২৭ জুন, ২০২২ ১৬:১২

বগুড়ায় প্রতিদিন দই বিক্রি অর্ধ কোটি টাকার

আবদুর রহমান টুলু,বগুড়া

বগুড়ায় প্রতিদিন দই বিক্রি
অর্ধ কোটি টাকার

বগুড়ায় প্রতিদিন দই বক্রি হচ্ছে প্রায় অর্ধ কোটি টাকার। পুরো বগুড়া জেলায় দইয়ের চাহিদা রয়েছে প্রচুর। দেশে-বিদেশে বগুড়ার দইয়ের বিশাল বাজার তৈরির সম্ভাবনা থাকলেও শুধুমাত্র সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে তা সম্ভব হচ্ছে না। স্বাদে অতুলনীয় হওয়ায় দই এখন দিন দিন আরো জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।

জানা যায়, দই তৈরির রহস্য এক ধরনের দক্ষতা। দক্ষতা ছাড়া ভাল মানের দই তৈরি করা যায় না। দই তৈরির মূল উপকরণ হলো ভাল মানের দুধ। দুধ যত ভাল মানের হবে দই ততটায় স্বাদের হবে। দই তৈরির কাজে বিশেষ দক্ষ কারিগর না হলে উপকরণ নষ্ট হয়ে যায়। দই তৈরিতে দুধ হলো প্রধান উপকরণ। দুধ যত ঘন হবে দই তত সুন্দর রং ও স্বাদ ভালো হবে। দুধ ও চিনি বা মিছরী জাল দিয়ে দই তৈরি করতে হয়। মিষ্টি দইয়ের জন্য চিনি এবং সাদা বা টক দইয়ের জন্য চিনির প্রয়োজন হয় না। ইদানিং বগুড়ার দইয়ের কারিগররা ডায়াবেটিকস রোগীদের জন্যও দই তৈরি করছে। ডায়াবেটিক দইও বেশ বিক্রি হচ্ছে। 

বগুড়াকে দইর শহর বলা হয়। বগুড়ার প্রবীণরা জানান, দইয়ের শুরুটা হয়েছিল বগুড়া শহর থেকে ২০ কিলোমিটার দক্ষিণে শেরপুর উপজেলায়। কথিত আছে, উনিশ শতাব্দীর ৬০ এর দশকের দিকে গৌর গোপাল পাল নামের এক ব্যবসায়ি প্রথম পরীক্ষামূলকভাবে দই তৈরি করেন। তখন দই সম্পর্কে সবার ভালো ধারনা ছিলোনা। গৌর গোপালের এই দই’ই ধীরে ধীরে ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। বগুড়ার ঐতিহ্যবাহী নবাব পরিবার ও সাতানী পরিবারের কাছে এ দই সরবরাহ করতেন গৌর গোপাল। সে সময়ে এই দইয়ের নাম ছিল নবাববাড়ীর দই। নবাবী আমলে বিশেষ খাবার ছিল এই দই। কালে কালে দিন গড়িয়ে গেলেও এখনো বিশেষ খাবার হিসেবে ধরে রেখেছে দই। বিয়ে, জন্মদিন, ঈদ, পূজা, আকিকা হালখাতা বা পারিবারিক যে কোন অনুষ্ঠানে দই হলো বিশেষ খাবার হিসেবে পরিবেশিত হয়ে থাকে। তাছাড়া প্রতিদিনই দই বিক্রি হয়ে থাকে। গৌর গোপাল এর পর রুচিতা দই বাজারজাত শুরু করে।

বগুড়া দইয়ের ব্যবসায়িরা জানান, বগুড়ায় তৈরি দই দেশের বাইরেও নিয়ে যাওয়া হয়। স্থানীয়ভাবে তারা যে প্যাকেটে দই দেন তা শীতকালে থাকে ৪/৫ দিন। আর গরম কালে থাকে ২/৩ দিন। বগুড়াসহ উত্তরাঞ্চলে কোন বিদেশি বেড়াতে এলে তারা ফেরার সময় দই কিনে নিয়ে যান। হাতে হাতে করেই এই দই পৌঁছে যায় বিভিন্ন এলাকায়। তবে বিভিন্ন ব্যক্তি নিজ উদ্যোগে বগুড়ার দই বিদেশে নিয়ে যায়। কিন্তু, সরকারি সহযোগিতা নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে দইয়ের রপ্তানি হচ্ছে না।

বগুড়ার দই ব্যবসায়িদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বিভিন্ন ব্রান্ডের দই পাওয়া যায়। যার প্রতি পাতিল বিক্রি হয় আকার অনুযায়ি ৩৫ টাকা থেকে ২৮০ টাকায়। ছোট বড় বিভিন্ন আকৃতির মাটির পাত্রে দই ভরানো হয়। আগে কেজি হিসেবে দই বিক্রি হলেও এখন উপকরনের মূল্য বৃদ্ধির কারনে দই বিক্রি হয় প্রতি পিছ হিসেবে। তবে দইয়ের ওজন ঠিক থাকে না। বগুড়া শহরের চিনিপাতা দই দোকানে মেজবান দই ২৮০ টাকা, স্পেশাল দই ২৬০ টাকা, সাদা দই ২৪০ টাকা, টকদই বড় পাতিল ১৮০ ও ছোট পাতিল ১০০ টাকা, কাপ দই ৬৫, ক্ষিরসা সরা ৫২০ টাকা করে প্রতি পিছ বিক্রি হয়। এই একই দামে বগুড়ার প্রায় সব দোকানেই দই বিক্রি হয়। বগুড়া জেলা শহরেই রয়েছে অর্ধশত এবং শেরপুর উপজেলায় রয়েছে আরো অর্ধশত দইয়ের দোকান। বগুড়া শহর ও শেরপুর উপজেলায় রয়েছে প্রায় দেড় শতাধিক দোকান। আর জেলার ১২টি উপজেলা মিলিয়ে আনুমানিক ৫০০টি দোকান রয়েছে। ৫০০ দোকানে প্রতিদিন গড়ে ৫০টি করে দই বিক্রি ধরা হলে পিচের সংখ্যা দাঁড়ায় ২৫০০ হাজার। আর ২৫০০ হাজার পিচকে গড়ে ২০০ টাকা করে বিক্রি ধরা হলে টাকার অংক গিয়ে দাঁড়ায় ৫০ লাখ টাকা। 

আকবরিয়া লিমিটেড এর চেয়ারম্যান হাসান আলী আলাল জানান, দই তৈরির সকল উপকরণের দাম বেড়েছে। বাজারে রয়েছে প্রতিযোগিতা। সে প্রতিযোগিতাকে ছাপিয়ে বাজারে টিকে থাকতে ভালোমানের দই তৈরী করা হচ্ছে। তাদের তৈরি আকবরিয়া দইয়ের চাহিদা রয়েছে। আকবরিয়ার দই বিভিন্ন জেলায় বিক্রি হয়ে থাকে।রাজধানি ঢাকায় ৬টিসহ সারাদেশে ৪৩টি শোরুমে আমাদের দই বিক্রি হয়ে থাকে।

বিডি প্রতিদিন/এএ

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর