চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালটি সরকারি পর্যায়ে বৃহত্তর চট্টগ্রামের মানুষের নির্ভরযোগ্য স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান। এখানকার হৃদরোগ বিভাগে শয্যা আছে ৮০টি। সঙ্গে সিসিইউ ইউনিটে শয্যা আছে ২০টি। বৃহত্তর চট্টগ্রামের ৪ কোটি মানুষের জন্য এ ১০০টি শয্যাই ভরসা। ফলে অন্তহীন ভোগান্তি ও দুর্ভোগ মাড়িয়েই হৃদরোগে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসাসেবা গ্রহণ করতে হয়।
হৃদরোগের চিকিৎসা ব্যবস্থার এমন ভঙ্গুর-দুরবস্থার মধ্যেই আসছে বিশ্ব হৃদরোগ দিবস। কাল রবিবার বিশ্ব হার্ট দিবস। এবার দিবসের উপজীব্য বিষয় ‘কর্মের জন্য হৃদয় ব্যবহার করুন’। দিবস উপলক্ষে চমেক হাসপাতালের হৃদরোগ বিভাগ এবং চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয়ের উদ্যোগে নানা কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে।
চমেক হাসপাতালের হৃদরোগ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান ডা. আশীষ দে বলেন, শয্যা সংকট তো আছে। চিকিৎসা উপকরণ ও জনবল সংকটও আছে। বিশেষ করে হৃদরোগের মতো একটি জরুরি বিভাগে অধ্যাপকের পদই নেই। অথচ এখানে পোস্ট গ্র্যাজুয়েটের মতো উন্নত ডিগ্রি দেওয়া হয়। অন্যান্য জনবল এবং বিভিন্ন উপকরণেরও সংকট আছে। তিনি বলেন, এখানে প্রতিদিন বহির্বিভাগে চিকিৎসা নেন ১৫০ জন। দৈনিক ৬০ থেকে ৭০ জন নতুন রোগী ভর্তি হন। তবে শয্যার বাইরেও রোগী ভর্তি করে চিকিৎসা দিতে হয়। কারণ সরকারি হাসপাতাল হিসাবে কোনো রোগীকে ফেরত দেওয়া যায় না। কিন্তু প্রতিনিয়তই হৃদরোগী বাড়ছে। তাই এই রোগের চিকিৎসা ব্যবস্থাপনাও বৃদ্ধি করা দরকার।
জানা যায়, চমেক হাসপাতাল বৃহত্তর চট্টগ্রামের মানুষের জন্য একমাত্র নির্ভরযোগ্য সেবা প্রতিষ্ঠান। ১৯৯৮ সালে চমেক হাসপাতালে ছয়টি শয্যা নিয়ে হৃদরোগ বিভাগ চালু হয়। পর্যায়ক্রমে এটি ৮০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। কিন্তু হৃদরোগ বিভাগটিও নানা সমস্যা-সংকটে জর্জরিত। হাসপাতালে অধ্যাপকের পদই নেই। কিন্তু এখান থেকে পোস্ট গ্র্যাজুয়েটসহ চিকিৎসা শিক্ষার উচ্চতর ডিগ্রি দেওয়া হয়। সাধারণ শয্যা আছে ৮০টি, কিন্তু রোগী ভর্তি থাকে ২ শতাধিক। ফলে অনেক রোগীকে বারান্দা বা মেঝেতে রেখে চিকিৎসা নিতে হয়। এটি হৃদরোগীর জন্য বেশ ঝুঁকিপূর্ণ। ২০টি সিসিইউ শয্যা থাকলেও তা সব সময় সংকট থাকে এ শয্যার। দুটি এনজিওগ্রাম মেশিন থাকলেও দীর্ঘদিন ধরে একটি নষ্ট, অপরটিও মাঝে মাঝে বিকল হয়ে যায়। ফলে হার্টের রিং পরানোর সেবাটি কখনো বন্ধ, কখনো ধীর গতিতে চলে। দুর্ভোগে পড়তে হয় রোগীকে। ক্যাথল্যাবও (ক্যাথেটারাইজেশন ল্যাবরেটরি) আছে একটি। এ কারণে রোগীকে এর সেবা নিতে দিনের পর দিন অপেক্ষা করতে হয়। বর্তমানে হৃদরোগ বিভাগে আছেন, চারজন সহযোগী অধ্যাপক, আটজন সহকারী অধ্যাপক, একজন সিনিয়র কনসালট্যান্ট এবং তিনজন কনসালট্যান্ট।