ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) দৈনিক মজুরির (কাজ করলে টাকা, না করলে নয়) ভিত্তিতে বিভিন্ন সময় নিয়োগ দেয় পরিচ্ছন্নতা কর্মী। এসব কর্মীর মাসিক বেতন সর্বসাকল্যে ১৭-১৮ হাজার টাকা। অস্থায়ী এই পদে মোটা অঙ্কের টাকা ঘুষ দিয়ে চাকরি নেন কর্মীরা। কারণ, এই কাজে উপস্থিত না থেকেও বেতন পাওয়া যায়। পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের ঠিকা (একজনের পরিবর্তে আরেকজন) নিয়োগেও হয় বড় বাণিজ্য। বিগত সময়ে পরিচ্ছন্নতা কর্মী থেকে পরিচ্ছন্নতা পরিদর্শক পদে নিয়োগ ও বদলিতে বড় ধরনের লেনদেন হয়েছে বলে জানা গেছে।
অনুসন্ধান ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রায় প্রতি বছরই ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন মশক নিধন, পরিচ্ছন্নতাসহ বিভিন্ন কাজে দৈনিক মজুরির ভিত্তিতে জনবল নিয়োগ দিয়েছে। এদের বেতন দৈনিক অদক্ষ ৫৭৫ ও দক্ষ ৬০০ টাকা হারে মাসে ১৭-১৮ হাজার টাকা হয়ে থাকে। অল্প বেতন হলেও এসব পদে চাকরি পেতে মরিয়া থাকে আবেদনকারীরা। বিশেষ করে সংস্থাটির বর্জ্য বিভাগের পরিচ্ছন্নতা কাজে। ফলে পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের বেতন কম এবং চাকরি অস্থায়ী হলেও নিয়োগে হয় বড় ধরনের বাণিজ্য। প্রতিটি কর্মী থেকে ৪ থেকে ৫ লাখ টাকা নেওয়া হয়েছে। আর এই টাকা নিয়েছে স্ক্যাভেঞ্জার্স ইউনিয়ন, সংস্থাপন বিভাগ ও কাউন্সিলরের সিন্ডিকেট চক্র। বর্জ্য বিভাগের বিভিন্ন ওয়ার্ডের পরিচ্ছন্নতা কর্মীর সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এসব কর্মী জানান, প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা থেকে পরিচ্ছন্নতা-পরিদর্শক পর্যন্ত একটি সিন্ডিকেট রয়েছে। এই সিন্ডিকেট পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের থেকে মাসিক মাসোহারা নিয়ে থাকে। কয়েকজন পরিচ্ছন্নতা-পরিদর্শকও বদলি বাণিজ্য করে থাকেন বলে তাদের অভিযোগ। অল্প টাকা বেতনের চাকরিতে বড় অঙ্কের ঘুষ দেওয়া প্রসঙ্গে তারা বলেন- রাস্তা, নালা-নর্দমা ও খাল পরিষ্কারে দৈনিক মজুরির ভিত্তিতে কাজ করে দক্ষ ও অদক্ষ কর্মীরা। এরা কাজ করে অল্প সময়। তিন থেকে চার ঘণ্টার বেশি নয়। অথচ কাজ করার কথা আট ঘণ্টা। অনেকে এখানে কাজ করে অন্য সরকারি দপ্তরে পরিচ্ছন্নতা কর্মীর চাকরি করে। অনেকে তিন-চার ঘণ্টার কাজ শেষ করে বিকল্প কাজও করেন। আবার অনেকে নিজের পরিবর্তে অন্যজনকে কাজে পাঠান। এ ছাড়া এসব কর্মীর অনেকে কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে মাসের পর মাস কাজে আসেন না। কিন্তু মাস শেষে বেতন ঠিকই উঠিয়ে নেন। এই বেতনের অর্ধেক টাকা নিয়ে নেন পরিচ্ছন্নতা-পরিদর্শক। ঠিকা (কর্মীর পরিবর্তে অন্যজন) পরিচ্ছন্নতাকর্মী নিয়োগেও হয়েছে বড় বাণিজ্য। নেওয়া হয়েছে ৩ থেকে ৫ লাখ টাকা। এর সঙ্গে কর্মকর্তা, স্ক্যাভেঞ্জার্স ইউনিয়ন ও সংশ্লিষ্ট পরিদর্শক সিন্ডিকেট জড়িত থাকার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
ডিএসসিসির প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা মোহাম্মদ নাছিম আহমেদ বলেন, পরিচ্ছন্নতা-পরিদর্শকের অনিয়মের বিষয়টি আমরা জেনেছি। খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।