেলায় এ ফসলের আবাদ কমতে শুরু করেছে। অনেক কৃষক অভিযোগ করছেন পাট চাষে খরচ উঠছে না তাদের। জেলার পাঁচ উপজেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি পাট চাষ হয় সদর ও পাঁচবিবিতে। আক্কেলপুর ও ক্ষেতলালে স্বল্পপরিমাণ জমিতে পাট চাষ হলেও কালাই উপজেলায় এ ফসল আবাদ হয় না।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরসূত্রে জানা গেছে, গত মৌসুমে জেলায় ৩ হাজার ৫৭০ হেক্টর জমিতে পাট চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। আবাদ হয় ৩ হাজার ১১৮ হেক্টরে। চলতি মৌসুমে ২ হাজার ৮৮০ হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ হয়েছে। সে হিসেবে গত মৌসুমের তুলনায় এবার আবাদ কমেছে ২৩৮ হেক্টর জমির।
পাঁচবিবির রতনপুরের কৃষক রমজান আলী বর্তমানের বেহাল দশা উল্লেখ করে জানান, গত বছর তিনি ২ বিঘা জমিতে পাট চাষ করেন। বেশি টাকায় শ্রমিক নিতে হয়েছে এবং খরচ বেশি হওয়ায় লাভ করতে পারেননি। সরকারিভাবে পাটের যে বীজ সরবরাহ করা হয়, তা পাওয়া যায় অনেক দেরিতে। ফলে সরকারের দেওয়া সুযোগ তাদের কাজে লাগে না। জয়পুরহাট সদর উপজেলার ধলাহার ইউনিয়নের জামতলি গ্রামের কৃষক ইমন আলী জানান, আবহাওয়া ভালো থাকলেও প্রতি বিঘা জমিতে সর্বোচ্চ ৮ মণ পাট হয়। এতে যে পরিমাণ খরচ তাতে পোষায় না। এজন্য গত বছরের তুলনায় এবার পাট চাষ কমিয়ে দিয়েছেন। আক্কেলপুর উপজেলার কৃষক স্বপন ম ল জানান, ২ বিঘা জমিতে পাট চাষ করতে তার শ্রমিক বিল বাবদ খরচ হয়েছে ১৮ হাজার টাকা। তা ছাড়া এ কাজের জন্য সব সময় শ্রমিকও পাওয়া যায় না। জমি থেকে পাট কাটার পর জাগ দেওয়ার সময় অনেক কষ্ট করতে হয়েছে। সরকারি খালগুলো প্রভাবশালীরা দখল করে নেওয়ায় আগের মতো সেখানে পাট জাগ দেওয়া সম্ভব হয় না। তিনি আরও জানান, খালগুলো ভরাট করার ফলে পানিস্বল্পতা দেখা দিয়েছে। তার জমি থেকে অনেক দূরে নিয়ে পাট জাগ দিতে হয়েছে। এতে পরিবহন খরচ হয়েছে অনেক। সব প্রক্রিয়া শেষে হাটে ২ হাজার ৮০০ টাকা মণ দরে পাট বিক্রি করেছেন তিনি। এতে তার খরচ ওঠেনি। যে আশা নিয়ে তিনি পাট চাষ করেছিলেন তা পূরণ হয়নি। এখন থেকে অন্য ফসল চাষ করবেন বলেন তিনি।
জয়পুরহাট জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের খামারবাড়ির অতিরিক্ত উপপরিচালক (শস্য) কৃষিবিদ মো. মজিবুর রহমান জানান, কম বৃষ্টিপাত, শ্রমিকের মজুরি বেশি, পাট রোপণ, পচানো সমস্যাসহ বিভিন্ন কারণে পাট চাষে আগ্রহ হারাচ্ছে কৃষক। এদিকে খরচ ও সময় কম লাগায় সবজি চাষে ঝুঁকে পড়ছে তারা। তবে পাটের আবাদ বাড়ানোর জন্য কৃষি বিভাগ থেকে যাবতীয় সহযোগিতা এবং পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।