কাশ্মীরের পেহেলগাম হামলাকে কেন্দ্র করে ভারত এবং পাকিস্তান একে অপরের বিরুদ্ধে বেসামরিক নানা বিধিনিষেধ ঘোষণার পরও কাশ্মীরের মানুষ কিছুটা স্বস্তি পেয়েছিলেন। তারা ভেবেছিলেন, পরিস্থিতি হয়তো এর চেয়ে খারাপ হবে না। কিন্তু গত সপ্তাহে নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর গুলিবিনিময়ের কারণে বিনিদ্র রাত কাটিয়েছেন কাছাকাছি বসবাসকারী মানুষেরা। ভারত শাসিত কাশ্মীরের উরি সেক্টরের তুতমার গলি পোস্ট এবং পাকিস্তান শাসিত লিপা সেক্টরের নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর সম্প্রতি গুলিবিনিময়ের ঘটনা ঘটে। তবে এখন পর্যন্ত ওই ঘটনায় কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।
আতঙ্কে সাধারণ মানুষ : কুপওয়ারায় এখন পর্যন্ত সীমান্তে গুলিবিনিময়ের কোনো ঘটনা ঘটেনি। তবে নিয়ন্ত্রণ রেখার খুব কাছাকাছি যারা বাস করেন, তাদের মধ্যে একটা আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। কুপওয়ারার কারনাহ সেক্টরের বাসিন্দারা ব্যক্তিগত ব্যয়ে ভূগর্ভস্থ বাঙ্কার তৈরির কাজ শুরু করেছেন বা সেগুলো পুনর্র্নির্মাণ করছেন। পেহেলগামের ঘটনার পর ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সামরিক উত্তেজনা সৃষ্টির সঙ্গে সঙ্গেই বাড়ির নিচে বাঙ্কার তৈরির কাজ যারা শুরু করেছেন, তাদেরই একজন পীরজাদা সৈয়দ। তিনি বলেন, ‘সীমান্তে গোলাগুলির পরিণতি আমরা এরই মধ্যে দেখেছি। জীবনহানি হয়েছে, অতীতে কৃষিকাজের অভাবের কারণে মানুষও অনাহারে মারা গেছেন। আল্লাহ না করুন যেন কিছু না হয়, কিন্তু দেখে মনে হচ্ছে যে কোনো সময় কিছু একটা ঘটে যেতে পারে। সে কারণেই আমরা ভূগর্ভস্থ বাঙ্কার বানাচ্ছি, যাতে কিছু হলে আমরা সেখানে আশ্রয় নিতে পারি।’ কুপওয়ারার একাধিক বাসিন্দা জানিয়েছেন, অতিরিক্ত সামরিক তৎপরতা এবং রাতের আকাশে জেট বোমারু বিমানের আওয়াজ তাদের মধ্যে আতঙ্কের সৃষ্টি করেছে।
‘বাঙ্কারগুলো অবস্থান করার মতো যোগ্য নয়’ : উরি সেক্টরেও নিরাপত্তা নিয়ে আশঙ্কায় ভুগছেন মানুষ। ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে এ সেক্টরের ভাটগ্রান ও চরন্দা এলাকায় ১৬টি বাঙ্কার নির্মাণ করা হলেও স্থানীয়দের অভিযোগ, সেখানে বিদ্যুৎসংযোগ ও পানির ব্যবস্থা নেই। ভাটগ্রানের বাসিন্দা মোহাম্মদ কুদ্দুস বলেন, কেউ কেউ নিজের খরচে বাঙ্কার তৈরি করেছেন, কিন্তু দরিদ্ররা যাবেন কোথায়। এখন আমরা এই একই বাঙ্কারগুলোই পরিষ্কার করব। ‘আল্লাহ দয়া করুন, যাতে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সব কিছু ঠিক থাকে আর গুলিবিনিময় বন্ধ হওয়ার পর জীবনযাত্রা আবার স্বাভাবিক হয়ে যায়’, বলেন কুদ্দুস।
এদিকে শরীরে আত্মঘাতী বোমা বেঁধে পাকিস্তানে যাওয়ার হুমকি দিয়েছেন ভারতের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্য কর্ণাটকের একজন মন্ত্রী। রাজ্যের আবাসন, ওয়াকফ ও সংখ্যালঘু কল্যাণবিষয়ক মন্ত্রী বিজেড জামির খান শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে এ হুমকি দিয়েছেন।
মন্ত্রী জামির খান বলেছেন, তিনি আত্মঘাতী বোমা শরীরে বেঁধে পাকিস্তানে যেতে ইচ্ছুক। গত সপ্তাহে জম্মু-কাশ্মীরের পেহেলগামে ভয়াবহ বন্দুক হামলার পর ইসলামাবাদ-নয়াদিল্লির তীব্র উত্তেজনার মাঝে এমন হুমকি দিয়েছেন ভারতীয় ওই মন্ত্রী। -বিবিসি