ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী, ছাত্রদল নেতা শাহরিয়ার আলম সাম্য হত্যার বিচার দাবিতে ফের শাহবাগ অবরোধ করেছে ছাত্রদল। গতকাল বিকাল ৩টা নাগাদ ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা শাহবাগ মোড়ে এসে অবরোধ করেন। এতে বন্ধ হয়ে যায় দুই পাশের রাস্তার যান চলাচল। প্রায় দুই ঘণ্টা অবরোধ কর্মসূচি পালন করে বিকাল ৫টার দিকে তারা শাহবাগ ত্যাগ করেন।
কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব ও সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছিরের নেতৃত্বে বিভিন্ন শাখা ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা বৃষ্টি উপেক্ষা করে এতে অংশ নেন। এ সময় তারা ‘আমার ভাই কবরে, খুনি কেন বাহিরে’, ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’, ‘বিচার চাই বিচার চাই, সাম্য হত্যার বিচার চাই’, ‘আমার ভাইয়ের রক্ত, বৃথা যেতে দেবো না’, ‘অবরোধ-অবরোধ, শাহবাগ অবরোধ’সহ নানা স্লোগান দিতে থাকেন।
এর আগেও সাম্য হত্যার বিচার দাবিতে গত রবিবার দুই ঘণ্টা শাহবাগ অবরোধ করে দলটি। সাম্য হত্যার বিচার নিশ্চিত না হলে যমুনার দিকে পদযাত্রার হুঁশিয়ারিও দেন দলটির কেন্দ্রীয় সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব। পূর্বঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে সাম্য হত্যা মামলার তদন্তে গাফিলতির প্রতিবাদে এবং হত্যাকাণ্ডে জড়িত মূল ঘাতকসহ সব আসামিকে গ্রেপ্তার, সুষ্ঠু বিচারে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা এবং নিরাপদ ক্যাম্পাসের দাবিতে মঙ্গলবার এ অবস্থান কর্মসূচি পালন করে ছাত্রদল।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অভিমুখে লংমার্চের হুঁশিয়ারি : আগামী বৃহস্পতিবারের (২২ মে) মধ্যে সাম্য হত্যার বিচারের তদন্ত কার্যক্রমের অগ্রগতি দেখতে না পেলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অভিমুখে লংমার্চের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন সাম্যর সহপাঠীরা। মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সামনে ইনস্টিটিউটের শিক্ষক শিক্ষার্থীদের আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এমন হুঁশিয়ারি দেন তারা। লংমার্চের হুঁশিয়ারি দিয়ে সাম্যর সহপাঠী সোহেল রানা সাব্বির বলেন, ‘আমরা আগামী বৃহস্পতিবার (২২ মে) বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার সামনে অবস্থান নেব। এর মধ্যে যদি তদন্ত কার্যক্রমের অগ্রগতি না দেখতে পাই, তাহলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অভিমুখে লংমার্চ কর্মসূচি পালন করা হবে।’
রাজনৈতিক দলাদলির ঊর্ধ্বে গিয়ে সাম্যর হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবিতে এক থাকার আহ্বান জানিয়ে সাম্যর বন্ধু এস এম নাহিয়ান ইসলাম বলেন, ‘আমরা দুঃখজনকভাবে দেখতে পাচ্ছি সাম্যর হত্যাকান্ডের পর তাকে নিয়ে রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠনগুলো বিভাজন ও নোংরা রাজনীতি করছে। সংবাদ সম্মেলনে ৮ দফা দাবি উত্থাপন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষে শিক্ষার্থী মশিউর আলম শুভ। তিনি বলেন, শাহরিয়ার আলম সাম্যর হত্যাকারী সবাইকে দ্রুত শনাক্ত ও গ্রেপ্তার করে জনসম্মুখে প্রকাশ; হত্যার আশপাশের এলাকার সব সিসিটিভি ফুটেজ মিডিয়ায় প্রকাশ করতে হবে। এ ছাড়াও ঘটনার সময় হত্যার সহযোগীদের জনতা আটকিয়ে পুলিশে সোপর্দ করে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়। কিন্তু কোনো এক অজানা কারণে পুলিশ তাদের ছেড়ে দেয়। যেসব পুলিশ এই কাজের সঙ্গে যুক্ত তাদের দ্রুত জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে। তিনি আরও বলেন, শাহবাগ থানার পাশেই অস্ত্র ও মাদক সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে। এর সঙ্গে সম্পৃক্ত সবাইকে জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে। সংবাদ সম্মেলনে ইনস্টিটিউটের শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগ ও অনুষদের শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।
সাম্য হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবিতে শিক্ষার্থীদের যে কর্মসূচি তার ওপর শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সংহতি রয়েছে জানিয়ে শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ বলেন, ‘আমাদের ছাত্ররা সাম্য হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবিতে যে কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে আসছে, আমরা সবাই তা সমর্থন করছি। একই সঙ্গে যে দাবি জানানো হয়েছে সবগুলোই আমাদের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের দাবি। আমরা চাই, এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত বাকি আসামিদের খুঁজে বের করে যেন অবিলম্বে বিচার নিশ্চিত করা হয়।’