শুক্রবার, ১৪ অক্টোবর, ২০২২ ০০:০০ টা

শিক্ষক সংকটে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষা ও গবেষণার গুণগত মান

রাবি প্রতিনিধি

শিক্ষক সংকটে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) শিক্ষার্থীর অনুপাতে নেই পর্যাপ্ত শিক্ষক। ৪০০ শিক্ষক পদ শূন্য থাকায় তৈরি হচ্ছে সংকট। এতে ব্যাহত হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণার গুণগত মান। গবেষণার ঘাটতিতে প্রতিযোগিতাপূর্ণ বিশ্বে পিছিয়ে পড়ছে এই বিশ্ববিদ্যালয়। এ ব্যাপারে রাবি উপ-উপাচার্য অধ্যাপক সুলতান-উল ইসলাম বলেন, ‘বিগত দিনে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিতর্কিত নিয়োগ নীতিমালা এবং জটিলতার কারণে শিক্ষা মন্ত্রণালয় নিয়োগ কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করেছে। ফলে বিভিন্ন বিভাগ তাদের চাহিদার কথা জানালেও সেটা পূরণ করতে পারছি না। তবে মন্ত্রণালয় নতুন নিয়োগ নীতিমালার যে শর্ত দিয়েছিল, তা ইতোমধ্যে আমরা সম্পন্ন করেছি। আশা করি দ্রুত সময়ের মধ্যে এ সংকট কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হবে বিশ্ববিদ্যালয়।’ শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, বিভাগে যথেষ্ট শিক্ষক না থাকায় ঠিকভাবে ক্লাস হচ্ছে না। ফলে কোর্স-পরীক্ষা এবং ফলাফল দেরিতে হচ্ছে। দেখা দিচ্ছে সেশনজট। তাই শিক্ষার্থী অনুপাতে দ্রুত সময়ের মধ্যে শিক্ষক চান তারা। জানা গেছে, রাবি আইন ও ভূমি বিভাগে প্রায় ২৫০ জন শিক্ষার্থীর বিপরীতে রয়েছেন মাত্র দুজন শিক্ষক। তারাও আবার পদমর্যাদায় সহযোগী অধ্যাপক।

ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগে প্রায় দেড় শতাধিক শিক্ষার্থীর বিপরীতে রয়েছেন মাত্র পাঁচজন শিক্ষক, মাইক্রোবায়োলজি বিভাগে প্রায় দেড় শতাধিক শিক্ষার্থীর বিপরীতে শিক্ষক রয়েছেন মাত্র তিনজন, চিকিৎসা মনোবিজ্ঞান বিভাগে প্রায় ১৫০ জন শিক্ষার্থীর বিপরীতে রয়েছেন মাত্র সাতজন শিক্ষক, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে মাত্র সাতজন শিক্ষকের বিপরীতে শিক্ষার্থী সংখ্যা প্রায় ২০০ জন। এ ছাড়া অন্যান্য বিভাগেও এই অসামঞ্জস্যপূর্ণ অনুপাত রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্যমতে, বর্তমানে রাবিতে মোট ১ হাজার ৪৯০টি শিক্ষক পদের মধ্যে শূন্য রয়েছে ৪৩৫টি। বিশ্ববিদ্যালয়ে মোট শিক্ষার্থী সংখ্যা ৩৮ হাজার ৩০০ জন। প্রতি একজন শিক্ষকের বিপরীতে ৩৭ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) বার্ষিক প্রতিবেদন অনুসারে, দেশের চারটি স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর গড় অনুপাতে সবচেয়ে পিছিয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সংকটের অন্যতম কারণ শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে সব নিয়োগে স্থগিতাদেশ। ২০১৭ সালে সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আবদুস সোবহান দায়িত্ব গ্রহণের পর ২০১৫ সালের শিক্ষক নিয়োগ নীতিমালায় ব্যাপক পরিবর্তন আসে। পরিবর্তিত সেই নীতিমালায় আবেদনের যোগ্যতা শিথিলকরণ, স্বজনপ্রীতি, ’৭৩-এর অ্যাক্ট লঙ্ঘনসহ বিভিন্ন বিষয়ে ব্যাপক বিতর্কের সৃষ্টি হয়। যা পরবর্তীতে আন্দোলনে রূপ নেয়। এমনকি উপাচার্যের মেয়াদের শেষ দিনে ১৩৮ জনকে গণনিয়োগ দিয়ে যান অধ্যাপক আবদুস সোবহান। ২০২০ সালের শেষের দিকে তদন্তসাপেক্ষে বিতর্কিত এই নিয়োগ বাতিল করার পাশাপাশি তা পরিবর্তন না হওয়া পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সব নিয়োগে স্থগিতাদেশ দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। তারপর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো ধরনের নিয়োগ কার্যক্রম সম্পন্ন হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউশনাল কোয়ালিটি অ্যাসুরেন্স সেলের পরিচালক অধ্যাপক দুলাল চন্দ্র রায় বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে দীর্ঘদিন নিয়োগ কার্যক্রম না হওয়ার ফলে বিভিন্ন বিভাগে শিক্ষকের সংকট তৈরি হয়েছে। এতে শিক্ষা ও গবেষণা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। তবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ইতোমধ্যে নতুন শিক্ষক নিয়োগ নীতিমালা প্রণয়ন করেছে। তাছাড়া ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট বিভাগ তাদের চাহিদা সম্পর্কে প্রশাসনকে অবহিত করেছে।

 

সর্বশেষ খবর