ফিরোজ সাঁই, ফকির আলমগীর, ফেরদৌস ওয়াহিদ, পিলু মমতাজকে নিয়ে একটি ভিন্নধারার গানের পরিবেশ সৃষ্টি করেছিলেন কণ্ঠশিল্পী আজম খান। যুদ্ধবিধ্বস্ত একটি দেশে লালন, জারি, সারি, ভাওয়াইয়া গানের বিপরীতে আধুনিক বাদ্যযন্ত্র দিয়ে একটি নতুন ঘরানার গান সৃষ্টি করেন আজম খান। বর্তমানের 'ব্যান্ড' শিল্পের শুরুটা অনেকটা এভাবেই। শ্রোতাদের প্রবল গ্রহণযোগ্যতার পিঠে চেপে প্রায় ২০ বছর দাপিয়ে বেড়ায় ব্যান্ডশিল্প। একে একে বাংলাদেশে জন্ম নেয় সোলস, রেনেসাঁ, ফিডব্যাক, মাকসুদ, এলআরবি, নগর বাউল, আর্ক, ওয়ারফেজ, প্রমিথিউস ইত্যাদি। তারই ধারাবাহিকতায় পুরুষতান্ত্রিক ব্যান্ডের পাশাপাশি বর্তমানে আমাদের দেশে জন্ম নিয়েছে বেশ কয়েকটি নারীদের ব্যান্ডও। খুব অল্প সময়ে জনপ্রিয়ও হয়েছে তারা। তার মধ্যে অন্যতম আনুশেহর বাংলা ব্যান্ড। ১৯৯৮ সাল থেকে বাংলা ব্যান্ডের ভোকাল হিসেবে গান করছেন আনুশেহ। তোমার ঘরে বসত করে, কৃষ্ণ পক্ষ কালো পক্ষ, নামাজ আমার হইল না, ঘাটে লাগাইয়া তরীসহ অনেক গান তার কণ্ঠে অর্জন করেছে আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তা। বাংলা ব্যান্ডের কিংকর্তব্যবিমূঢ় এবং প্রত্যুৎপন্নমতি অ্যালবাম দুটির পর প্রকাশিত হয় আনুশেহর প্রথম একক অ্যালবাম রাই। ১১টি গানের মধ্যে নয়টি গানের কথা লিখেছেন আনুশেহ নিজেই। বাকি দুটি গান লিখেছিলেন অকালপ্রয়াত নির্মাতা তারেক মাসুদ।
বাংলার জল-মাটি-কাদার গন্ধ গায়ে মেখে গান শুরু করে 'লালন' ব্যান্ড। এর প্রধান ভোকালিস্ট সুমি। গানের প্রতি অসম্ভব ভালোবাসা থেকে কয়েক বন্ধুর উদ্যোগে ব্যান্ডদল লালন যাত্রা শুরু করে ২০০১ সালের পহেলা বৈশাখ। মজার ব্যাপার হলো, এ বছরই ১৪ এপ্রিল তাদের প্রথম কনসার্ট অনুষ্ঠিত হয়। ২০০৩ সালে বেনসন অ্যান্ড হেজেসের স্টার সার্চের প্রতিযোগিতায় ভোকালে সুমি প্রথম হন।
লালনের প্রথম অ্যালবাম বের হয় ২০০৭ সালে।' ২০০৬ সালে তাদের পুরনো লাইনআপ বদলে যায়। বেইজ গিটারে সেন্টু, লিডে মাসুম, ড্রামসে তিতি এবং ভোকালে সুমি- এই নিয়ে আবার পথচলা শুরু করে নবীন ব্যান্ডদলটি। লালনের প্রতিটি সদস্যই অন্য পেশার সঙ্গে যুক্ত। কেউ ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট, কেউ ব্যাংক আবার কেউবা বিকল্প ধারার চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন। তবে একটা বিষয়ে তাদের দারুণ মিল। তারা সবাই ভালোবেসে গান করেন।
অন্যদিকে অভিনেত্রী জিনাত সানু স্বাগতা অভিনয়ের পাশাপাশি গান গেয়েও ব্যাপক সুনাম অর্জন করেছেন। 'মহাকাল' শিরোনামে তার নিজস্ব ব্যান্ডদল রয়েছে। এই ব্যান্ডের কয়েকটি অ্যালবামও রয়েছে বাজারে।
এদিকে আলাউদ্দিন আলীর মেয়ে আলিফ আলাউদ্দিনও পিছিয়ে নেই। বর্তমানে তার 'ফোরটিনথ ফ্লোর' নামের একটি ব্যান্ড দল নিয়ে নতুন পরিকল্পনা নিয়েছেন। এরই ভেতর বেশ কিছু গানের কম্পোজিশন তৈরি হয়েছে। নতুন কিছু গানের ভিডিও তৈরি করবেন বলে ভাবছেন। বেশ কটি টিভি লাইভ অনুষ্ঠানে পারফর্মসহ নতুন বছরে কনসার্টের পরিকল্পনাও নিয়েছেন। পাশাপাশি বছরের শুরুতেই ক্লাব শো দিয়ে সারা রাত পারফর্ম করছেন।
'চাঁদের মেয়ে জোসনা আমি বেদের মেয়ে না' নিয়ে শ্রোতাপ্রিয় হয়েছেন রক-রাজকন্যাখ্যাত তিশমা। ২০০২ সালে কয়েকজন যন্ত্রীকে নিয়ে ব্যান্ডে সেটআপ তৈরি করেছিলেন তিশমা। দীর্ঘদিন সেই সেটআপের সঙ্গে গেয়েছেনও। কিন্তু নিজের পড়াশোনা আর সদস্যদের ব্যস্ততার কারণে তিশমার সেটআপটি টেকেনি। এবার নিজের 'তিশমা' ব্যান্ড গড়েছেন জনপ্রিয় এই পপগায়িকা। সাত সদস্যের এই ব্যান্ডের লাইনআপ হলো- তিশমা (ভোকাল ও গিটার), রানা (বেজ), সামু (গিটার), বিকাশ (ড্রামস), সাজু (ড্রামস ও পারকাশন), তুষার (ড্রামস ও পারকাশন)। বর্তমানে এই ব্যান্ড নিয়েই বিভিন্ন স্টেজ প্রোগ্রামে গান করছেন তিশমা।
এদিকে ১৯৯৩ সালের ১২ অক্টোবর গঠিত হয় ব্যান্ড দল 'পেন্টাগন'। মোহাম্মদ আলী সুমন, শওকত আলী ইমন, রঞ্জন, শেলী আর বাবু তারাই ছিলেন তখন এই ব্যান্ডের সদস্য। এরপর পেরিয়ে গেছে ২০ বছর। পুরনো সদস্যদের মধ্যে এখনো এই ব্যান্ডের সঙ্গে যুক্ত আছেন সুমন ও অনিতা। নারীকেন্দ্রিক ব্যান্ড দলগুলোর মধ্যে এ ব্যান্ডই অন্যতম।