রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) নির্বাচন ঘিরে ক্যাম্পাসে ভোটের আমেজ তৈরি হয়েছে। ভোটারদের দোরগোড়ায় এসে ভোট চেয়ে প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন প্রার্থীরা। এতে কৌশলী প্রচার চালাচ্ছে ছাত্রশিবির। মাঠে ব্যস্ত ছাত্রদল, সমন্বয়কসহ বাম প্রগতিশীল প্যানেলের প্রার্থীরাও।
ক্যাম্পাসের নিরাপত্তাব্যবস্থা দেখতে গতকাল বিশ্ববিদ্যালয় পরিদর্শন করেছেন রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার আবু সুফিয়ান। এ সময় তিনি বলেন, ২৫ সেপ্টেম্বর নির্বাচনে ক্যাম্পাস ও সংলগ্ন এলাকার সার্বিক নিরাপত্তায় ২ হাজার পুলিশ মোতায়েন থাকবে। গোয়েন্দা তথ্য ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নির্দেশে পুলিশ কাজ করবে।
জানা গেছে, নির্বাচন সামনে রেখে বছর ধরেই প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে শিবির। হলগুলোতে ইফতার মাহফিল, বিভিন্ন খেলাধুলার আয়োজনের পাশাপাশি বিশুদ্ধ পানির ট্যাঙ্ক স্থাপন এবং ডাইনিং-ক্যান্টিনে জগ ও প্লেট প্রদান করে সম্ভাব্য প্রার্থীদের পরিচিতি বাড়িয়েছেন তারা। সব শিক্ষার্থীর কাছে নির্বাচনি ইশতেহার পৌঁছাতে কাজ করেছেন। একটি অংশ ক্যাম্পাসে, অন্যরা মেস ও আবাসিক এলাকায় প্রচারণা করছেন। শাখা শিবিরের সভাপতি ও ভিপি প্রার্থী মোস্তাকুর রহমান বলেন, নির্বাচনে শিবির-সমর্থিত ‘সম্মিলিত শিক্ষার্থী জোট’ একটি ইনক্লুসিভ প্যানেল। এটা বিভিন্ন ধর্মাবলম্বী, সমন্বয়ক ও জুলাই আহতসহ সবার সমন্বিত কণ্ঠস্বর। নির্বাচনে বিজয়ী হলে সবার সমঅধিকার নিশ্চিত করার পাশাপাশি ধর্ম-বর্ণনির্বিশেষে সবার মুখপাত্র হিসেবে এ প্যানেল কাজ করবে। নির্বাচনি ইশতেহার ও পরিচিতি পোস্টার নিয়ে ক্যাম্পাস ও হলগুলোতে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন ছাত্রদল ও সমন্বয়কসহ বাম, প্রগতিশীল পদপ্রার্থীরা। প্যানেলের পক্ষে ভোট সংগ্রহে হল ও ক্যাম্পাসে নিয়মিত আড্ডাও দিচ্ছেন তারা। তবে প্রচারণা শুরু দিনই ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেলের জিএস প্রার্থী নাফিউল জীবনের বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে ওঠে। ক্লাস চলাকালে শ্রেণিকক্ষে গিয়ে ভোট চাওয়ায় বিতর্ক শুরু হয়। তবে তিনি জানান, বাইরে বৃষ্টি থাকায় শিক্ষার্থীদের অনুমতি নিয়েই সেখানে প্রচারণা চালান তিনি।
শিক্ষার্থীদের মতামত নিয়েই গণ-ইশতেহার তৈরির লক্ষ্যে প্রচার চালিয়ে যাচ্ছে বামজোট সমর্থিত গণতান্ত্রিক শিক্ষার্থী পর্ষদ ও ছাত্র অধিকার পরিষদ এবং ছাত্র ফেডারেশন সমর্থিত ‘রাকসু ফর র?্যাডিক্যাল চেইঞ্জ প্যানেলের প্রার্থীরা।
গণতান্ত্রিক শিক্ষার্থী পর্ষদ প্যানেলের ভিপি প্রার্থী ফুয়াদ রাতুল বলেন, রাকসু শিক্ষার্থীদের। আমরা তাদের কণ্ঠস্বর হতে চাই। তাই তাদের মতামতের ভিত্তিতে ইশতেহার দেবো এবং নির্বাচিত হলেই তাদের মুখপাত্র হয়ে সেগুলো বাস্তবায়ন করব। হলগুলোতে শিবিরের বিভিন্ন কাজের সমালোচনা করে তিনি বলেন, শিবিরের প্রার্থীরা হলে হলে পানির ট্যাঙ্ক, জগ দিচ্ছে। এদের টাকার উৎস কী? এগুলো তারা দেবে কেন? এগুলো তো প্রশাসনের কাজ। ছাত্র প্রতিনিধিদের দায়িত্ব সেটা আদায় করা। এরা অধিকার আদায় না করে শিক্ষার্থীদের পরনির্ভরশীল করে তুলছে।
নির্বাচনের দিনে সার্বক্ষণিক তথ্য প্রচারে কাজী নজরুল ইসলাম মিলনায়তনের সামনে একটি মিডিয়া কর্নারের উদ্বোধন করেন উপাচার্য সালেহ হাসান নকীব। তিনি বলেন, এ নির্বাচন নিয়ে দেশবাসীর কৌতূহল আছে। ফলে নির্বাচনের স্বচ্ছতা ও নির্বাচন নিয়ে বস্তুনিষ্ঠ প্রতিবেদন সহায়তায় এ কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে।
কমিশনের তথ্যমতে, নির্বাচনে কেন্দ্রীয় সংসদ, হল সংসদ ও সিনেট প্রতিনিধি পদে ৯০৩ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এর মধ্যে কেন্দ্রীয় সংসদে ২৪৮ জন, সিনেট ছাত্র প্রতিনিধি পদে ৫৮ জন ও ১৭টি হল সংসদে ৫৯৭ জন। ২৩ সেপ্টেম্বর রাত ১০টা পর্যন্ত এ প্রচারণা চলবে। ২৫ সেপ্টেম্বর ভোট গ্রহণ ও ফলাফল প্রকাশ করা হবে।