সাবেক মন্ত্রীদের সব অপকর্মের হোতা ছিলেন তাঁদের সহকারী একান্ত সচিবরা (এপিএস)। মন্ত্রীদের সব তদবির, ধান্ধা, টাকাপয়সা সংগ্রহ, নির্বাচনি এলাকার মাতব্বরি ছিল তাঁদের হাতে। অনেক মন্ত্রীর রাতের চাহিদাও পূরণ করতেন সব কাজের কাজি এপিএসরা। তাঁরা মন্ত্রণালয় ঘিরে গড়ে তুলেছিলেন বিশেষ সিন্ডিকেট। বদলি-পদায়নেও ছিলেন তাঁরা। ৫ আগস্টের পর অনেক মন্ত্রী জেলখানায়, অনেকে আত্মগোপনে। কিন্তু এপিএসদের প্রায় সবাই লাপাত্তা।
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের ব্যক্তিগত সহকারী (এপিএস) ছিলেন জাহাঙ্গীর হোসেন। তিনি কোথায় আছেন কেউ জানে না। সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের ব্যক্তিগত সহকারী ছিলেন আবদুল মতিন। ১০ নভেম্বর তাঁকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর এপিএস ছিলেন মো. সালাউদ্দিন। সরকার পতনের পর তাঁর কোনো খবর পাওয়া যাচ্ছে না। আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের এপিএস ছিলেন আলাউদ্দিন বাবু। মন্ত্রী গ্রেপ্তার হলেও খবর নেই তাঁর। শিল্পমন্ত্রী নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুনের এপিএস ছিলেন মঈন উদ্দিন আহমেদ জুটুন। তাঁর অবস্থান কেউ বলতে পারছেন না। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামন খান কামালের এপিএস ছিলেন মনির হোসেন। মনির হোসেন ও কামালের ছেলে নিয়ন্ত্রণ করতেন মন্ত্রণালয়। মন্ত্রীর সঙ্গে তিনিও লাপাত্তা। এলজিআরডি মন্ত্রী তাজুল ইসলামের এপিএস ছিলেন কামাল হোসেন। তবে এ মন্ত্রণালয়ের সব খবরদারি করতেন মন্ত্রীর ভাতিজা শাহাদাৎ হোসেন। তাঁর সংকেত পেয়েই মিলত টেন্ডার ও বদলি। বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রী মুহাম্মদ ফারুক খানের এপিএস ছিলেন আমিনুর রহমান আমিন। নামে আমিন এপিএস হলেও মন্ত্রীর মেয়ে কানতারা খান সব নিয়ন্ত্রণ করতেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদের এপিএস ছিলেন এমরুল করিম রাশেদ ইমু। ইমু হাছান মাহমুদ তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রীর দায়িত্ব পাওয়ার পর সরকারি চাকরি ছেড়ে মন্ত্রীর এপিএস নিযুক্ত হন। ইমুও অনেক প্রভাব বিস্তার করতেন মন্ত্রণালয়ে। সমাজকল্যাণমন্ত্রী ডা. দীপু মনির এপিএস ছিলেন অ্যাডভোকেট সালাউদ্দিন বাবু। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ে দাপটে সঙ্গে চলতেন। বাবুর সংকেত ছাড়া কেউ কোনো সহযোগিতা পেতেন না মন্ত্রণালয় থেকে। খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদারের এপিএস ছিলেন ভাতিজা রাজেশ মজুমদার। খাদ্যমন্ত্রী সাধন হলেও মন্ত্রণালয় চালাতেন মূলত রাজেশ। যত অপকর্ম ভাতিজাই করতেন। বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানকের এপিএস ছিলেন হোসাইন মাহমুদ জোনাইদ জিকু। নানক ও তাঁর এপিএসের অবস্থান নিয়ে ধোঁয়াশা রয়েছে। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী আবদুর রহমানের এপিএস ছিলেন সরকারি কর্মকর্তা আবদুস সামাদ। গণপূর্তমন্ত্রী র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরীর এপিএস ছিলেন এ বি মুছা আনসারী। সরকার পতনের পর এপিএসের খবর নেই। পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরীর এপিএস ছিলেন আবদুল মান্নান। শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরীর এপিএস ছিলেন অমিত কুমার বসু। বসুকে কেন্দ্র করে শিক্ষায় সিন্ডিকেট গড়ে তোলে একটি চক্র। জনপ্রসাশনমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন এপিএস না রাখলেও পিআরও ছিলেন সব কাজের কাজি। এক যুগের বেশি সময় ধরে বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজীর এপিএস এমদাদুল হক ওরফে দাদা এমদাদ। এ সময়ে বিপুল সম্পদের মালিক হয়েছেন তিনি। রাজধানীতে নামে বেনামে গড়েছেন স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ। শুরু করেছেন ড্রেজার ব্যবসা। বিনিয়োগ করেছেন আবাসন ব্যবসায়ও। গোলাম দস্তগীর গাজীর নির্বাচনি এলাকা নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে জমি দখল, চাঁদাবাজি, মাদক ব্যবসা সব কিছুতে তাঁর হাত আছে। ক্ষমতার অপব্যবহার করে এলাকায় চিহ্নিত সন্ত্রাসী ও চাঁদাবাজদের আশ্রয়প্রশ্রয় দেওয়ার অভিযোগ তাঁর বিরুদ্ধে। এপিএস এমদাদ মন্ত্রীর চেয়েও ক্ষমতাধর। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদের এপিএস ম. মামুন। জুনাইদ আহমেদ পলকের এপিএস ছিলেন মাওলানা রুহুল আমিন। মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী সিমিন হোসেন রিমির এপিএস ছিলেন সেলিম হোসেন। গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী রুমানা আলীর এপিএস ছিলেন জিকু।