৬ ডিসেম্বর, ২০১৯ ১৯:৪৮

বেরোবিতে 'বি' ইউনিটের ভর্তি কার্যক্রম বন্ধ রাখার আহ্বান ৫০ শিক্ষকের

রংপুর প্রতিনিধি

বেরোবিতে 'বি' ইউনিটের ভর্তি কার্যক্রম বন্ধ রাখার আহ্বান ৫০ শিক্ষকের

ফাইল ছবি

বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষে প্রথম বর্ষের (স্নাতক) ভর্তি পরীক্ষায় একটি ইউনিটে প্রথম হলেও  অন্য দুইটি ইউনিটে ফেল করেছে মিশকাতুল  জান্নাত নামে এক ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী। ওই শিক্ষার্থী‘বি’ ইউনিটে (সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ) মানবিক থেকে রেকর্ড পরিমাণ মার্কস নিয়ে প্রথম হলেও ‘এ’ ইউনিট এবং ‘এফ’ ইউনিটে ফেল করেছে। 

এমনকি ‘বি’ ইউনিটে তিনি যে পরিমাণ মার্কস পেয়েছেন অন্য কোন ইউনিটের কোনও শিফটে কেউ সে পরিমাণ মার্কস তুলতে পারেনি। মিশকাতুল জান্নাত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের ঘনিষ্ট ও এক শিক্ষকের বোন হওয়ায় বিষয়টি নিয়ে ধোঁয়াশা সৃষ্টি হয়েছে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মাঝে। 

বিষয়টি জানাজানি হওয়ায় রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি সম্পাদকসহ ৫০ জন শিক্ষার্থী বৃহস্পতিবার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয় রেজিষ্টার বরাবর 'বি' ইউনিটের ভর্তি কার্যক্রম বন্ধ রাখাসহ পুরো বিষয় তদন্ত করে দায়ীদের চিহ্নিত করে বিচার দাবি করে লিখিত অভিযোগ প্রদান করেছেন। রাতেই বিশ্ববিদ্যালয় কতৃপক্ষ তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন বলে জনসংযোগ বিভাগ এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছেন। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে মিশকাতুল জান্নাত ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি পরীক্ষায় এ, ‘বি’ এবং ‘এফ’ ইউনিটে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেন। গত ১৯ শে নভেম্বর সকল  ইউনিটের ফল প্রকাশ করে কর্তৃপক্ষ।  এতে ‘বি’ ইউনিটের (সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ) মানবিক থেকে পরীক্ষায় অংশ নিয়ে মিশকাতুল জান্নাত এমসিকিউয়ে ৮০ এর মধ্যে ৬৭.২৫০পেয়েছেন। যা অন্য কোন ইউনিটে আর কেউ পায়নি।  তার ‘বি’ ইউনিটে ভর্তি পরীক্ষার রোল ২৪০২৭৮। অথচ ‘এ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় তৃতীয় শিফটে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে (রোল-১৪১৭৫২) অকৃতকার্য হন মিশকাতুল জান্নাত। একইভাবে ‘এফ’ ইউনিটেও চতুর্থ শিফটে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে (রোল-৬৪১৭৫১) অকৃতকার্য হন এই ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী।

মিশকাতুল জান্নাত বগুড়া জেলার  ধুনট উপজেলার গোসাইাবাড়ী ইউনিয়নের এনামুল বারীর মেয়ে। মিশকাতুল জান্নাতের সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। মিশকাতুল জান্নাত দ্বিতীয় মেয়াদে ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছিলেন বলে জানা গেছে।  

অনুসন্ধানে জানা যায়, ‘এ’ ইউনিটে প্রথম শিফটে প্রথম স্থান অধিকারী নিলয় ঘোষ ‘বি’ ইউনিটেও প্রথম শিফটে প্রথম স্থান অধিকার করেন। একইবাবে ‘ডি’ ইউনিট প্রথম স্থান অধিকারকারী জিহাদ রহমান ‘ই’ ইউনিটেও ৫ম স্থান অধিকার করেন। আবার ‘এ’ ইউনিটে (সাইন্স) প্রথম স্থান অধিকারকারী শানজিদা আলম করবী ‘বি’ ৭৪ স্থান অধিকার করেছেন। এরকমভাবে প্রত্যেকটি ইউনিটের ১ম থেকে ৫ম স্থান অধিকারীগণ অপর যেকোন ইউনিটে মেধা তালিকায় স্থান পেয়েছেন। কিন্তু মিশকাতুল জান্নাত ‘বি’ ইউনিটে প্রথম হলেও অপর দুইটি ইউনিটে ফেল করেন। 

তার বড় বোন  রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজী বিভাগের প্রভাষক বলে জানা গেছে। নিজের ছোটবোন ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করলেও ইংরেজী বিভাগের প্রভাষক ইমরানা বারী ভর্তি পরীক্ষার যাবতীয় কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করেন। বিষয়টি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে।  এ ব্যাপারে ইংরেজী বিভাগের শিক্ষক ইমরানা বারীর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি সাংবাদিকদের জানান, তার ছোট বোন ভর্তি পরীক্ষা দিচ্ছে বিষয়টি তিনি মৌখিকভাবে কতৃপক্ষকে জানিয়েছেন বলে দাবি করে বলেন এখন এটা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হচ্ছে তারা যদি খাতা পরীক্ষা করতে চায় করুক। তিনি আর কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি। 

এবিষয়ে জানতে চাইলে ‘বি’ ইউনিটের সমন্বয়ক ও সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সোহেলা মুশতারী যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন ‘ইমরানা বারীর ছোটবোন এখানে পরীক্ষা দিয়েছে সেটা আমাদেরকে তিনি লিখিতভাবে জানাননি। যখন ও এডমিশনের জন্য আসল, ওকে আমরা চিনতাম। ফেসবুকে ছবি দেখেছি। ওকে (মিশকাতুল জান্নাত) দেখে আমরা স্তব্ধ হয়ে গেছি যে, এই মেয়ে এখানে কেন? এবং মোটেও আমরা খুশি হইনি। 

এদিকে ঘটনাটি জানাজানি হলে শিক্ষকদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। বৃহস্পতিবার বিকেলে ৫০ জন শিক্ষক স্বাক্ষরিত একটি অভিযোগ রেজিষ্টার বরাবর প্রদান করা হয়েছে । সেখানে তারা বি ইউনিটের ভর্তি কার্যক্রম স্থগিত করে তদন্ত করে দায়িদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেবার দাবি জানিয়েছেন।  এতে স্বাক্ষর করেছেন শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক গাজি মাযহারুল আনোয়ার সাধারন সম্পাদক খায়রুল আলম সুমন সাবেক সভাপতি ড, তুহিন ওয়াদুদ সহ অন্যান্য শিক্ষকবৃন্দ। 

এদিকে, সন্ধার পর রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ বিভাগের সহকারী পরিচালক আরিফুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, পরীক্ষায় অনিয়মের বিষয়ে তদন্ত করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার আবু হেনা মুস্তাফা কামাল এক অফিস আদেশের মাধ্যমে তিন সদস্যের এই কমিটি গঠন করেন। কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা দপ্তরের পরিচালক এবং ফাইন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো: নুর আলম সিদ্দিককে। কমিটির অপর দুই সদস্য হলেন রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক রাজিয়া সুলতানা এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রভাষক মোঃ সানজিদ ইসলাম খান। কমিটিকে দ্রুততম সময়ের মধ্যে রিপোর্ট দেয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

তবে এ কমিটি গঠনের ব্যাপারে ক্ষোভ প্রকাশ করে শিক্ষক সমিতির সাবেক সভাপতি ড. তুহিন ওয়াদুদ বলেছেন, আমরা মনে করি 'বি' ইউনিটে শুধু একজন শিক্ষার্থীর বেলায় এ ঘটনা ঘটেনি এখানে পুরো ইউনিটের পরীক্ষার বিষয়টি তদন্ত করা উচিত। কারণ ঘটনার সাথে আরো অনেকেই জড়িত থাকতে পারে সে জন্য বি ইউনিটের ভর্তি কার্যক্রম বন্ধ রেখে তদন্ত করা উচিত বলে জানান। 

অন্যদিকে, শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক গাজি মাযহারুল আনোয়ার বলেছেন আমরা ৫০ জন শিক্ষক বি ইউনিটের ভর্তি কার্যক্রম বন্ধ রেখে তদন্ত করে দায়িদের চিহ্নিত করার দাবি জানিয়েছি রেজিষ্টার বরাবর আবেদন করেছি। এদিকে, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ডক্টর নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ দেশের বাইরে থাকায় তার সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।


বিডি-প্রতিদিন/ সিফাত আব্দুল্লাহ

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর