নির্মাণের চার মাসেই ভেঙে গেল গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় দেবে যাওয়া সেতু। এতে নদী পারাপারে দুর্ভোগ বাড়ল তিস্তাপারের এসব মানুষের। এলাকাবাসীর অভিযোগ, ঠিকাদার ও দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রকৌশলীর গাফিলতিতে এ অবস্থা। সেতু নির্মাণ শেষ হতেই মাঝখানে দেবে যায়। শেষমেশ ভেঙেই গেছে সেতুর অর্ধেক অংশ। স্থানীয়রা জানান, সুন্দরগঞ্জ উপজেলার বেলকা ইউনিয়ন বেলকা বাজারের উত্তর পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া তিস্তার শাখা নদী নৌকায় পারাপার হতেন। বেলকা ও হরিপুর ইউনিয়নের চরাঞ্চলের অন্তত ২০ হাজার মানুষের যোগাযোগের মাধ্যম ছিল একমাত্র নৌকা। নৌকা ধরতে একটুখানি বিলম্বেই অপেক্ষা করতে হতো প্রায় ঘণ্টাখানেক। চরম ভোগান্তিতে পড়তে হতো স্কুল, কলেজ ও মাদরাসাগামী শিক্ষার্থী ও অসুস্থ রোগীর স্বজনদের। স্থানীয়দের দীর্ঘদিনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সেখানে একটি সেতু করার উদ্যোগ নেয় সুন্দরগঞ্জ উপজেলা পরিষদ। সুন্দরগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয় এটি বাস্তবায়ন করে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) থেকে এই টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। কাজের দায়িত্ব পায় গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ছানা এন্টারপ্রাইজ। ২০০ মিটার দীর্ঘ এবং ৬ মিটার প্রস্থের সেতুটি নির্মাণে প্রায় ৩০ লাখ টাকা ব্যয় হয়। সুন্দরগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয় সূত্র জানায়, ২০২২ সালের আগস্ট মাসে সেতুটির নির্মাণকাজ শুরু হয়। ২০২৩ সালের জুন মাসে শেষ হওয়ার কথা ছিল। তবে সেতুর পাটাতনে সিমেন্টের স্লাবের পরিবর্তে কাঠ দেওয়া হয়। অভিযোগ রয়েছে, ২০২৩ সালের জুনের মধ্যে কাজ শেষ করার কথা থাকলেও ২০২৪ সালের জানুয়ারির মাঝামাঝি কাজ না করেই টাকাও উত্তোলন করেন সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার। বিষয়টি জানাজানি হলে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে শুরু হয় কাজ। শেষ হয় ২০২৪ সালের জুনে। কিন্তু কাজের মান নিম্নমানের হওয়ায় কয়েকদিন পরেই সেতুর মাঝখানে দেবে যায়। স্থানীয়দের আশা ছিল সেতুটি দ্রুত মেরামত করা হবে। নৌকাযোগে পারাপারের অবসান ঘটবে এলাকাবাসীর। কিন্তু ৮ অক্টোবর সকালে স্রোতের টানে ভেঙে যায় সেতুর দেবে যাওয়া অংশসহ অর্ধেকটা।
স্থানীয়রা জানান, কাজের নিম্নমানের কারণে সেতুটি ভেঙে যাওয়ায় যুগ যুগ ধরে যাতায়াতের কষ্ট থেকে মুক্তি মিলছে না আমাদের। এখন বাড়তি টাকা ও সময় ব্যয় করতে হচ্ছে তাদের। ঘটছে ব্যবসাবাণিজ্যে ও শিক্ষায় ব্যাঘাত। কষ্টকর হয়ে পড়েছে রোগীদের হাসপাতালে আনা-নেওয়াসহ স্থানীয়দের যাতায়াত। এ থেকে রেহাই পাব কবে? এমন প্রশ্ন স্থানীয়দের।
এ বিষয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ছানা এন্টারপ্রাইজের মালিক ছানা মিয়ার সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করে পাওয়া যায়নি। বেলকা ইউপি চেয়ারম্যান ইব্রাহিম খলিলুল্লাহ বলেন, ইঞ্জিনিয়ারদের গাফলতি ও কাজের মান নিম্ন হওয়ায় সেতুটি ভেঙে গেছে। এলাকার অন্তত ২০ হাজার মানুষ যাতায়াত করে এখান দিয়ে। সেতুটি ভেঙে যাওয়ায় স্থানীয় মানুষের দুর্ভোগ আরও বেড়ে গেল। সুন্দরগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলী আবদুল মান্নাফ বলেন, সেতু দেবে যাওয়ার পর থেকে বিষয়টি তদন্তাধীন রয়েছে। তদন্ত রিপোর্ট পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।