দেশে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই নারী ও মেয়ে শিশুরা ধর্ষণের শিকার হচ্ছে পরিচিতজন, নিকটাত্মীয় ও প্রতিবেশীর দ্বারা। সবচেয়ে বেশি ধর্ষণের শিকার হচ্ছে স্কুলপড়ুয়া মেয়েরা। নির্যাতনের শিকার অধিকাংশ নারী ও মেয়ে শিশু উপজেলা ও গ্রামে বাস করে। কিশোরীদের উল্লেখযোগ্য সংখ্যকই প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে ধর্ষণের শিকার হচ্ছে। আর ধর্ষণের মতো নির্যাতনে তরুণ সমাজের সম্পৃক্ততাই বেশি। বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সম্প্রতি প্রকাশিত এক সমীক্ষা প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। ‘বাংলাদেশের নারী ও কন্যা নির্যাতন চিত্র : ২০১৯; ধর্ষণ, গণধর্ষণ ও ধর্ষণের চেষ্টা’ শীর্ষক প্রতিবেদনে জানানো হয় যে, দেশে নারীদের তুলনায় মেয়ে শিশুরা বেশি ধর্ষণের শিকার হচ্ছে। এই শিশুদের বড় অংশেরই বয়স ১০ বছরের মধ্যে। ধর্ষণ ও ধর্ষণের চেষ্টায় উভয় ক্ষেত্রে ৬-৯ বছর বয়সী মেয়ে শিশুরা নির্যাতনের শিকার হচ্ছে বেশি। এটি যথাক্রমে ১৮ ও ১১ শতাংশ। আর গণধর্ষণের ক্ষেত্রে ১৪ থেকে ১৮ বছর বয়সের মেয়ে শিশুদের নির্যাতনের হার ২৫ শতাংশ। দেখা যায় যে, ২ থেকে ৫ বছরের শিশুও এই নির্যাতনের হাত থেকে রেহাই পায়নি। অপরদিকে ১৮ থেকে ৩০ বছর বয়সের নারীরাও উল্লেখযোগ্য সংখ্যায় ধর্ষণ, গণধর্ষণসহ যৌন নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। প্রতিবেদন অনুযায়ী স্কুল পর্যায়ের মেয়েরা সবচেয়ে বেশি ধর্ষণের শিকার হচ্ছে। বিশেষত ৬ষ্ঠ থেকে ১০ম শ্রেণিতে পড়ুয়া মেয়েদের সংখ্যাই বেশি। ধর্ষণের ক্ষেত্রে ১ম থেকে ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত ১৫ শতাংশ এবং ৬ষ্ঠ থেকে ১০ম শ্রেনি পর্যন্ত ২০ শতাংশ মেয়ে শিক্ষার্থী নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। এ ছাড়া ধর্ষণ চেষ্টার ক্ষেত্রে ভুক্তভোগী ১ম থেকে ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত ১৫ শতাংশ শিক্ষার্থী এবং ৬ষ্ঠ থেকে ১০ম শ্রেনি পর্যন্ত ১৮ শতাংশ মেয়ে শিক্ষার্থী। আর গণধর্ষণের ক্ষেত্রে ৬ষ্ঠ থেকে ১০ম শ্রেণি পর্যন্ত স্কুলপড়ুয়া মেয়েদের সংখ্যা বেশি। ২ থেকে ১৩ বয়সী মেয়েরা সবচেয়ে বেশি ধর্ষণের শিকার আর এর বড় অংশই ১০ থেকে ১৩ বছর বয়সে নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। ১ম থেকে ১০ম শ্রেণি পর্যন্ত মেয়েরা ধর্ষণের শিকার হলেও ৬ষ্ঠ থেকে ১০ম শ্রেণি পড়ুয়া মেয়েদের সংখ্যা বেশি। অর্থাৎ ধর্ষণের শিকার উল্লেখযোগ্যসংখ্যকই ছাত্রী। তবে গার্মেন্টকর্মী, বিভিন্ন কারখানা শ্রমিক ও গৃহপরিচারিকারাও এই নির্যাতনের ঝুঁকিতে আছে। আবার ধর্ষণ, গণধর্ষণ ও ধর্ষণের চেষ্টা সব ক্ষেত্রে গৃহিণীরাও উল্লেখজনকহারে নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। সমীক্ষায় প্রাপ্ত তথ্যে, নির্যাতনের শিকার অধিকাংশ নারী ও মেয়ে শিশু উপজেলা ও গ্রামে বাস করে। ধর্ষণের ক্ষেত্রে অধিকাংশই সংঘটিত হয়েছে উপজেলা পর্যায়ে (৫০ শতাংশ) এবং গ্রাম এলাকায় (২৬ শতাংশ)। গণধর্ষণের ক্ষেত্রে উপজেলা পর্যায়ে ৪৬ শতাংশ এবং গ্রাম পর্যায়ে ২২ শতাংশ এবং ধর্ষণের চেষ্টা উপজেলায় ৪৪ শতাংশ ও গ্রাম এলাকায় ২৯ শতাংশ। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে নারী ও মেয়েরা ধর্ষণের শিকার হয় পরিচিতজন, নিকটাত্মীয় ও প্রতিবেশীর দ্বারা। প্রতিবেশীর মাধ্যমে একটি বড় অংশ কন্যা শিশু ধর্ষণের শিকার হচ্ছে। এ হার ধর্ষণের ক্ষেত্রে ৪৫ শতাংশ আর গণধর্ষণের ক্ষেত্রে ১৮ শতাংশ। পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, দুই বছরের কম বয়সী শিশুও প্রতিবেশীর দ্বারা ধর্ষণের শিকার হচ্ছে। আবার কিশোরীদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যকই প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে ধর্ষণের শিকার হচ্ছে। তারা স্মার্টফোন, সহজলভ্য ইন্টারনেটের কারণে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ছে। পরে বিয়ের প্রলোভনে পড়ে ধর্ষণের শিকার হয়। এ ছাড়া প্রেমের প্রস্তাব ও বিয়েতে সাড়া না দিলে এলাকার বখাটে, স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তি দ্বারা জোরপূর্বক ধর্ষণের শিকার হচ্ছে কিশোরীরা। গণধর্ষণের ক্ষেত্রে দেখা যায় বেশির ভাগ ঘটনায় ২৭ শতাংশ অভিযুক্ত হচ্ছে এলাকার বখাটে ও সন্ত্রাসী। দুঃখজনক হলেও ধর্ষণের মতো নির্যাতনে তরুণ সমাজের সম্পৃক্ততা বেশি। ৩২ শতাংশ অভিযুক্তের বয়স ১১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে। বিশেষ করে ২১ থেকে ২৫ বছর বয়সীদের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। গণধর্ষণকারীর প্রায় অর্ধেকের বেশির বয়স ১৬ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে। যা মোট অভিযুক্তের ৪৮ শতাংশ। অভিযুক্তের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি চালক ৭ শতাংশ, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী (মুদি দোকানদার, স্টেশনারি বিক্রেতা) ৬ শতাংশ, শিক্ষক ৪ শতাংশ ও এলাকার বখাটে ৫ শতাংশ। বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ ২০১৯ সালের ধর্ষণের ঘটনাগুলো বিশ্লেষণ করে দেখে যে ৪৬ শতাংশ ঘটনায় ধর্ষণের মামলা হয়েছে। ৯ শতাংশ ক্ষেত্রে মামলা হয়নি। ২ শতাংশ ক্ষেত্রে হুমকির কারণে মামলা হয়নি। আর যেখানে ৫ শতাংশ ঘটনায় মামলা হয়েছে। ধর্ষণের মামলায় ২১ শতাংশ অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হয়। ধর্ষণের শিকার নারীদের ক্ষেত্রে শারীরিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় ১২ শতাংশ, হত্যা করা হয় ১ শতাংশকে, আত্মহত্যা করে ১ শতাংশ, মানসিক অসুস্থ হয়ে পড়ে ১২ শতাংশ, কলেজ যাওয়া বন্ধ করে দেয় ৭ শতাংশ এবং হাসপাতালে ভর্তি ৬ শতাংশ। গণধর্ষণের পর হত্যার ক্ষেত্রে প্রাপ্তবয়স্ক নারীর তুলনায় শিশুর হার বেশি।
শিরোনাম
- আমার ছেলের খুনীর ফাঁসি যেন দেখে যেতে পারি: আবু সাঈদের বাবা
- দিল্লি বিস্ফোরণে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১৫, গ্রেফতার আরও এক কাশ্মীরি
- মালয়েশিয়ায় শর্টপিচ ক্রিকেট টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন সাইবারজায়া ইউনিভার্সিটি
- আফ্রিকার ছয় দেশে আছে রুশ সেনার উপস্থিতি: রাষ্ট্রীয় টিভি
- ‘খালেদা জিয়াকে দেশের সেরা জয় উপহার দিতে চাই’
- উইঘুর যোদ্ধাদের চীনের কাছে হস্তান্তর করবে সিরিয়া
- ‘একটি দল ক্ষমতায় যেতে প্রলাপ বকছে’
- সিরিয়ায় শান্তি প্রতিষ্ঠায় পাশে থাকবে চীন
- বগুড়ায় কোলগ্রাম উচ্চ বিদ্যালয়ে জরাজীর্ণ ভবনে চলছে পাঠদান
- শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ডের রায় নিয়ে যা বলল ভারত
- মোংলায় জলবায়ু পরিবর্তন ও দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাসকরণ বিষয়ক সমন্বয় সভা
- আকাশ প্রতিরক্ষা ও যুদ্ধবিমান চুক্তি চূড়ান্ত করতে ফ্রান্সে জেলেনস্কি
- অস্ট্রেলিয়ায় বিএনপির জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উদযাপন
- ভারতের চা, মশলা, আমসহ কয়েকটি পণ্যে শুল্ক প্রত্যাহার করলেন ট্রাম্প
- নওগাঁর মান্দায় ধানের শীষে ডা. টিপুর নির্বাচনী পথসভা
- পাঙ্গাস পোনা শিকারের দায়ে জেলের কারাদণ্ড
- পুলিশের সাবেক অতিরিক্ত ডিআইজি মিলন কারাগারে
- রাতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠক
- নির্বাচনের আগেই হাসিনাকে দেশে এনে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের দাবি সারজিসের
- কলাপাড়ায় অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে পড়ে ৫ জন হাসপাতালে