কুমিল্লার লাকসামের বিভিন্ন হাট-বাজারে বিষাক্ত কেমিক্যাল দিয়ে পাকানো হচ্ছে কলা। রমজান মাসে বেশি মুনাফার আশায় বিষাক্ত কেমিক্যাল ব্যবহার করে কাঁচা কলাকে দ্রুত পাকিয়ে বাজারে সরবরাহ করছেন আড়ৎ মালিকরা।
কেমিক্যাল মিশ্রিত এসব কলার একদিকে নষ্ট হচ্ছে স্বাদ, অন্যদিকে হুমকিতে পড়ছে জনস্বাস্থ্য।
সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এসব অসাধু ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা না নেওয়ায় দিনদিন বেপরোয়া হয়ে উঠছে।
সূত্রে জানা যায়, লাকসাম দৌলতগঞ্জ, জংশন, মুদাফরগঞ্জ, বিজরা, চিতোষী, নরপাটি, ইছাপুরাসহ উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজারে কলার পাইকারি ব্যবসায়ীরা (আড়ৎদার) দ্রুততম সময়ে কলা পাকাতে কার্বাইড জাতীয় রাসায়নিক পদার্থ মেশাচ্ছেন। ফলে কলার বাহ্যিক রং ১২ ঘণ্টার মধ্যেই হলুদ ও আকর্ষণীয় হচ্ছে। কলায় বিষাক্ত যে কেমিক্যাল মেশানো হচ্ছে তা মানবদেহের জন্য মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ। কেমিক্যাল মিশ্রিত কলা খেয়ে জীবনহানীর শঙ্কাও বেশি। এ অঞ্চলে কলার প্রচুর চাহিদার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে এবং প্রশাসনের কঠোর নজরদারি না থাকায় অসাধু কলা ব্যবসায়ীরা নির্বিঘ্নে এমন প্রতারণা চালিয়ে যাচ্ছেন।
উপজেলার হাট-বাজারে যেসব কলা বিক্রি করা হচ্ছে তার ৯০ শতাংশ-ই বিষাক্ত কেমিক্যাল দিয়ে পাকানো হয় বলে অভিযোগে উঠে এসেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক কলা ব্যবসায়ী জানান, কলায় এসব পদার্থ মেশালে কলা দ্রুত পাকে এবং দেখতে খুব সুন্দর দেখায়। সৌন্দর্যে আকৃষ্ট হয়ে ভোক্তারা এসব কলা কিনে নিয়ে যান। এতে আমাদেরও লাভ হয় বেশি। কৃৃত্রিমভাবে পাকানো কলা খুব দ্রুত পচেও যায়।
কেমিক্যাল মেশানো কলায় জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর বিষয়টি জেনেও কেন এমন প্রতারণার আশ্রয় নিচ্ছেন, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সবাই কেমিক্যাল মেশায়, তাই আমিও মেশাই।
অপর এক ব্যবসায়ী জানান, কলা আমরা অনেক দূর থেকে নিয়ে আসি। আড়তে এসে পৌঁছতে পথে ১/২ দিন লেগে যায়। আনার পর বদ্ধঘরে রেখে রাসায়নিক ছিটানো হয়। ছিটানোর ফলে কলা দ্রুত পেকে যায়। আমাদের বিক্রি করতেও সুবিধা হয়। তাই কলা পাকাতে রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহার করে থাকি।
লাকসাম-মনোহরগঞ্জ পেশাজীবী পরিষদের সাধারণ সম্পাদক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের হৃদরোগ বিভাগের মেডিকেল অফিসার ডা. রাজীব কুমার সাহা বলেন, বিষাক্ত কেমিক্যালে মেশানো কলা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। কেউ এমন কলা খেলে সাথে সাথে বমিভাব ও ডায়রিয়া হওয়ার আশঙ্কা থাকে। কেমিক্যাল মিশ্রিত কোনো খাদ্য গ্রহণ করলে তার প্রভাব পড়ে লিভার ও কিডনির উপর। ওইসব খাদ্য গ্রহণের পরে তা দাহ্যে পরিণত হওয়ার পর নিঃসারণ ঘটে লিভার এবং কিডনির মাধ্যমে। ফলে কেমিক্যাল মেশানো খাদ্য শরীরের এই দুটি অংশের উপর প্রভাব ফেললে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে কিডনিকেই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত করে।
লাকসাম উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট উজালা রাণী চাকমা বলেন, এখানে কলায় বিষাক্ত কেমিক্যাল মেশানোর প্রমাণ আমি নিজেও পেয়েছি। করোনা পরিস্থিতিতে ব্যস্ততার মাঝেও সপ্তাহ দুয়েক আগে স্থানীয় একটি কলার আড়তে কেমিক্যাল মেশানোর সময় অনেকগুলো কেমিক্যাল জব্দ করে নিয়ে আসি। এসময় ওই আড়ৎদারকে সতর্ক করা হয়।
জনস্বাস্থ্যের কথা বিবেচনায় নিয়ে ভেজাল বিরোধী অভিযান অব্যাহত থাকবে বলেও তিনি জানান।
বিডি প্রতিদিন/এনায়েত করিম