শাহবাগে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে ছাত্রলীগ, যুবলীগ সংঘর্ষের একপর্যায়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) ও হাসপাতালে ব্যাপক ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে।
বিক্ষোভকারীরা হাসপাতালের ভিতরে ঢুকে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের খুঁজতে থাকেন। এ সময় হাসপাতালের ভিতরে থাকা গাড়ি, অ্যাম্বুলেন্স ও মোটরসাইকেলে ভাঙচুর করা হয়। কয়েকটি মোটরসাইকেলে আগুন দেওয়া হয়। পরে বিক্ষোভকারীরা হাসপাতালের ভিতর থেকে বেরিয়ে আসার সময় ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা। তখন বিক্ষোভকারীরা আবার ভিতরে ঢুকে ভাঙচুর শুরু করেন। এরপর হাসপাতালের ভিতর থেকে বেরিয়ে যান বিক্ষোভকারীরা। তারা শাহবাগ মোড়ে গিয়ে অবস্থান নেন। সেখানে বিক্ষোভে এক দফা দাবিতে স্লোগান দেওয়া হয়। সরকার পতনের এক দফা দাবিতে রাজধানী শাহবাগে নামেন আন্দোলনকারীরা। তারা বিভিন্ন স্থান থেকে শাহবাগে এসে জড়ো হতে থাকেন। একপর্যায়ে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে ছাত্রলীগ, যুবলীগের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। দুই পক্ষের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার একপর্যায়ে প্রথমদিকে শাহবাগে সতর্ক অবস্থানে পুলিশ সদস্যরা উপস্থিত থাকলেও পরে পুলিশ সদস্যরা সেখান থেকে সরে যান। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সকাল থেকে শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন আন্দোলনকারীরা। তারা বিভিন্ন স্থান থেকে মিছিল নিয়ে শাহবাগে জড়ো হন। সরকারের পদত্যাগের দাবিতে তারা নানা স্লোগান দিচ্ছিলেন। শাহবাগ থানার সামনে অবস্থান নেয় পুলিশ। বিএসএমএমইউর সামনে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা স্লোগান দিচ্ছিলেন। একপর্যায়ের আন্দোলনকারীরা আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের ধাওয়া দেন। তারা হাসপাতালের ভিতরে ঢুকে যান। সেখান থেকে আন্দোলনকারীদের ইটপাটকেল ছোড়া হচ্ছিল।
বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা প্রশান্ত কুমার মজুমদার বলেন, বিএসএমএমইউর ভিতরে থাকা অন্তত ৫২টি গাড়িতে ভাঙচুর ও আগুন দেওয়া হয়েছে। বিক্ষোভকারীদের একটি অংশ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবন, ‘এ’ ‘বি’ ‘সি’ ও ‘ডি’ ব্লকে ভাঙচুর করে। এ সময় চিকিৎসক, কর্মকর্তাসহ আটজন আহত হন। এদের মধ্যে একজনের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় আইসিইউতে ভর্তি করা হয়। হাসপাতালে হামলায় সময় আতঙ্কিত হয়ে অনেক রোগী ও রোগীর স্বজন ছোটাছুটি করেন। এ সময় অনেকে আহত হন। এ ঘটনায় চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মীদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করে। হামলা প্রসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (একাডেমিক) অধ্যাপক ডা. আতিকুর রহমান বলেন, হাসপাতাল হলো সমাজসেবামূলক প্রতিষ্ঠান। এখানে আহত রোগীদের চিকিৎসা দেওয়ার সময় কে কোন দল করে এটা বিবেচনা করা হয় না। এমন একটি প্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ নিন্দনীয়। দেশের এমন পরিস্থিতিতে আহত রোগীর অনেক বেশি চাপ থাকে। কিন্তু এ সময় অনেক চিকিৎসক, নার্স ও অন্য স্বাস্থ্যকর্মীরা হাসপাতালে আসতে চান না বা আসতে পারেন না। এর মধ্যে এভাবে যদি হাসপাতালে ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগ হয় তাহলে আমরা চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীর সংকটে পড়ব। আহত রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া অসম্ভব হয়ে পড়বে। এ বিষয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী সামন্ত লাল সেন বলেন, হাসপাতালে আক্রমণ কাম্য নয়। সবাইকে এ কাজ থেকে নিবৃত থাকা উচিত।