আগস্ট মাসের মাঝামাঝিতে পূর্বাঞ্চলের বন্যায় ১১ জেলায় ১৪ হাজার ৪২১ কোটি ৪৬ লাখ টাকা বা প্রায় ১ দশমিক ২০ বিলিয়ন ডলার ক্ষতি হয়েছে। সবচেয়ে বেশি আর্থিক ক্ষতি হয়েছে নোয়াখালী জেলায়। আর সরকারি খাতের চেয়ে বেশি আর্থিক ক্ষতি হয়েছে বেসরকারি খাতে। গতকাল রাজধানীর ধানমন্ডিতে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) কার্যালয়ে ‘পূর্বাঞ্চলে সাম্প্রতিক বন্যায় ক্ষয়ক্ষতি ও পুনর্বাসন প্রক্রিয়া : সিপিডির বিশ্লেষণ’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিডির গবেষণা ফেলো মুনতাসির কামাল।
ক্রমাগত ভারী বৃষ্টি ও উজান থেকে আসা পানির প্রবাহে গত ১৯ আগস্ট শুরু হওয়া এ বন্যায় দেশের পূর্বাঞ্চলের ১১ জেলা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সিলেট, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, ফেনী, খাগড়াছড়ি, কক্সবাজার, কুমিল্লা, নোয়াখালী, চট্টগ্রাম, লক্ষ্মীপুর ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করে সিপিডি এসব তথ্য জানিয়েছে।
সিপিডির প্রতিবেদন বলছে, সবচেয়ে বেশি আর্থিক ক্ষতি হয়েছে নোয়াখালীতে ২৯ দশমিক শূন্য সাত শতাংশ, কুমিল্লায় ২৩ দশমিক ৫১ শতাংশ, ফেনীতে ১৮ দশমিক ৬১ শতাংশ ও চট্টগ্রামে ১১ দশমিক ৬৩ শতাংশ। সিপিডি আরও বলছে, নোয়াখালী, কুমিল্লা ও ফেনীতে অসামঞ্জস্যপূর্ণ ক্ষতি হয়েছে।
গবেষণায় দেখা গেছে, পূর্বাঞ্চলের ওই বন্যায় সামগ্রিকভাবে মোট ক্ষয়ক্ষতি ৫৩ শতাংশ হয়েছে বেসরকারি খাতে। আর ৪৭ শতাংশ হয়েছে সরকারি খাতে। এ ক্ষতির পরিমাণ ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটের ১ দশমিক ৮১ শতাংশ। জিডিপির নিরিখে, এটি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের খসড়া জিডিপির শূন্য দশমিক ২৯ শতাংশ ও ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য অনুমিত জিডিপির শূন্য দশমিক ২৬ শতাংশ। এ বন্যায় কৃষি ও বন সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ দুই খাতে ক্ষতির পরিমাণ ৫ হাজার ১৬৯ কোটি ৭১ লাখ টাকা। এটি মোট ক্ষতির ৩৫ দশমিক ৮৫ শতাংশ।
সিপিডির গবেষণায় আরও দেখা গেছে, অবকাঠামো খাতে ক্ষতি হয়েছে ৪ হাজার ৬৫৩ কোটি ৯২ লাখ টাকা বা ৩২ দশমিক ২৭ শতাংশ ও আবাসন খাতে ক্ষতি হয়েছে ২ হাজার ৪০৭ কোটি ৩১ লাখ টাকা বা ১৬ দশমিক ৬৯ শতাংশ।
সিপিডির রিসার্চ ডিরেক্টর খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, এবারের বন্যা প্রকৃতিগতভাবে ভিন্ন ছিল। বন্যা থেমে গেলেও পানি নামছিল না। সচরাচর যেসব অঞ্চল প্লাবিত হয়, এবারের বন্যায় সেসবের বাইরের অঞ্চলও প্লাবিত হয়েছে। বাংলাদেশ ভবিষ্যতে এমন আরও প্রাকৃতিক দুর্যোগের মুখোমুখি হবে- তেমনটা ভেবেই আমাদের দুর্যোগ মোকাবিলা কার্যক্রম সাজাতে হবে।
সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলেন, বন্যাকবলিত এলাকায় ত্রাণ বিতরণে সমন্বয়হীনতার ঘাটতি ছিল। এ কার্যক্রমে জনপ্রতিনিধি থাকা দরকার ছিল কি না তা নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া রয়েছে। কোনো ব্যক্তি একাধিকবার ত্রাণ পেয়েছেন, আবার অনেকেই পাননি।