বাংলাদেশি অধ্যুষিত মার্কেট স্ট্রিট এবং চেসনাট স্ট্রিটসহ ফিলাডেলফিয়া সিটির বাণিজ্যিক কেন্দ্রগুলোতে পুনরায় হামলা, ভাঙচুর এবং ব্যাপক লুটতরাজের ঘটনা ঘটেছে। পুলিশের গুলিতে ২৭ বছর বয়সী কৃষ্ণাঙ্গ যুবক নিহত হওয়ার প্রতিবাদ জানাতে ২৬ এবং ২৭ অক্টোবর সন্ধ্যায় সংঘবদ্ধ লোকজন এই লুটতরাজে লিপ্ত হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করেও কোনো লাভ হয়নি বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা গণমাধ্যমকে জানান। ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েন করা হয় মঙ্গলবার বিকালে। তবুও বিক্ষোভ কমেনি। আর এই বিক্ষোভের আড়ালেই লুটতরাজ চালানো হয়। ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, শত শত মানুষ স্লোগান দিয়ে পুলিশি বর্বরতার নিন্দা জানাচ্ছেন এবং পাশাপাশি আরেকদল লোক আশপাশের মূল্যবান সামগ্রির স্টোরে হামলা চালিয়ে মালামাল লুট করছে। ইলেক্ট্রনিক এবং জুয়েলারি স্টোরগুলো ছিল তাদের টার্গেট। লুটের মালামাল বহনের জন্য নির্দিষ্ট স্থানে ট্রাক এবং ভ্যান দাঁড়িয়ে থাকতেও দেখা গেছে। অর্থাৎ লুটের উদ্দেশ্যে বিক্ষোভের আয়োজন করা হয়েছিল বলেই অনেকে মনে করছেন।
পেনসিলভেনিয়া স্টেটের ফিলাডেলফিয়া সিটির ওপর হেলিকপ্টারে ছিল ফক্স টিভির ক্যামেরা। সেখান থেকেই লুটতরাজের দৃশ্য সরাসরি সম্প্রচার করা হয় টিভিতে। এই সিটির উত্তরের পোর্ট রিচমন্ডেও হাজার খানেক মানুষ বিভিন্ন স্টোরে হামলা চালিয়ে লুটতরাজে লিপ্ত হয়। পুলিশ অফিসারেরা দাঙ্গাবাজ এবং লুটতরাজ ঠেকানোর চেষ্টা করেননি বলে অভিযোগ উঠেছে। অনেকের ধারণা, লুটতরাজে বাধা দেওয়ার সময় কেউ যদি নিহত অথবা আহত হয় তাহলে নতুন করে হট্টগোল শুরুর আশঙ্কা ছিল। তবে পুলিশের পক্ষ থেকে এলাকার বাসিন্দাদের ঘরে থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। দোকানে তালা ঝোলানোর পাশাপাশি শক্ত কিছু দিয়ে ভিতর থেকে প্রতিরোধ রচনার পরামর্শও দেওয়া হয়েছে ভাঙচুর ঠেকাতে। মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৯টায় ফিলাডেলফিয়া সিটির ইমার্জেন্সি ম্যানেজমেন্ট অফিসের টুইটে ১২, ১৬, ১৮, ১৯, ২৪, ২৫ এবং ২৬তম ডিস্ট্রিক্টের বাসিন্দাদের ঘরের বাইরে বের না হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কারণ এসব এলাকায় দুর্বৃত্তরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে এবং তারা সুযোগ পেলেই দোকান-পাট এবং বাড়ি-ঘরে হামলা ও লুটতরাজ চালাচ্ছে। এদিকে পুলিশের পক্ষ থেকে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যাওয়া ওয়াল্টার ওয়ালেস জুনিয়র প্রসঙ্গে বলা হয়েছে যে, হাতে একটি ধারালো ছুরি নিয়ে সে আক্রমণের চেষ্টায় ছিল। টহল পুলিশ তাকে বারবার অনুরোধ করা সত্ত্বেও সে ছুরি মাটিতে ফেলে দেয়নি। এ অবস্থায় আত্মরক্ষার্থে পুলিশ তাকে গুলি করতে বাধ্য হয়। নিহত যুবকের স্বজনরা জানিয়েছেন যে, সে মানসিক রোগী ছিল। চিকিৎসাও চলছিল। তবে সে দুর্র্বৃত্ত ছিল না। নিহত ওয়াল্টারের বাবা ফিলাডেলফিয়া ইনক্যুয়ারারকে বলেছেন যে, তার ছেলেকে পরপর ১০ বার গুলি করা হয়েছে হত্যার উদ্দেশ্যে। এই গুলিবর্ষণের দৃশ্য একজন পথচারী ধারণ করে তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার পরই প্রতিবাদ শুরু হয়েছে ফিলাডেলফিয়া সিটিসহ আশপাশে। ওয়ালেস সিনিয়র বিক্ষোভকারীদের অনুরোধ জানিয়েছেন, প্রতিবাদের নামে ভাঙচুর ও লুটতরাজে লিপ্ত না হতে। কোনো ধরনের দাঙ্গা-হাঙ্গামায় তার পুত্রের আত্মা শান্তি পাবে না বলেও উল্লেখ করেছেন ওয়ালেস সিনিয়র। এ ধরনের লুটতরাজ ও ভাঙচুরের মাধ্যমে প্রকৃত অর্থে ওই হত্যার সঙ্গে জড়িত অফিসারকে বাঁচানোর সুযোগ তৈরি করা হচ্ছে বলেও উল্লেখ করেছেন ওয়ালেস সিনিয়র। এ ছাড়া সোম ও মঙ্গলবারের ভাঙচুর ও লুটতরাজের সঙ্গে জড়িত সন্দেহে মঙ্গলবার রাত ১১টা পর্যন্ত ৯০ জনকে গ্রেফতারের তথ্য জানিয়েছে ফিলাডেলফিয়া পুলিশ। পুলিশ কমিশনার ডেনিয়েল আউটলো বলেন, হত্যার জন্য দায়ী ব্যক্তি অবশ্যই শাস্তি পাবেন। তাই বলে ওই হত্যার প্রতিবাদ জানাতে ভাঙচুর ও লুটতরাজ চালাতে হবে কেন? ফিলাডেলফিয়া ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি ল্যারি ক্র্যাসনার বলেছেন, গুলিবর্ষণের ঘটনাটির তদন্ত চলছে। অবশ্যই দায়ীরা চিহ্নিত এবং আইন অনুযায়ী শাস্তির সম্মুখীন হবেন। কাউকে বাঁচানোর চেষ্টা কেউই করছি না। তাই বিক্ষোভের কোনো প্রয়োজন নেই। লুটতরাজের মতো জঘন্য কাজে লিপ্তরাও শাস্তি পাবেই। ফিলাডেলফিয়া কমিউনিটির লিডার মফিজুল হক মঙ্গলবার রাতে জানান, জর্জ ফ্লয়েড হত্যার প্রতিবাদের সময় এই সিটির অনেক প্রবাসীর ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে লুটতরাজ হয়েছে। গত দুই দিনেও আক্রান্ত হয়েছে বেশ কটি স্টোর। ফলে প্রবাসীরাও উদ্বিগ্ন এবং ভীতিকর পরিস্থিতির মধ্যে দিনাতিপাত করতে বাধ্য হচ্ছেন।
