রবিবার, ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা

বসুন্ধরা বিটুমিন প্লান্ট দেশের জন্য বড় অর্জন : অর্থমন্ত্রী

মুজিববর্ষে আরও বড় বিনিয়োগের ঘোষণা বসুন্ধরা চেয়ারম্যানের

নিজস্ব প্রতিবেদক

বসুন্ধরা বিটুমিন প্লান্ট দেশের জন্য বড় অর্জন : অর্থমন্ত্রী

অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালকে ক্রেস্ট তুলে দিচ্ছেন বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান। এ সময় বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু, বসুন্ধরা গ্রুপের কো-চেয়ারম্যান সাদাত সোবহান তানভীর, ব্যবস্থাপনা পরিচালক সায়েম সোবহান আনভীর, ভাইস চেয়ারম্যান সাফিয়াত সোবহান সানভীর ও ওয়ালিদ সোবহান উপস্থিত ছিলেন -বাংলাদেশ প্রতিদিন

দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পোদ্যোক্তা পরিবার বসুন্ধরা গ্রুপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান বসুন্ধরা অয়েল অ্যান্ড গ্যাস কোম্পানি লিমিটেডের বিটুমিন প্লান্টের গতকাল বর্ণাঢ্য উদ্বোধন হলো। অনুষ্ঠানে ব্যক্তি খাতে দেশের প্রথম এই বিটুমিন প্লান্ট নিয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, বসুন্ধরার বিটুমিন বাংলাদেশের জন্য বড় অর্জন। জাতির পিতার স্বপ্নের সঙ্গে মিলে গেছে বসুন্ধরার বিটুমিন কারখানা। তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনেকবার বিটুমিনের মান নিয়ে কথা বলেছেন। আজকে বসুন্ধরা সেই বিটুমিন কারখানা করেছে। এখন আমদানি করতে হবে না। দেশের চাহিদা মিটিয়ে রপ্তানি করা যাবে। আমরা আনন্দিত। সরকার বসুন্ধরার কাছে কৃতজ্ঞ।’

গতকাল ঢাকার কেরানীগঞ্জের পানগাঁওয়ে বসুন্ধরা গ্রুপের বিটুমিন প্লান্টের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন অর্থমন্ত্রী। বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন ইনস্টিটিউট অব ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশ-আইইবির সাবেক সভাপতি প্রকৌশলী অধ্যাপক ড. শামীম জেড বসুনিয়া ও কেরানীগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান শাহীন আহমেদ।

অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রীকে ফুল দিয়ে স্বাগত জানান বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রীর হাতে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সায়েম সোবহান আনভীর। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বসুন্ধরা গ্রুপের কো-চেয়ারম্যান সাদাত সোবহান তানভীর, বসুন্ধরা গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান সাফিয়াত সোবহান সানভীর, ওয়ালিদ সোবহান এবং বাংলাদেশ প্রতিদিন সম্পাদক ও সংবাদভিত্তিক টেলিভিশন নিউজ টোয়েন্টিফোরের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা-সিইও নঈম নিজাম। বসুন্ধরা গ্রুপের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ছাড়াও সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ কর্মকর্তারা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ সমৃদ্ধ অর্থনীতির দিকে যাচ্ছে। সরকারি সব সহযোগিতা নিয়ে দেশের বিভিন্ন বেসরকারি বিনিয়োগের বিকাশ ঘটায় অর্থনীতি আরও সমৃদ্ধির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, ‘দেশের চাহিদার ৯০ ভাগ বিটুমিনই বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। এখন বসুন্ধরার কল্যাণে আর বিটুমিন আমদানি করতে হবে না। আমাদের দেশে উৎপাদিত এ বিটুমিন অভ্যন্তরীণ চাহিদা মিটিয়ে বহির্বিশ্বে যাবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের আবহাওয়ার সঙ্গে খাপ খায় এমন বিটুমিন পাইনি। আমদানি করার পর গুণগত উৎকর্ষতা ধরে রাখতে পারতাম না। যে কারণে রাস্তাগুলো টেকসই হতো না। কিন্তু বসুন্ধরা সেই সমাধান নিয়ে এসেছে।’

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, ‘আজ (গতকাল) ঐতিহাসিক দিন। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী পালন করতে যাচ্ছি আমরা। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার পথে বেসরকারি খাত এগিয়ে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর পিতার স্বপ্ন পূরণ করতে যাচ্ছেন। সেই স্বপ্ন পূরণে হাজারো মানুষের কর্মসংস্থানের জোগান দিতে দেশে যারা এগিয়ে এসেছে তাদের সম্মুখভাগে রয়েছে বসুন্ধরা গ্রুপ।’

প্রতিমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের ক্রমবিকাশমান অর্থনীতি আজ সারা বিশ্বে ঈর্ষণীয়। সরকার সোনার বাংলা বিনির্মাণে কাজ করে যাচ্ছে। আর এসব খাতে বর্তমান সরকার আমলে হাজার হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। বেসরকারি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বসুন্ধরা সমাজ উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে। পরিকল্পিত নগর গড়তে পাবলিক বা প্রাইভেট সেবার বিকল্প নেই।

দেশের শীর্ষ শিল্পগোষ্ঠী বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান বলেন, ‘আজ দেশের যে অবস্থান, বঙ্গবন্ধু থাকলে হয়তো ২৫ বছর আগেই এ অবস্থান পেতাম। আমাদের সব উৎসাহ-উদ্দীপনার মূল জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। একসময় বাংলাদেশকে বলা হতো তলাবিহীন ঝুড়ি, আজ সারা দুনিয়া বাংলাদেশের দিকে তাকিয়ে রয়েছে।’

বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমাদের বসুন্ধরা গ্রুপ এ পর্যন্ত ৩০টি শিল্পকারখানা স্থাপন করেছে। দুটি বিশাল হাউজিং করেছে। বসুন্ধরা গ্রুপের একটা বৈশিষ্ট্য- এ গ্রুপ কেবল নিজের জন্য করে না। বসুন্ধরা গ্রুপে জমি যারাই কিনেছেন, তারা আজ মাল্টি মিলিয়নিয়ার। বসুন্ধরা গ্রুপের জমি কিনে যারা বিক্রি করেছেন তারাও সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যে রয়েছেন।’ তিনি দেশের সার্বিক উন্নয়নের কথা তুলে ধরে বলেন, ‘আজ দেশের অর্থনীতি অনেক বদলে গেছে। আমাদের সমস্ত সফলতার প্রধান উৎস আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। যিনি এ দেশের স্বাধীনতার জন্য স্বপ্ন দেখতেন, দেশটা স্বাধীন করেছেন। কিন্তু স্বাধীন দেশটা যখন বঙ্গবন্ধু গড়তে শুরু করলেন, তখনই তাঁকে নির্মমভাবে হত্যা করল ষড়যন্ত্রকারীরা।’

বসুন্ধরা চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান বলেন, ‘আমি শুধু বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দুটি কথা বলতে চাই। প্রথম রিহ্যাবের এক সভায় প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, রিহ্যাবের সব সদস্যই ধনী লোক। আপনারা ব্যবসায়ীরা খেলাধুলার জন্য সহযোগিতা করবেন। আজ বাংলাদেশ ক্রিকেটের যে অবস্থান, তার ৯৯ শতাংশ অবদান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। তিনি যে উৎসাহ-উদ্দীপনা দিয়েছেন, ক্রিকেটের সঙ্গে তাঁর ব্যক্তিগত যে সম্পর্ক, প্রতিটা ক্রিকেটারের সঙ্গে তিনি ফোনে কথা বলেন, এসএমএসে খোঁজখবর নেন। এমনকি কারও ওজন বেড়ে গেলেও প্রধানমন্ত্রী বলেন, তোমার ওজন কমাও।’

আহমেদ আকবর সোবহান বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উৎসাহের কারণেই আজ অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ জয় করেছে আমাদের যুবারা। বাংলাদেশ আজ বিশ্বচ্যাম্পিয়ন। আমরা বলতে পারি, আন্ডার-১৯ নয়, একদিন আমরা মূল বিশ্বকাপেও চ্যাম্পিয়ন হব ইনশা আল্লাহ। সেদিন হয়তো আর বেশি দূরে নয়।’ তিনি বলেন, ‘ক্রিকেটে বাংলাদেশের ব্র্যান্ডিং হচ্ছে। সারা বিশ্ব বাংলাদেশকে চিনছে, শেখ হাসিনাকে চিনছে, বঙ্গবন্ধুকে চিনছে, আমাদের বাংলাদেশের অর্থনীতিকে চিনতে পারছে।’

বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান শিক্ষা ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগের কথা তুলে ধরে বলেন, ‘আরও একটি ছোট কথা বলি, শিক্ষা ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর যে উৎসাহ তা আর কারও মধ্যেই নেই। যেমন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রথমে ১৫ একর জমি চেয়েছিল। এরপর প্রধানমন্ত্রী বললেন, ১৫ একর জায়গা দিয়ে কী বিশ্ববিদ্যালয় হয়? এই কেরানীগঞ্জে প্রধানমন্ত্রী এক হাজার বিঘা জমি দিয়েছেন। ৩০০ একর জায়গার ওপর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে। বঙ্গবন্ধুর প্রেরণায় আমরা যে কাজ শুরু করেছিলাম আজ তা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উৎসাহ-উদ্দীপনার মাধ্যমে এগিয়ে যাচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শিল্পোদ্যোক্তাদের উৎসাহ দেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, তোমরা শিল্পকারখানা কর, দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাও। আমি তোমাদের পাশে আছি। আজকে ছেলেমেয়েরা বিদেশে উচ্চশিক্ষা নিয়ে দেশে ফিরে আসছে। এর কারণ, দেশে ব্যবসা করার পরিবেশ রয়েছে, সুযোগও বাড়ছে। গত পাঁচ বছরে আমরা একটাও হরতাল দেখিনি। অনাকাক্সিক্ষত কোনো ঘটনা দেখিনি। একটা সময় গেছে, আমরা গালে হাত দিয়ে প্রতিদিন বসে থাকতাম- কবে হরতাল বন্ধ হবে। কবে অবরোধ বন্ধ হবে। কবে জ্বালাও-পোড়াও বন্ধ হবে? এগুলো থেকে প্রধানমন্ত্রী আমাদের পরিত্রাণ দিয়েছেন। পুরো জাতি ও দেশ প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞ। আজকে সবাই ভালো আছেন।’

দেশের শীর্ষ শিল্পোদ্যোক্তা আহমেদ আকবর সোবহান অর্থ পাচার বন্ধ করে রেমিট্যান্স বাড়ানোর পরামর্শ দিয়ে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রীর একটা সিদ্ধান্তে দেশে রেমিট্যান্সের প্রবাহ ১৫ শতাংশ বেড়েছে। বৈধ উপায়ে রেমিট্যান্স পাঠালে ২ শতাংশ নগদ প্রণোদনা দেওয়ার ঘোষণা দেন তাঁরা। এতে সঙ্গে সঙ্গে দেশের রেমিট্যান্স ১৫ শতাংশ বেড়ে গেল! আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রীকে বলব, আপনারা শুধু হুন্ডি বন্ধ করুন। দেখবেন, বর্তমানের তুলনায় রেমিট্যান্স ডাবল হয়ে যাবে। প্রতি মাসে দেশে তিন বিলিয়ন মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স আসবে।’

নির্বাচনে ব্যবসায়ীরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারকে সমর্থন দেওয়ার কথা জানিয়ে বসুন্ধরা গ্রুপ চেয়ারম্যান বলেন, ‘গত ইলেকশনের আগে আমরা ব্যবসায়ীরা দলমতনির্বিশেষে সবাই শেখ হাসিনাকে সমর্থন দিয়েছিলাম। এর কারণ একটাই- সবারই উন্নতি হয়েছে, হচ্ছে এবং হবে। আমরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দীর্ঘায়ু কামনা করছি।’

দেশে আবাসনশিল্পের এই পথিকৃৎ বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী দীর্ঘজীবী হোন, আপনারা সবাই তাঁর জন্য দোয়া করবেন। আর আমরা অনেক সৌভাগ্যবান, আমার সন্তানরা সৌভাগ্যবান, আমাদের থার্ড জেনারেশন আমাদের সঙ্গে আছে। তারাও সৌভাগ্যবান যে তাদের সঙ্গে নিয়েই আমরা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ উদ্যাপন করতে পারব।’

আহমেদ আকবর সোবহান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাই শেখ কামালকে নিয়ে নিজের স্মৃতিচারণা করে বলেন, ‘শেখ কামাল আমার এক বছরের সিনিয়র ছিলেন, আমরা একসঙ্গে ছাত্রলীগ করতাম। তিনি আজ আমাদের মাঝে নেই। এ দুর্ভাগ্য আমাদের। খেলাধুলায় তাঁর কী যে অবদান ছিল! খেলার প্রতি তাঁর যে ভালোবাসা ছিল আমি বাংলাদেশে আর কারও মধ্যে তা দেখিনি। এখন দেখি একজনের মাঝে, তিনি হলেন শেখ হাসিনা।’

ক্রীড়াঙ্গন নিয়ে বসুন্ধরা গ্রুপের উদ্যোগের কথা তুলে ধরে আহমেদ আকবর সোবহান বলেন, ‘আমরা একটা স্পোর্টস কমপ্লেক্স করছি। একটা ক্রিকেট একাডেমি করব, এর নাম দেব শেখ রাসেল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একটা কথা প্রায়ই বলেন, বাংলাদেশের প্রতিটা শিশুকে দেখলে শেখ রাসেলের স্মৃতি ভেসে ওঠে। এই যে একটা অন্তর্দাহ, এটা শুধু শেখ হাসিনাই বোঝেন। এটা আর কেউ বুঝবে না।’

সর্বশেষ খবর