রবিবার, ২৯ জানুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

বিএনপি কি আগামী নির্বাচনও বর্জন করবে?

কাজী সিরাজ

বিএনপি কি আগামী নির্বাচনও বর্জন করবে?

এক.

নির্বাচন কমিশন গঠনের লক্ষ্যে মহামান্য রাষ্ট্রপতি যে সার্চ কমিটি ঘোষণা করেছেন তাতে ঘোর আপত্তি জানিয়েছে বিএনপি। দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর তাত্ক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, ‘এ সার্চ কমিটি হয়েছে আওয়ামী লীগের কমিটি।’ কমিটিতে দুজন কর্মরত বিচারপতি, দুজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক এবং দুজন সাংবিধানিক পদাধিকারকে রাখা হয়েছে।  আইন পেশা ও আমলাতন্ত্রের বিষয়-বিশেষজ্ঞ কর্মরত কাউকে রাখা হয়নি। কমিটির প্রধান এর আগে মরহুম রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান মনোনীত সার্চ কমিটিরও প্রধান ছিলেন এবং সেই কমিটির সুপারিশে বিরোধী পক্ষের ভাষায় বর্তমান বিতর্কিত রকিব-কমিশন গঠিত হয়েছে বলে বিএনপি হয়তো ভয় পাচ্ছে। তাছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের যে দুজন শিক্ষককে মনোনীত করা হয়েছে তারা দুজনই সরকার সমর্থক নীলদল-হলুদ দলের সমর্থক। সাংবিধানিক পদাধিকারী দুজনও সরকারের পছন্দের নিযুক্ত। খটকা বিএনপির কেন, অন্য কারও লাগতে পারে। তাই বলে তাত্ক্ষণিক প্রতিক্রিয়া দেওয়া এবং রাষ্ট্রপতি মনোনীত কমিটিকে সরকারদলীয় কমিটি বলে অভিহিত করার অর্থ রাষ্ট্রপতিকে বিব্রত করা। এটা কি তারা জানতেন না যে, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করেই ‘রাষ্ট্রপতি তার কার্য সম্পাদন’ করবেন। তো তেমন কমিটি বিএনপিকে সন্তুষ্ট করার জন্য করা হবে ভাবলেন কী করে? যাদের নিয়ে কমিটি করা হয়েছে দলবিশেষের প্রতি কারও সমর্থন থাকলেও একজন ছাড়া বাকিদের কাছ থেকে ভালো ভূমিকা আশা করা যায় বলেও মনে করছেন অনেকে। বিএনপির অপেক্ষা করে প্রতিক্রিয়া দেওয়া উচিত ছিল। তাদের মাথায় রাখতে হবে আগামী সংসদ নির্বাচন। সে নির্বাচনে তারা যদি অংশগ্রহণ করতে চায় তাহলে কিছু অপছন্দের বিষয় ইগনোর করে তাদের মূল বিষয়ে দৃষ্টি ও শক্তি নিবদ্ধ করতে হবে। মনে রাখতে হবে নির্বাচনে অংশগ্রহণের ‘নিয়ত’ থাকলে নতুন নির্বাচন কমিশনের ব্যাপারে এখনই নেতিবাচক অবস্থান নিয়ে নিলে তারা কি লাভবান হবেন? আর তারা যদি নির্বাচন কমিশন গঠনের ব্যাপারে সরকারের ওপর একটা চাপ রাখতে চায় তাহলেও এগোতে হবে সতর্কতার সঙ্গে। বিএনপি আগামী নির্বাচনও বর্জন করবে এমন ধারণা যাতে জনমনে সৃষ্টি না হয়। তাহলে বিএনপির ভোটাররা ‘নতুন ভোট বাক্সের’ বিষয় মাথায় ঢুকিয়ে ফেলতে পারে। তাছাড়া যারা নির্বাচন করতে আগ্রহী তারাও দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়ে যেতে পারেন। খুঁজতে পারেন নতুন পথ।

দুই.

সরকার বলছে দেশে গণতন্ত্র আছে, সরকারের প্রধান প্রতিপক্ষ মাঠের প্রকৃত বিরোধী দল বিএনপি এবং তার মিত্ররা বলছে দেশে গণতন্ত্র নেই। অধ্যাপক ডাক্তার বদরুদ্দোজা চৌধুরীর বিকল্প ধারা, ডক্টর কামাল হোসেনের গণফোরাম, বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর কৃষক-শ্রমিক জনতা লীগ, সিপিবি, বাসদসহ নিবন্ধিত ও নিবন্ধনহীন আরও অনেক দলই বলছে দেশে গণতন্ত্রের দশা খুবই খারাপ। আমাদের এ ভূখণ্ডে গণতন্ত্রের ‘স্বাস্থ্য’ প্রায়ই খারাপ থেকেছে। গণতন্ত্রের ‘স্বাস্থ্যোদ্ধারের’ চেষ্টাও হয়েছে অবিরাম। কখনো কখনো সে ‘স্বাস্থ্য’ কিছুটা ভালোও হয়েছে। আমাদের দেশের রাজনৈতিক দলগুলোতে এখন যে ‘কীর্তিমানরা’ আছেন, তাদের মধ্যে পাকিস্তান আমলের গণতান্ত্রিক সংগ্রামে অংশগ্রহণের, এমনকি তা প্রত্যক্ষ করার অভিজ্ঞতাসম্পন্ন লোক ধীরে ধীরে একেবারেই কমে আসছে। এখন আবার রাজনৈতিক লেখাপড়া করার লোকও ‘দুষ্প্রাপ্য’ হয়ে যাচ্ছে। ফলে রাজনৈতিক ইতিহাসজ্ঞানের সীমাবদ্ধতার কথা তারা অস্বীকার করতে পারবেন না। সরকারি দলে যেমন, বিরোধী দলেও তেমন। সরকার নিজেদের নির্বাচিত সরকার হিসেবে দাবি করে বলছে, যেহেতু সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতায় ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দেশে একটি সংসদ নির্বাচন (১০ম সংসদ) হয়েছিল এবং সেই নির্বাচনে ‘সংখ্যাগরিষ্ঠ’ আসনে বিজয়ী হয়ে তারা সরকার গঠন করেছে, তাই এ সরকার একটি গণতান্ত্রিক সরকার। গণতন্ত্র নেই কোথায়? কিন্তু নির্বাচনটি কেমন হয়েছিল, দেশ-দুনিয়ার মানুষ সে নির্বাচন সম্পর্কে কী বলেছে, এখনো কী ধারণা পোষণ করে তা বলছে না। আর নির্বাচনই কী গণতন্ত্রের সব? একটি ভালো নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত সরকারের আমলেও যদি আইনের শাসন না থাকে, বিচার বিভাগের কার্যকর স্বাধীনতা না থাকে, ভিন্ন মতাবলম্বীর বাক, ব্যক্তি স্বাধীনতা, সভা-সমাবেশের স্বাধীনতা, রাষ্ট্রশাসনের সব পর্যায়ে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাপনা, ব্যবসা-বাণিজ্যসহ সব উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে প্রকৃত স্টেকহোল্ডারদের অংশগ্রহণের নিশ্চয়তা, মানুষের সৎ উপার্জিত সম্পদের সুরক্ষা ও সর্বস্তরে দুর্নীতি প্রতিরোধের নিশ্চয়তা ও চর্চা না থাকে, তেমন সরকারকেও আর গণতান্ত্রিক সরকার বলা চলে না। মানুষের আবেগ-অনুভূতি এবং ভয়কে পুঁজি করেও একটি গণতান্ত্রিক সরকার কর্তৃত্ববাদী ও ফ্যাসিস্ট হয়ে উঠতে পারে। সম্প্রতি পোপ ফ্রান্সিস এমন একটি কঠিন উচ্চারণ করে বিশ্বব্যাপী এ প্রবণতায় তার উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। ক্ষমতাসীনরা ভাবছেন না পাকিস্তান আমলে গণতন্ত্রের জন্য এ ভূখণ্ডে কী তীব্র লড়াই হয়েছে। মজলুম জননেতা মওলানা ভাসানী, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ এদেশের বাম প্রগতিশীল ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনের নেতারা কী অসীম ত্যাগ স্বীকার করেছেন। শক্তি প্রয়োগ করে, রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস চালিয়ে শেষ পর্যন্ত শেষ রক্ষা করতে পারেনি শাসকরা। আবার যারা বিরোধী দলে আছেন, তারা স্মরণ করতে পারছেন না, সাহসী গণআন্দোলন ও ত্যাগ-তিতিক্ষা ছাড়া শৃঙ্খলিত গণতন্ত্রকে পুনরুদ্ধার করা সম্ভব নয়। পাকিস্তান আমলে তো বটেই, স্বাধীন বাংলাদেশেও গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম হয়েছে প্রায় সব সরকারের আমলেই। হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের শাসনামলে যেমন লড়াই হয়েছে, তেমনি গণতন্ত্রের লড়াই হয়েছে বেগম খালেদা জিয়া এবং শেখ হাসিনার অতীত আমলেও। পাকিস্তান আমলে যেমন ধারাবাহিকভাবে ছাত্রসমাজ সামনে থেকে স্বৈর ও সামরিক শাসনকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছে, সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্য গড়ে ১১ দফা আন্দোলনের মাধ্যমে সামরিক স্বৈরাচারের মসনদ টলিয়ে দিয়ে সত্তরের নির্বাচন ও একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে যুগান্তকারী ভূমিকা পালন করেছে, নব্বইয়ের ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থানেও সর্বদলীয় ঐক্য গড়ে ছাত্রসমাজ এরশাদের পতনকে অনিবার্য করতে বলিষ্ঠ ও সাহসী ভূমিকা পালন করেছে। ঊনসত্তরের সেই তোফায়েল, কামরান, নূরে আলম সিদ্দিকী, শাজাহান সিরাজ, রব, মাখন, মোস্তফা জামাল হায়দার, মাহবুবউল্লাহ, সাইফুদ্দিন আহমেদ মানিক, শামসুদ্দোজা, মাহবুবুল হক দোলন প্রমুখ এবং নব্বইয়ের আমান, খোকন, আলম, হাবিব, অসীম কুমার, টিংকু, প্রধান, সাইফুদ্দিন মনি, সুরঞ্জন ঘোষ, শিরিন সুলতানা (রোকেয়া হলের নির্বাচিত ভিপি) প্রমুখের মতো ছাত্রনেতার জন্ম এখন হয় না কেন, হচ্ছে না কেন? ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ কোনো কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে গত ২৬ বছর কোনো ছাত্র সংসদ নির্বাচনই হচ্ছে না। রাজনৈতিক দলের ভুলেই ছাত্র আন্দোলনের আজ এ দশা। গণতন্ত্র রুগ্ন।

সরকার বলছে দেশে গণতন্ত্র আছে, তবে একটু কম আছে। তাদের তত্ত্ব হচ্ছে ‘অধিক উন্নয়ন, কম গণতন্ত্র’, আবার তাদের অতি উৎসাহীরা বলেন, ‘আগে উন্নয়ন পরে গণতন্ত্র।’ কিন্তু বিশ্বব্যাপী সত্য হচ্ছে উন্নয়ন ও গণতন্ত্র অবিচ্ছিন্ন ও অবিচ্ছেদ্য বিষয়। উন্নয়নহীন গণতন্ত্র যেমন অর্থহীন, তেমনি গণতন্ত্রহীন উন্নয়নে উন্নয়ন হয় ক্ষমতার আশেপাশে থাকা কিছু চিহ্নিত লোকের, মুষ্টিমেয় সুবিধাভোগীর। এদের রক্ষার জন্য— যেমন রেন্টাল ও কুইক রেন্টালের মালিকদের রক্ষার জন্য সংসদে ইনডেমনিটি (দায়মুক্তি) বিল পাস হয়, রাষ্ট্র তাদের সুরক্ষা দেয়, কিন্তু জনগণের প্রত্যক্ষ সংশ্লিষ্টতাহীন, জবাবদিহিতাহীন, আইনের শাসনহীন, বিচার বিভাগের প্রকৃত স্বাধীনতাহীন, জনগণের ভোটাধিকারসহ মৌলিক অধিকারহীন শৃঙ্খলিত গণতন্ত্রের উন্নয়নে ব্যাপক জনগণের কোনো উন্নয়ন হয় না। বড় বড় কর্মযজ্ঞে বড় বড় দুর্নীতির বিষবৃক্ষ মহীরুহ রূপ ধারণ করে। বিরোধী দল বলছে গণতন্ত্র নেই। কিন্তু এটা গত্বাঁধা একটা মুখের বুলিতে পরিণত হয়েছে বিএনপির। সন্দেহ নেই দলটি বিপুলভাবে জনসমর্থিত। কিন্তু ভীতু, দুর্বল নেতৃত্ব ও সাংগঠনিক ভঙ্গুর দশার কারণে সরকারের বিরুদ্ধে জনগণকে নিয়ে মাঠে নামতে পারছে না। গণতন্ত্র নেই বলছেন, গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার জন্য কী করছেন? জবাব একটাই, মামলা-মোকদ্দমা, জেল-জুলুম, গুম-হত্যার ভয়ে নামা যাচ্ছে না। কখনো কি কোনো সরকার বিএনপির মিটিং, মিছিল, বিক্ষোভের জন্য রাজপথে ফুল বিছিয়ে রেখেছিল? এরশাদ আমলে বিএনপির কজন পরিচিত নেতা জেলের বাইরে ছিলেন? শেখ হাসিনার প্রথম সরকারের আমলে? রাজনীতিতে ফুলের মালা আর জেলের তালার দূরত্ব খুব বেশি থাকে না এটা সবার জানা। আদর্শের লড়াইয়ে প্রাণও যায়। এক সময় জেলের ঝুঁকি যেমন নিয়েছেন, গুলির মুখেও দাঁড়িয়েছেন। তখন পারার আর এখন না পারার কারণ খুব একটা দুর্বোধ্য নয়। এখন যারা বিএনপিতে বড় বড় পদপ্রাপ্ত হয়েছেন তাদের রাজনীতিতে বা দলে প্রবেশকালের অর্থবিত্তের সঙ্গে বর্তমান অর্থবিত্তের একটা হিসাব কষলেই স্পষ্ট হয়ে যাবে সব। আসলে সব নষ্টের গোড়া এ ‘হিসাবের খাতা’; অথবা বিএনপির বড় বড় পদ দখলদার, সাবেক মন্ত্রী-মিনিস্টার-এমপির ‘আমলনামা’। ওই সময় যারা কোনোমতে বাসে চড়তে পারতেন, এখন হেলিকপ্টারে উড়ে যান এলাকায় সভা করতে। সম্পদের মায়া নাকি সন্তানের মায়ার মতো। রাজনীতি ও আদর্শের মায়ায় ঝুঁকি নেওয়া সম্ভব, আবার সম্পদের মায়ায় নিরাপদ দূরত্বে থাকাই এদের কাছে বুদ্ধিমানের কাজ। ফলে দেশে গণতন্ত্র না থাকলে ‘উনাদের’ কী যায় আসে? কোনো সরকার যখন ক্ষমতা দীর্ঘস্থায়ী করতে চায় তাদের প্রতিপক্ষকে মোকাবিলার নানা কৌশল-অপকৌশল প্রয়োগ করতে, রাষ্ট্রশক্তিকে ব্যবহার করতে অতীতেও দেখা গেছে। বিএনপিও ক্ষমতায় থাকাকালে কম-বেশি করেছে। এসব কিছু সাহস, যোগ্যতা ও ‘রণকৌশলের’ মাধ্যমে মোকাবিলা করতে পারলেই সাফল্য আসে। দায়িত্বপ্রাপ্ত ‘খলিফারা’ মাঠে নামলেই তৃণমূলের নেতাকর্মী-সমর্থকরা মাঠে নামতে সাহসী হয়, জনগণও তাতে শরিক হতে উদ্বুদ্ধ হয়। কিন্তু সব কিছুতে যদি সরকারের ওপর দোষ চাপানোয়, প্রেস ক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জ আর রিপোর্টার্স ইউনিটির একশ লোকের মিলনায়তনে অথবা নয়াপল্টনে ব্রিফিংবাজির মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা হয় তাহলে গণতন্ত্রের সংগ্রাম জোরদার হবে কী করে? দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ দেশে গণতন্ত্র ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য নেতা-কর্মীদের প্রতি মাঠের আন্দোলনে মনোযোগী হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, তা না হলে ‘আমরা আবার ব্যর্থ হব।’ পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, মাঠে নেমে গণতন্ত্রের সংগ্রাম জোরদার করতে হলে বিএনপিকে প্রথমে ভীরু-কাপুরুষমুক্ত হতে হবে। দুর্নীতিবাজ, চাঁদাবাজ, তোলাবাজ হিসেবে চিহ্নিত ও জনগণ কর্তৃক খারাপ লোক হিসেবে বিবেচিত ব্যক্তিদের দলের গণতন্ত্রের ৭ নম্বর দফা অনুযায়ী বের করে দিতে হবে। মাঠের সাহসী তরুণ-যুবকদের নিয়ে দলের নেতৃত্ব কাঠামো নির্মাণ করতে হবে। যাকে যে মর্যাদার আসনে রাখা দরকার তাকে সেখানে রাখতে হবে। ‘রাজনৈতিক বালক-বালিকাদের’ মাথার ওপর বসিয়ে সিনিয়রদের তাদের অধঃস্তন করে দিলে সংগঠন কার্যকারিতা হারায়। ছাত্রদলের প্রাক্তন নেতাকে ভাইস চেয়ারম্যান আর যুবদলের প্রাক্তন বা মূল দলের সিনিয়র নেতাকে যুগ্ম মহাসচিব বানিয়ে দিলে কাজ হবে কী করে? আবার এমপি হয়েও যারা এলাকায় যেতে পারেননি, তাদের বড় পদ-পদবিতে বসানোর দরকারটাই বা কী? একাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপি যদি সঠিকভাবে এগোতে না পারে, মওদুদ আহমদের বক্তব্যই সত্য হবে। গণতন্ত্রের সংগ্রামে ব্যক্তিগত ও পারিবারিক সমস্যা সমাধানের কর্মসূচি পরিহার করে জনগণের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়কে প্রাধান্য দিতে হবে। এ সরকারের আমলে অনেক উন্নয়নমূলক কাজ হয়েছে, এসব দৃশ্যমান। আর্থিক খাতে নানা অনিয়মের পরও অগ্রগতি আছে। জিডিপি হার বেড়ে ৬.৮ হয়েছে, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৩২ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে। নানা সামাজিক ক্ষেত্রের সূচকে ভারতসহ আশপাশের অনেক দেশকে বাংলাদেশ পেছনে ফেলেছে। এসব বাস্তবতার নিরিখে বিএনপি আরও ভালো ও উন্নত কী করবে তেমন বিশ্বাসযোগ্য কর্মসূচি দিয়ে মাঠে নামলেই জনগণের সমর্থন পেতে পারে। এখানে শর্টকাট কোনো পথ নেই। ধৈর্য ধরে এগোতে হবে তাদের। সাংবিধানিক নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনের পথ অনুসরণ করে এগোতে হবে। বড় জনসভাই আন্দোলনের একমাত্র পথ নয়। আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম ২২ জানুয়ারি কিশোরগঞ্জের এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, ‘বঙ্গবন্ধু মাত্র ১৮ জনের জনসভায়ও প্রধান অতিথি হিসেবে ভাষণ দিয়েছেন।’ বঙ্গবন্ধু এভাবেই এগিয়েছেন ও সফল হয়েছেন। বিএনপি তো এসব থেকে শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে।

তিন.

আগামী নির্বাচনের জন্য বিএনপি কি এখন প্রস্তুত? এমন প্রশ্নের জবাবে পর্যবেক্ষকরা বলতে চান— না, সে প্রস্তুতি তাদের নেই। দল গোছানোর কথা বারবার বলার পরও অধিকাংশ জেলায়ই তাদের সাংগঠনিক অবস্থা দুর্বল। দ্বন্দ্ব-সংঘাতে ও কেন্দ্রের নানা তেলেসমাতিতে অধিকাংশ জেলায় সম্মেলনই করতে পারেনি। থানা কমিটিগুলোতেও একই পরিস্থিতি। যারা ঢাকায় নমিনেশন বাণিজ্যের আশায় বসে আছেন, সংগঠন না থাকলে বা দুর্বল থাকলে তাদের লাভ। বেচা-বিক্রিতে সুবিধা। বিএনপির উচিত সেদিকে মনোনিবেশ করা। ৩০০ আসনে উপযুক্ত প্রার্থী বাছাই করা। যোগ্য ও সৎ প্রার্থী না থাকলে বিএনপির কোনো তালিকা অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন বানিয়ে দিলেও তারা সুবিধা করতে পারবে না।  বিচারপতি লতিফুর রহমানের নেতৃত্বে তত্ত্বাবধায়ক সরকার তো আওয়ামী লীগ শাসনামলে হয়েছিল, নির্বাচন কমিশনও। সে নির্বাচনে বিএনপি জেতেনি? এখন এত ভয় কেন?

লেখক : সাংবাদিক, কলামিস্ট।

ই-মেইল : [email protected]

 

সর্বশেষ খবর