রাজধানীজুড়ে সড়কের বেহাল দশা। মূল সড়ক থেকে অলিগলি, সর্বত্রই এবড়োখেবড়ো আর খানাখন্দে ভরা। কোথাও আবার অবস্থা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, ঘর থেকে বের হওয়া প্রায় বন্ধ হওয়ার জোগাড়। ভাঙাচোরা, খানাখন্দ এবং সড়ক কাটা নগরীর অসংখ্য রাস্তা। এসব সড়কে ঘটছে দুর্ঘটনা। ঝুঁকি নিয়ে রিকশা, অটোরিকশা এবং ভাড়ায়চালিত মোটরবাইকে চলাচল করতে গিয়ে পথচারী ও যাত্রীদের সারাক্ষণ দুশ্চিন্তায় থাকতে হয়, কখন দুর্ঘটনার কবলে পড়েন তারা। এসব সড়কে যানজট এখন নিত্যসঙ্গী। আর প্রতিদিনই ভোগান্তিতে পড়তে হয় নগরবাসীকে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, রাজধানীর মালিবাগ থেকে খিলগাঁও হয়ে সায়েদাবাদ সড়ক। পুরো সড়কটির অধিকাংশ স্থানে ভাঙাচোরা ও ছোট-বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে টিকাটুলি থেকে খিলগাঁওয়ের দিকে আসতে সড়কের অবস্থা বেশি খারাপ। ছোট-বড় অসংখ্য গর্ত রয়েছে সড়কটিতে। এখানে প্রায় ঘটে দুর্ঘটনা। সিএনজিচালিত অটোরিকশা, প্রাইভেটকার ও মালবাহী ট্রাকগুলো দুর্ঘটনার মুখোমুখি হয় বেশি। একই অবস্থা সায়েদাবাদ-যাত্রাবাড়ী সড়কে। ফ্লাইওভারের নিচের সড়কটিতে অসংখ্য বড় গর্ত রয়েছে। রিকশা, সিএনজিচালিত অটোরিকশা, প্রাইভেটকারসহ ছোট গাড়িগুলো প্রায়ই দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। বড় গর্তগুলোতে বাস ও ট্রাকের চাকা যখন পড়ে তখন উল্টে যাওয়ার উপক্রম হয়। কথা হয় ঢাকা-কুমিল্লা (লাকসাম) সড়কে যাতায়াত করা তিশা চালক মো. ইবরাহীম মিয়ার সঙ্গে। তিনি বলেন, সায়েদাবাদ থেকে যাত্রাবাড়ী সড়কটি দীর্ঘদিন ব্যবহারের অনুপযোগী। সম্প্রতি বৃষ্টিতে খানাখন্দের পরিমাণ অনেক বেড়েছে। অনেক জায়গায় বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এ সড়ক দিয়ে বাস চলাচল করা খুবই রিস্ক মনে হয়। আর এসব গর্তের কারণে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে। একই সঙ্গে গাড়ির গতি কমে যায়। বাড়ে যানজটের তীব্রতা। এ ছাড়া মুগদা বিশ্বরোড থেকে মুগদা মেডিকেল কলেজ হয়ে গ্রিন মডেল টাউন পর্যন্ত সড়কটির অবস্থা ভয়াবহ। সড়কটির সাড়ে তিন কিলোমিটার প্রশস্ত করার উদ্যোগ নিয়ে দক্ষিণ সিটি করপোরেশন অনেক বাড়িঘর ভেঙে ফেলেছে। সরকার পরিবর্তনের পর সংস্কারের উদ্যোগ আর নেওয়া হয়নি। এখন পুরো সড়কটি চলাচলের অনুপযোগী। অসংখ্য স্থানে রয়েছে ছোট বড় গর্ত। খানাখন্দ এতই গভীর যে, বৃষ্টির পানি জমলে বোঝার উপায় থাকে না এটি পুকুর না সড়ক। এলাকার মানুষের এই দুর্ভোগ কত দিন থাকবে কিংবা কবে এই সড়ক ঠিক হবে তাও কেউ বলতে পারছেন না। ‘রামপুরা-আমুলিয়া-ডেমরা’ মহাসড়কের করুণ অবস্থা বর্ণনাতীত। এ মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে বড় বড় গর্ত ও খানাখন্দের কারণে যানচলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এ মহাসড়কে দিবা-রাত্রি ট্রাক-বাসসহ যানবাহনের দীর্ঘ সারি নিত্যনৈমিত্তিক। পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি)-এর আওতায় এ মহাসড়ক চার লেনে উন্নীত করার প্রকল্পটি বাস্তবায়নের উদ্যোগ মুখ থুবড়ে পড়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মহানগরীর আদাবর, শেখেরটেক, মোহাম্মদপুরের বিভিন্ন সড়ক, মিরপুর ও শ্যামপুরের বিভিন্ন সড়কে কষ্ট সহ্য করে ওই এলাকার মানুষ চলাচল করছেন। পুরান ঢাকার ৪৮ ওয়ার্ডের কলার আড়ত, কবরস্থান রোড, বিবির বাগিচা, সুতি খালপাড় এবং ৪৯ নম্বর ওয়ার্ডের ধলপুর, বাদল সর্দার গলি খুঁড়ে ক্ষতবিক্ষত করে রেখেছে ঢাকা ওয়াসা। একই অবস্থা ৫০ নম্বর ওয়ার্ডের নবীনগর, ৫২ নম্বর ওয়ার্ডের লালমিয়া সরকার রোড, মুরাদপুর মাদরাসা রোড, মুরাদপুর মেডিকেল রোড, মুরাদপুর হাইস্কুল রোডসহ ওয়ার্ডে প্রধান সড়ক, ৫৩ নম্বর ওয়ার্ডের বাগানবাড়ি গলি এলাকা, ৫৮ নম্বর ওয়ার্ডের নামা শ্যামপুর, মাদবর বাজার, শাহী মসজিদ রোড, মাদবর বাজার রোড, সালাউদ্দিন স্কুল রোড, সবুজবাগ, ৫৯ নম্বর ওয়ার্ডের মেরাজ নগর এ ব্লক, মেরাজ নগর ডি ব্লকের ১, ২ ও ৩ নম্বর গলি, পূর্ব কদমতলী, মোহাম্মদবাগ এলাকার সড়কগুলো খুঁড়ে ফেলে রাখা হয়েছে। ৬০ নম্বর ওয়ার্ডের দক্ষিণ দনিয়া শাহী মসজিদ রোড, পুরান ঢাকার ৬১ নম্বর ওয়ার্ডের পাটেরবাগ, নোয়াখালীপট্টি, দক্ষিণ দনিয়া, আদর্শ বালিকা বিদ্যালয় রোড, বর্ণমালা স্কুল রোড, এ কে স্কুল রোড, ৬২ নম্বর ওয়ার্ডের শেখদি স্কুল রোড, নয়ানগর কুতুবখালী, ছনটেক, গোবিন্দপুর, বাগানবাড়ি, মেধাবাড়ি, শেখদী আব্দুল্লাহপুর মোল্লা স্কুল রোড এবং ৬৩ নম্বর ওয়ার্ডের মাতুয়াইল কবরস্থান রোড, সুলতানা মেম্বার বাড়ির রোডের অবস্থাও করুণ। মানুষের চলাচল উপযোগী নেই ওয়ার্ডের সড়কগুলোর। এ ছাড়া ৬৫ নম্বর ওয়ার্ডের ফার্মের মোড়, মুসলিম নগর, মোগল নগর, কেরানিপাড়াসহ বিভিন্ন এলাকার অলিগলির অবস্থাও খুবই নাজুক। মিরপুর, উত্তর খান ও দক্ষিণ খানের অবস্থাও ভয়াবহ।
এ বিষয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রশাসক মো. নজরুল ইসলাম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকার সড়ক নিয়ে এরই মধ্যে আমাদের কাছে অনেক অভিযোগ এসেছে। এই বিষয়টা নিয়ে আমরা সভা করেছি। বেশি সমস্যাগ্রস্ত এলাকাকে প্রাধান্য দিয়ে কাজ শুরু করা হবে। প্রকৌশলীদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, খুব শিগগির কাজ শুরু হবে।